শাহজালাল বিমানবন্দর

কল সেন্টার-ওয়েব পোর্টালে মিলছে সব ধরনের তথ্যসেবা

মুসা আহমেদ
মুসা আহমেদ মুসা আহমেদ
প্রকাশিত: ০২:২৫ পিএম, ১২ আগস্ট ২০২৩

সৌদি প্রবাসী জামাল খন্দকার। চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণে তার গ্রামের বাড়ি। তিন বছর পর চার মাস আগে ছুটিতে দেশে আসেন। গত ৫ আগস্ট সৌদিয়া এয়ারলাইন্সে ছিল তার ফিরতি ফ্লাইট। এ টিকিট আগেই কেটে রেখেছিলেন তিনি। তবে ফ্লাইট শিডিউল ঠিক আছে কি না তা জানতে গত ৪ আগস্ট হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কল সেন্টারে যোগাযোগ করেন জামাল। কল সেন্টারের প্রতিনিধি তাকে জানান, নির্ধারিত সময়েই তার ফ্লাইট ঢাকা থেকে সৌদি আরবের জেদ্দায় যাবে। এজন্য ফ্লাইট ছাড়ার অন্তত তিন ঘণ্টা আগে যেন তিনি বিমানবন্দরে ঢোকেন।

ঢাকার মোহাম্মদপুরের ষাটোর্ধ্ব বয়সের নূর হোসেন। ৩ আগস্ট চিকিৎসার জন্য হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে একটি ফ্লাইটে তিনি ভারতে যান। তিনিও ফ্লাইটে ওঠার আগের দিন বিমানবন্দরের কল সেন্টারে যোগযোগ করেন। হুইল চেয়ার সেবা পেতে অনুরোধ করেন। তখন কল সেন্টার থেকে তাকে জানানো হয়, তিনি যে এয়ারলাইন্সে টিকিট কেটেছেন, সেই টিকিটেই হুইল চেয়ারের কথা উল্লেখ আছে। তিনি কোনো ফি ছাড়াই বিমানবন্দরে এ সেবা নিতে পারবেন।

একই দিন এমিরেটস এয়ারলাইন্সে ফ্রান্সের প্যারিস থেকে ঢাকা ফেরেন টাঙ্গাইলের ইফতেখার আলম। দুবাই বিমানবন্দরে তার চার ঘণ্টার ট্রানজিট ছিল। কিন্তু ঢাকা ফিরে দেখেন তার একটি লাগেজ আসেনি। করণীয় জানতে কল সেন্টারে কল দেন ইফতেখার। তখন কল সেন্টার থেকে তাকে বিমানবন্দরের লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড দপ্তরে একটি অভিযোগ দিতে বলা হয়। এর একদিন পর অন্য একটি ফ্লাইটে ওই লাগেজ ঢাকায় আসে। তখন ইফতেখারের গ্রামের ঠিকানায় তা পাঠিয়ে দেয় এমিরেটস কর্তৃপক্ষ।

আরও পড়ুন>> শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে কুতুবখালী এক্সপ্রেসওয়ে চালু ২০২৪ সালে

এভাবেই হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কল সেন্টার থেকে যাত্রীদের সেবা দেওয়া হচ্ছে। যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে ২৭ জুলাই কল সেন্টার উদ্বোধন করা হয়। এখন দেশের যে কেউ কল সেন্টারে (০৯৬১৪-০১৩৬০০) যোগাযোগ করে সেবা নিতে পারছেন। এছাড়া যাত্রীসেবা বাড়াতে একই দিন একটি ওয়েব পোর্টাল www.hsia.gov.bd ও কাস্টমার রিলেশনশিপ ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যারের (customer relation management) চালু করেছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।

এর মাধ্যমে বিমানবন্দর-সংক্রান্ত যে কোনো প্রশ্নের উত্তর, কাস্টমস ডিউটি অফিসারদের নামের তালিকা, ইমিগ্রেশন পুলিশের সেবা, নিরাপত্তা সেবা এবং প্রাথমিক চিকিৎসা সেবার তথ্য, হুইলচেয়ার সেবা, ব্যাংকিং ও মানি এক্সচেঞ্জ সেবা, জরুরি প্রয়োজনে বিমানবন্দরে কর্তব্যরত সব কর্মকর্তার ফোন নম্বর, লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড সেবা, কোন উড়োজাহাজ পরিবহন সংস্থার কোন উড়োজাহাজ কখন ছেড়ে যাবে, কখন এসে পৌঁছাবে তা ঘরে বসেই জানতে পারছেন যাত্রীরা।

তবে এখনো যাত্রীদের অনেকে এই সেবা সম্পর্কে জানেন না বলে জানিয়েছে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। তারা জানায়, গত ২৮ জুলাই থেকে গমঙ্গলবার (৮ আগস্ট) পর্যন্ত বিমানবন্দরের কল সেন্টারে ১২৫ জন যাত্রী কল দিয়েছেন। এর মধ্যে কল সেন্টার থেকে ১২১ জনকে তথ্যসেবা বা সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। বাকি চারটি অভিযোগ পাঠানো হয়েছে সিআরএম শাখায়। এর মধ্যে দুটি অভিযোগ শতভাগ সমাধান করা হয়েছে। বাকি দুটি অভিযোগের সমাধান প্রক্রিয়াধীন।

আরও পড়ুন>> শাহজালাল বিমানবন্দর তৃতীয় টার্মিনাল/অক্টোবরে একাংশ উদ্বোধন, বছরে সেবা পাবেন ১ কোটি যাত্রী

