‘সফটওয়্যার সুরক্ষিত না হলে নাগরিকদের তথ্য ফাঁস হতে পারে’

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:২২ পিএম, ০৯ জুলাই ২০২৩
ফাইল ছবি

সফটওয়্যার সুরক্ষিত না হলে নাগরিকদের তথ্য ফাঁস হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের (এনআইডি) সিস্টেম ম্যানেজার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন। সরকারি ওয়েবসাইটের তথ্য ফাঁস এনআইডি সার্ভার থেকে হয়নি বলেও দাবি করেছেন তিনি।

রোববার (৯ জুলাই) তিনি গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান। শনিবার (৮ জুলাই) সন্ধ্যায় তথ্য ফাঁসের বিষয়টি এনআইডির নজরে আসে।

এ বিষয়ে মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন বলেন, ‘এটা আমাদের ইস্যু না। নাগরিকদের তথ্য ফাঁস হয়েছে, এটা সরকারের একটা ওয়েবসাইটের মাধ্যমের কথা বলা হচ্ছে। আমাদের এনআইডি সার্ভিস নেওয়া বিভিন্ন পার্টনার আছে, যেমন বিভিন্ন ব্যাংক, বিভিন্ন মিনিস্ট্রি আমাদের থেকে সার্ভিস নিয়ে থাকে। এর আগেও আমাদের কাছ থেকে সার্ভিস নেওয়া কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সফটওয়্যার সিকিউরড (সুরক্ষিত) না থাকায়, এ রকম ঘটনা ঘটেছিল। কিন্তু ওই সময় আমরা জানার সঙ্গে সঙ্গেই তাদের সার্ভিস দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলাম। এটা আমাদের ইস্যু না।’

আরও পড়ুন>> বাংলাদেশের সরকারি ওয়েবসাইট থেকে লাখ লাখ নাগরিকের তথ্য ফাঁস)

তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছ থেকে যেসব প্রতিষ্ঠান সার্ভিস নেয়, তাদের মধ্য থেকে যাদের সফটওয়্যার সিকিউরড না, এমন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এটা হয়ে থাকতে পারে। আমাদের সার্ভারে ঢুকতে পারেনি, এটা নিশ্চিত। আমাদের সিস্টেমে কারও ঢোকার সুযোগ নেই। আমাদের সার্ভারে কেউ ডাটা পুশ করতে পারে না। আমাদের সার্ভার থেকে কেউ তথ্য নিতে চাইলে তাদের সার্ভারের মাধ্যমে এনআইডির সার্ভারে আবেদন পাঠায়। সেক্ষেত্রে তারা যেই তথ্য চেয়ে আবেদন করে, আমরা সেই তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করি। এখানে কেউ চাইলেই আমাদের সার্ভারে ঢুকে কোনো কিছু পরিবর্তন বা পুশ করতে পারবে না।’

কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে নাগরিকদের তথ্য প্রকাশ হলো, এটার খোঁজ পেয়েজেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে সিস্টেম ম্যানেজার বলেন, ‘আমরা সেটা বের করার চেষ্টা করছি। আবারও বলছি, আমাদের এনআইডি সার্ভারে প্রবেশ করার কোনো রাস্তা নেই। যারা সেবা নিচ্ছে, তারা তথ্য ব্যবহার করতে না পারার কারণে এটা হতে পারে। আমরা এটা অনুসন্ধানে আছি।’

এর আগে গত ২৭ জুন নাগরিকদের সংবেদনশীল ব্যক্তিগত তথ্য সরকারি ওয়েবসাইটে ঢুকলেই পাওয়া যাওয়ার বিষয়টি দেখতে পান বিটক্র্যাক সাইবার সিকিউরিটির গবেষক ভিক্টর মার্কোপোলোস। বিটক্র্যাক সাইবার সিকিউরিটি দক্ষিণ আফ্রিকার একটি কম্পিউটার নিরাপত্তা সমাধান সংস্থা। তার বরাতে বিষয়টি সামনে নিয়ে আসে মার্কিন অনলাইন পোর্টাল টেকক্রাঞ্চ।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তিবিষয়ক সংবাদমাধ্যম টেকক্রাঞ্চ জানিয়েছে, বাংলাদেশিদের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁসের বিষয়টি সত্যি। এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতে ওই ওয়েবসাইটের ‘পাবলিক সার্চ টুলে’ ফাঁস হওয়া তথ্য খুঁজে দেখা হয়। তথ্য খোঁজার পর ওয়েবসাইট থেকে ফাঁসকৃত তথ্যসহ অন্যান্য তথ্য দেওয়া হয়। যার মধ্যে রয়েছে যিনি রেজিস্ট্রেশন করার আবেদন করেছেন তার নাম। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আবেদনকারীর বাবা-মায়ের নামও পাওয়া গেছে। টেকক্রাঞ্চ জানিয়েছে, তারা ওই ওয়েবসাইটটির নাম প্রকাশ করবে না, কারণ সেটিতে এখনো ফাঁসকৃত তথ্যগুলো রয়েছে।

আরও পড়ুন>> নির্বাচন কমিশনের সার্ভার থেকে তথ্য ফাঁস হয়নি: এনআইডি ডিজি

গুরুতর এমন দাবি জানানো ভিক্টর মার্কোপোলোস জানিয়েছেন, তথ্য ফাঁস করার বিষয়ে তিনি বাংলাদেশের সরকারি যেসব প্রতিষ্ঠানকে ই-মেইল বা অন্যান্য মাধ্যমে অবহিত করেছেন, সেগুলোর কোনোটিই তাকে কোনো জবাব দেয়নি।

বাংলাদেশে ১৮ বছর বয়সী প্রত্যেককে জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া হয়। যেটির প্রত্যেকটির আলাদা নম্বর থাকে। জাতীয় পরিচয়পত্র নেওয়া বাধ্যতামূলক। এ পরিচয়পত্রের মাধ্যমে ড্রাইভিং লাইসেন্স, পাসপোর্ট, জমি বেচা-কেনা ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলাসহ সব কাজ করা হয়। সিইআরটি, বাংলাদেশ সরকারের প্রেস অফিস, যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস এবং নিউইয়র্কের বাংলাদেশের কনস্যুলেটের সঙ্গে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন ভিক্টর মার্কোপোলোস।

এ প্রযুক্তি গবেষক টেকক্রাঞ্চকে বলেছেন, ‘ফাঁসকৃত তথ্যগুলো পাওয়া খুবই সহজ। গুগলের ফলাফল হিসেবে এগুলো সামনে আসে। আমি এটি খুঁজতেও যাইনি। আমি এসকিউএল ইরর নিয়ে গুগলিং করছিলাম, আর এটি দ্বিতীয় ফলাফলে চলে আসে।’ যেসব তথ্য ফাঁস হয়েছে সেগুলোই বেশ ঝুঁকির। কিন্তু এসব তথ্য ব্যবহার করে পরবর্তীতে বিভিন্ন অনলাইনের আবেদনে ঢোকা, পরিমার্জন বা আবেদন মুছে ফেলা এমনকি জন্মনিবন্ধনের তথ্যের ভ্যারিফিকেশনও দেখা যাবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।

এমওএস/ইএ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।