গোলাপবাগ মাঠ
বিএনপির সমাবেশে ক্ষতি ৭৮ হাজার, সংস্কারে ফিরেছে নান্দনিক রূপ
#১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে মাঠটি আধুনিকায়ন করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন
#উদ্বোধনের আগ মুহূর্তে মাঠে গণসমাবেশ করে মাঠের বেহাল দশা করেছিল বিএনপি
সাড়ে চার একর আয়তনের সবুজ মাঠটির এক পাশে ক্রিকেট ও ফুটবল খেলার জায়গা। আরেক পাশে বাস্কেটবল কোর্ট ও স্কেটিংয়ের ব্যবস্থা। এক কোণে একটি লম্বা স্থাপনায় রয়েছে গ্রন্থাগার, ব্যায়ামাগার ও গণশৌচাগার। এ স্থাপনার ওপর তৈরি করা হয়েছে বড় গ্যালারি। সেখানে বসে খেলা দেখা এবং আড্ডা দেওয়ার সুযোগ।
এ চিত্র রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠের। দীর্ঘ দেড় যুগ পরিত্যক্ত ছিল মাঠটি। এখন প্রায় ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে মাঠটি আধুনিকায়ন করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। সকাল-বিকেল মাঠে খেলাধুলা, হাঁটাচলা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এমন সুন্দর পরিবেশ পেয়ে সিটি করপোরেশনের প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন তারা। গত ডিসেম্বরে অনেক নাটকীয়তার পর বিএনপির গণসমাবেশ হয় এ মাঠেই। এতে ডিএসসিসির ক্ষতি হয়েছে ৭৮ হাজার টাকা। তবে ক্ষয়ক্ষতি কম হওয়ায় শর্ত থাকলেও এ টাকা আদায় করেনি ডিএসসিসি।
আরও পড়ুন>> গোলাপবাগ মাঠের বেহাল দশা, ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করছে ডিএসসিসি
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ২০০৫ সালে ‘মেয়র মোহাম্মদ হানিফ উড়ালসড়ক’ নির্মাণকাজের জন্য গোলাপবাগ মাঠটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ওরিয়ন গ্রুপকে দেয় ডিএসসিসি। তবে কাজ শেষ হওয়ার কয়েক বছর পরও মাঠের দখল ছাড়তে গড়িমসি শুরু করেছিল নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান। ২০১৬ সালের নভেম্বরে মাঠটি দখলমুক্ত করে সংস্কারের উদ্যোগ নেয় ডিএসসিসি। পরে নানা কারণে মাঠটির সংস্কারকাজ বাধাগ্রস্ত হয়। সম্প্রতি মাঠের সব কাজ শেষ হয়েছে। দুই মাস ধরে নাগরিকদের জন্য তা উন্মুক্ত করে দিয়েছে সিটি করপোরেশন।
ডিএসসিসির প্রকৌশল দপ্তর সূত্র জানায়, গোলাপবাগ মাঠটি প্রায় ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে আধুনিকায়ন করেছে ডিএসসিসি। ২০২২ সালের ১৪ ডিসেম্বর মাঠটি উদ্বোধনের কথা ছিল। কিন্তু তার চার দিন আগে এ মাঠে গণসমাবেশ করে বেহাল দশা করেছিল বিএনপি। পরে তা আবার ঠিক করতে তিন মাস সময় লাগে। এখন মাঠটি স্থানীয়দের জন্য উন্মুক্ত। এমন সুন্দর মাঠ দেখে যে কারও মনে প্রশান্তি মিলবে।
রোববার (১৬ জুলাই) বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, গোলাপবাগ মাঠের চারপাশের লোহার খাঁচা, পাথর খণ্ড দিয়ে সীমানাপ্রাচীর তৈরি করা। মাঠের দক্ষিণ, পশ্চিম ও পূর্বপাশে রয়েছে আলাদা তিনটি ফটক। সেখান দিয়ে মাঠে ঢুকে ফুটবল-ক্রিকেট খেলছে শিশু-কিশোরেরা। মানিক নগরের শাহিন খান (১৮) বলেন, জন্মের পর থেকে দেখছি গোলাপবাগ মাঠ খেলাধুলার অনুপযোগী। খেলাধুলা করতে দূরের কোনো মাঠে যেতে হতো। নয়তো ছুটির দিনে মহল্লার রাস্তায় ঝুঁকি নিয়ে ক্রিকেট বা ফুটবল খেলতাম। গোলাপবাগ মাঠটি উদ্বোধন হওয়ায় আমরা সবাই খুশি।
আরও পড়ুন>> গোলাপবাগে বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দেয়নি ডিএসসিসি
এই মাঠের পূর্ব অংশে রয়েছে বাস্কেটবল কোর্ট। কিন্তু সেখানে কাউকে বাস্কেটবল খেলতে দেখা যায়নি। দক্ষিণ পাশের স্কেটিংয়ের জায়গাও ফাঁকা দেখা যায়। পশ্চিম পাশে মাঠের সীমানার ভেতর একটি দ্বিতল ভবন রয়েছে। এ ভবনের ছাদের অংশে তৈরি করা হয়েছে গ্যালারি। এ গ্যালারিতে বসে গল্প করছিলেন কে এম দাশ লেনের বাসিন্দা শহীদুল হক (৫৫)। আলাপকালে তিনি বলেন, এখন সপ্তাহে তিন-চার দিন এ মাঠে যাই। গ্যালারিতে বসে মহল্লার শিশু-কিশোরদের খেলা দেখি। সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে মাঠের চারপাশে হাঁটি। তখন মহল্লার অনেকের সঙ্গেই দেখা হয়, ভালো লাগে।