গত ৮ আগস্ট ইউএস-বাংলার একটি ফ্লাইটে সিঙ্গাপুর যান যাত্রী সোহেল মাহবুব। বিমানবন্দরের দ্বিতীয় তলায় টার্মিনাল-১ এর তিন নম্বর ফটক দিয়ে তিনি ঢোকেন। এর আগে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে সোহেল বলেন, বিমানবন্দরে কল সেন্টার বা ওয়েব পোর্টালের তথ্য তার জানা নেই। যদি এমন সেবা কর্তৃপক্ষ দিয়ে থাকে, তাহলে যাত্রীদের খুবই উপকার হবে। এজন্য বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে আরও প্রচারের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।

জানতে চাইলে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, বিমানবন্দরে যাত্রীসেবার মান নিশ্চিত করাই আমাদের মূল লক্ষ্য। সে লক্ষ্যে কল সেন্টার, ওয়েব পোর্টাল এবং কাস্টমার রিলেশনশিপ ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার চালু করেছি। এখন প্রতিদিনই কল সেন্টারে কল দিচ্ছেন যাত্রীরা।

তিনি জানান, তাদের এ কল সেন্টার ২৪ ঘণ্টাই চালু থাকে। বিমানবন্দর সেবা সংক্রান্ত যে কোনো সমস্যার অভিযোগ নেন তারা। পরে সেই অভিযোগ সংশ্লিষ্ট বিভাগ এবং দপ্তরে পৌঁছে দেন। একই সঙ্গে সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্টদের তাগাদা দেন। এখন কল সেন্টারসহ অন্য সেবার বিষয়টি যতে প্রচার হবে, যাত্রীরা তত উপকৃত হবেন।

কল সেন্টার
শাহজালালের কল সেন্টারটি বাংলা এবং ইংরেজি উভয় ভাষায় পরিচালিত হচ্ছে। ফলে সারা বিশ্বের সম্মানিত যাত্রীরা তাদের যে কোনো সমস্যা নিয়ে কল সেন্টার প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। কল সেন্টারের মাধ্যমে যাত্রী ছাড়াও সাধারণ জনগণ বিমানবন্দর সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য জানার সুযোগ আছে। এটি ২৪ ঘণ্টা চালু থাকছে। যাত্রীরা তাদের যে কোনো প্রশ্ন বা উদ্বেগের উত্তর পাবেন। এখন কল সেন্টারটি লং কোর্ড-০৯৬১৪-০১৩৬০০ দিয়ে শুরু হয়েছে এবং শিগগির শর্টকোড (১৩৬০০) চালু করা হবে বলে জানিয়েছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।

গত ২৭ জুলাই ওই কল সেন্টার, ওয়েব পোর্টাল, কাস্টমার রিলেশনশিপ ম্যানেজমেন্ট সফটওয়ারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান মো. মফিদুল রহমান। ওই দিন তিনি বলেন, বিমানবন্দরে যাত্রীসেবা নিশ্চিত হলে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়। এখন এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সার্ভিস যাত্রীদের জন্য অনেক সহায়ক হবে। যাত্রীদের বিভিন্ন অভিযোগ সাপ্তাহিক, পাক্ষিক এবং মাসিক হিসেবে সংরক্ষণের পাশাপাশি সিআরএম টিমের মাধ্যমে সমাধান করে যাত্রীদের অবহিত করা হবে।

ওয়েব পোর্টাল

যাত্রীসেবার মান নিশ্চিত করতে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ নতুন ওয়েবসাইট www.hsia.gov.bd চালু করেছে। যা যাত্রীদের জন্য অত্যন্ত সহায়ক হবে। ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে যাত্রীরা ফ্লাইটের সময়সূচি থেকে শুরু করে চেক-ইন পদ্ধতিসহ যাবতীয় তথ্যাদি পাবেন।

আরও পড়ুন>> শাহজালালে আইএলএস উন্নীতকরণে কাজ চলছে

ওই ওয়েবসাইটে ঢুকে দেখা যায়, ওয়েবসাইটটি বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় করা। ফলে সারাবিশ্বের যাত্রীরা ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে বিদেশে গমন এবং বিদেশ থেকে আগমনের সব নিয়মসহ বিমানবন্দরের বিভিন্ন সেবা, দিক নির্দেশনা, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের তথ্য বিমানবন্দরে কর্মরত বিভিন্ন সংস্থার কার্যাবলী সম্পর্কে জানার সুযোগ রয়েছে।

কাস্টমার রিলেশনশিপ ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার

২৪ ঘণ্টা কল সেন্টার সেবার কার্যক্রম গতিশীল করার জন্য বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ কাস্টমার রিলেশনশিপ ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার চালু করেছে। যার মাধ্যমে যাত্রীদের অভিযোগ, পরামর্শ আরও ভালোভাবে সংরক্ষণ এবং সমাধান করা যাবে। কাস্টমার রিলেশনশিপ ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার যাত্রীদের ব্যক্তিগত পরিষেবা ও বিমানবন্দরের অভিজ্ঞতাকে সবার জন্য আরও দক্ষ করে তুলতে সাহায্য করবে।

সফটওয়্যার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, নতুন কাস্টমার রিলেশনশিপ ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার যাত্রীদের অভিযোগ, পরামর্শ আরও ভালোভাবে সংরক্ষণ এবং সমাধান করতে পারবে। আমরা প্রায়ই বিভিন্ন সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে যাত্রীদের বিমানবন্দর দিয়ে যাতায়াতের অভিজ্ঞতার চিত্র লক্ষ্য করি। যা অনেক সময় অফিসিয়ালভাবে না আসার কারণে সমাধান হয় না। এ সব সূক্ষ্ম বিষয়ের সঠিক সমাধানের জন্য আমি যাত্রীদের কল সেন্টারের মাধ্যমে বিমানবন্দর সম্পর্কিত তাদের যে কোনো সমস্যা সম্পর্কে অভিযোগ দিতে বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।

এমএমএ/এএসএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।