এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ব্যয় বাড়ছে সাড়ে ৫ কোটি টাকা
‘সাপোর্ট টু ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পিপিপি’ প্রকল্পের ব্যয় ৫ কোটি ৫৩ লাখ ৪৮৫ টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এতে ট্যাক্স, ভ্যাটসহ প্রকল্পটির ব্যয় বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ১৬ কোটি ৭০ লাখ ৭ হাজার ১৫৩ টাকা। এ ব্যয় বাড়ানোর অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।
বুধবার (১২ জুলাই) অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভা অনুষ্টিত হয়। সভা শেষে সভার সিদ্ধান্ত সাংবাদিকদের জানান মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান।
তিনি বলেন, সেতু বিভাগের অধীন বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ‘সাপোর্ট টু ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পিপিপি’ প্রকল্পের ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার-এর ভেরিয়েশন বাবাদ অতিরিক্ত ৫ কোটি ৫৩ লাখ ৪৮৫ টাকা ব্যয় বৃদ্ধির ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে ট্যাক্স, ভ্যাটসহ এ প্রকল্পের মোট ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ৬২ লাখ ৩২ হাজার ৯৮৭ দশমিক ৪৪ মার্কিন ডলার। টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ ১৬ কোটি ৭০ লাখ ৭ হাজার ১৫৩ টাকা।
এদিকে আগামী সেপ্টেম্বরেই খুলে দেওয়া হবে দেশের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে (উড়াল সড়ক)। নির্মাণাধীন ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট অংশ (১২ কিলোমিটার) আগামী সেপ্টেম্বরে উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দৃষ্টিনন্দন এ এক্সপ্রেসওয়ে খুলে দেওয়ার মধ্যদিয়ে রাজধানীবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হবে। অসহনীয় যানজট থেকে মুক্তি পাবে নগরবাসী। এক্সপ্রেসওয়ের কল্যাণে মাত্র ১০ মিনিটে বিমানবন্দর থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত ভ্রমণ করা যাবে।
গত ৮ জুলাই ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ পরিদর্শন করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সেতুমন্ত্রীর পরিদর্শনের ফলে প্রথমবারের মতো উড়াল সড়কে চলাচলের সুযোগ পান সাংবাদিকেরা। বিমানবন্দর থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার সড়ক যেতে তাদের সময় লাগে মাত্র ১০ মিনিট।
এক্সপ্রেসওয়ে ঘুরে দেখা গেছে, বিমানবন্দর থেকে তেজগাঁও এলাকার কাজ শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। এখন কিছু জায়গায় বিটুমিন দেওয়াসহ রোড মার্কিংয়ের কাজ হচ্ছে। কোথাও কোথাও দেওয়া হচ্ছে রঙের প্রলেপ। ধোয়া-মোছার কাজ করছেন শ্রমিকরা।
এক্সপ্রেসওয়ের নিৰ্মাণকাজ পরিদর্শন শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে সেতুমন্ত্রী বলেন, কাওলা থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এক্সপ্রেসওয়ে নির্মিত হচ্ছে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বে। এতে ব্যয় হচ্ছে আট হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার বহন করছে ২ হাজার ৪১৩ কোটি টাকা। তিন ধাপে প্রকল্পটি সম্পন্ন হচ্ছে। প্রকল্পের সার্বিক কাজের অগ্রগতি ৬৩ দশমিক ২০ শতাংশ।
উড়াল সড়ক নির্মাণে জুন পর্যন্ত অগ্রগতি
প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৬৩ দশমিক ২০ শতাংশ। বিমানবন্দর থেকে বনানী পর্যন্ত প্রথম ধাপে প্রকল্পের ভৌত কাজের অগ্রগতি ৯৭ দশমিক ২৮ শতাংশ। এক হাজার ৪৮২টি পাইল, ৩২৬টি পাইল ক্যাপ, ৩২৫টি কলাম, ৩২৫টি ক্রস-বিম, ৩ হাজার ৪৮টি আই গার্ডার নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া ৩ হাজার ৪৮টি আই গার্ডার এবং ৩২৮টি ব্রিজ ডেক স্থাপন কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
দ্বিতীয় ধাপে বনানী থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি ৫৪ দশমিক ২২ শতাংশ। এক হাজার ৬৩৩টি পাইল, ৩২৩টি কলাম, ৩২০টি ক্রস-বিম, ২ হাজার ৩০৫টি আই গার্ডার নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া ২ হাজার ৪৪টি আই গার্ডার এবং ২৩৩টি ব্রিজ ডেক স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। কুড়িল এলাকায় সেন্ট্রাল কন্ট্রোল বিল্ডিং (সিসিবি) কাজের ভৌত অগ্রগতি ৯১ দশমিক ১৫ শতাংশ। তৃতীয় ধাপে মগবাজার রেল ক্রসিং থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক (কুতুবখালী) পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি কম, মাত্র ৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ।
আশাপ্রকাশ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ফার্মগেট পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু হলে রাজধানীতে যানবাহনের চাপ অনেকটা কমে যাবে। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পিপিপি প্রকল্প। বিমানবন্দরের দক্ষিণে কাওলা কুড়িল-বনানী-মহাখালী-তেজগাঁও-মগবাজার-পুরান ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক (কুতুবখালী)। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকা শহরের যানজট অনেকাংশে কমে যাবে। কমবে ভ্রমণের সময় ও খরচ। সার্বিকভাবে যোগাযোগ ব্যবস্থার সহজীকরণ, আধুনিকায়ন হলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে, যা জিডিপিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
এমএএস/এমআইএইচএস/জেআইএম