গোলাপবাগ মাঠের গ্যালারির একাংশে (বাইরে ফুটপাত অংশে) দোকানপাট করা হয়েছে। সেগুলোতে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যের বাস কাউন্টার। আরেক অংশে রয়েছে গ্রন্থাগার, ব্যায়ামাগার, গণশৌচাগার। এর মধ্যে গ্রস্থাগার ও ব্যায়ামাগারটি তালা লাগানো দেখা যায়।
গোলাপবাগ মাঠ সংলগ্ন ধলপুর কমিউনিটি সেন্টার। এ সেন্টারের উত্তর পাশে একটি চায়ের দোকানে স্থানীয় বাসিন্দা জাকির হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, গোলাপবাগ মাঠটি দেড় যুগের বেশি সময় খেলাধুলার অনুপযোগী ছিল। এর মধ্যে একটি প্রজন্ম খেলাধুলা বঞ্চিত হয়েছে। এখন সিটি করপোরেশন যে নান্দনিক পরিবেশে মাঠটি সাজিয়েছে তা দেখলেই মনে প্রশান্তি কাজ করে। সকাল-বিকেল মহল্লার লোকজন মাঠে হাঁটতে যায়। সঙ্গে শিশু-কিশোরদেরও মাঠে নিয়ে যায়।
গোলাপবাগ মাঠটি ডিএসসিসির ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাধীন। এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বাদল সরদার সম্প্রতি জাগো নিউজকে বলেন, স্থানীয় মানুষের প্রাণের দাবি ছিল গোলাপবাগ মাঠটি সংস্কার বা আধুনিকায়ন করা। অনেক দেরি হলেও সিটি করপোরেশন তা করেছে। এখন মাঠটির পরিবেশ রক্ষা আমাদের সবার দায়িত্ব।
উদ্বোধনের আগেই বেহাল দশা বিএনপির সমাবেশে
২০২২ সালের নভেম্বরে গোলাপবাগ মাঠের সংস্কার কাজ শেষ হয়। ওই বছরের ১৪ ডিসেম্বর মাঠটি উদ্বোধন করার দিন নির্ধারণ করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। কিন্তু তার আগে ১০ ডিসেম্বর মাঠে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে মাঠের উঠে যায় সব ঘাস। মাঠের চারপাশের গাছপালা, সীমানাপ্রাচীরের চারটি অংশ ভেঙে যায়। পোস্টারে গ্রস্থাগার, ব্যায়ামাগার, গণশৌচাগার ছেয়ে যায়। এগুলো ঠিক করতে আরও তিন মাস সময় লাগে।
ডিএসসিসির প্রকৌশল বিভাগ সূত্র জানায়, পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এই গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নিরাপত্তা বিবেচনায় নয়াপল্টনে সমাবেশের অনুমতি দেয়নি পুলিশ। অনেক নাটকীয়তার পরে ৯ ডিসেম্বর দুপুরে গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশের অনুমতি দেয় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। তবে ওইদিন রাত ৮টা পর্যন্ত এ মাঠে সমাবেশ করতে ডিএসসিসির অনুমতি নেয়নি বিএনপি।
পরে রাত ৯টায় ‘গোলাপবাগে বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দেয়নি ডিএসসিসি’ শিরোনামে জাগো নিউজে একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এই প্রতিবেদনের পর সমাবেশ নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়ে সংগঠনটি। তখন রাত ১০টা ৩৭ মিনিটে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ ইমরান সালেহ প্রিন্স গোলাপবাগ খেলার মাঠ ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করেন। তখন ‘গোলাপবাগ খেলার মাঠের কোনো ধরনের অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতি হলে তার ক্ষতিপূরণ প্রদানের শর্তে’ বিএনপিকে মাঠ ব্যবহারের অনুমতি দেয় ডিএসসিসি।
মাঠটি ডিএসসিসির অঞ্চল-৫ এর আওতাধীন। এ অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাইফুল ইসলাম জয় জাগো নিউজকে বলেন, বিএনপির সমাবেশের পর আমরা মাঠটি পরিদর্শন করেছি। মাঠের কী কী ক্ষতি হয়েছে, ক্ষতিপূরণের পরিমাণ কতে তা হিসাব করেছি। হিসাব মিলিয়ে দেখেছি সব মিলে প্রায় ৭৮ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিপূরণের পরিমাণ কম হওয়ায় তা আদায় করা হয়নি। তবে ভবিষ্যতে ডিএসসিসির আর কোনো মাঠে কোনো রাজনৈতিক দলকে সভা-সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন ডিএসসিসি মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।
এমএমএ/এএসএ/জেআইএম