পাইপ লাইনে তেল খালাসে ত্রুটি, ফিরছে লাইটারিংয়ে

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক চট্টগ্রাম
প্রকাশিত: ০৯:২৫ এএম, ০৯ জুলাই ২০২৩
ছবি: সংগৃহীত

বহুল প্রত্যাশিত এসপিএম (ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং উইথ ডাবল পাইপ লাইন) প্রকল্পে ক্রুড অয়েলের মাধ্যমে ফার্স্ট ফিলিং পাইপ লাইনে ত্রুটির কারণে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এখন পুরোনো পদ্ধতিতে লাইটারিং করে জাহাজটি থেকে ক্রুড অয়েল খালাস করার প্রস্তুতি নিয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল)।

সোমবার (৩ জুলাই) সকাল সোয়া ১০টার দিকে বঙ্গোপসাগরের মহেশখালীতে স্থাপিত ভাসমান এসপিএমে ক্রুড অয়েল খালাসের মাধ্যমে ফার্স্ট ফিলিং কার্যক্রম শুরু হলেও দুপুরের দিকে এসপিএমের ভাসমান ফ্যাক্সিবল পাইপে ত্রুটির কারণে খালাস বন্ধ করে দেওয়া হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. লোকমান জাগো নিউজকে বলেন, সোমবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে জাহাজ থেকে এসপিএমে ফার্স্ট ফিলিং শুরু হয়। এসপিএমের একটি ফ্যাক্সিবল পাইপে ত্রুটির কারণে জাহাজ থেকে ক্রুড অয়েল খালাস বন্ধ করে দেওয়া হয়। এসব লাইটারিংয়ের মাধ্যমে জাহাজটির ক্রুড অয়েলগুলো খালাসের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন>> এক জাহাজ তেল খালাসে সময় লাগবে সর্বোচ্চ ২ দিন

এদিকে, গত ২৫ জুন ফার্স্ট ফিলিংয়ের প্রথম সূচি নির্ধারিত ছিল। কিন্তু বৈরি আবহাওয়ায় এবং সাগর উত্তাল থাকার কারণে প্রাথমিক অপারেশন কার্যক্রম পেছাতে হয়। পরে গত ৩ জুলাই সকালে এসপিএমের মাধ্যমে ক্রুড অয়েল খালাস শুরু করা হয়।

বিপিসি সূত্র জানায়, গত ২৪ জুন সৌদি আরব থেকে ৮১ হাজার ৭৩৫ টন অ্যারাবিয়ান ক্রুড অয়েল নিয়ে ট্যাংকার ভ্যাসেল ‘এমটি হোরে’ মহেশখালীতে এসপিএম সংলগ্ন এলাকায় পৌঁছে। ওইদিন এসপিএমের মাধ্যমে শোরট্যাংকে নেওয়ার পর জাহাজটিতে এখনো প্রায় ৭৫ হাজার টন ক্রুড অয়েল রয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিপিসির এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, এসপিএম প্রকল্পের পাইপলাইনে ত্রুটির কারণে সৌদি আরব থেকে অ্যারাবিয়ান ক্রুড অয়েল নিয়ে আসা জাহাজটি থেকে এখন আগের মতোই লাইটারিংয়ের মাধ্যমে তেল খালাসের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগে থেকেই বিএসসির (বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন) জাহাজে চ্যাটারিংয়ের মাধ্যমে ক্রুড অয়েল খালাস নেওয়া হতো। এমটি হোরে জাহাজটি থেকে যেহেতু এসপিএমে খালাসের সিদ্ধান্ত ছিল, সেহেতু বিএসসির ট্যাংকার বুকিং দেওয়া হয়নি। এখন ট্যাংকারের শিডিউল দেওয়ার জন্য বিএসসিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, ১১-১২ জুলাই জাহাজটি থেকে লাইটারিং শুরু করা সম্ভব হবে।

আরও পড়ুন>> ২৮-৪৮ ঘণ্টায় খালাস হবে ডিজেল ও ক্রুড অয়েল

বিপিসি সূত্রে জানা গেছে, ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের (ইআরএল) বর্তমানে ক্রুড অয়েল (অপরিশোধিত জ্বালানি তেল) প্রক্রিয়াকরণ ক্ষমতা বার্ষিক ১৫ লাখ মেট্রিক টন। বর্তমান নির্মানাধীন ইউনিট-টু প্রকল্প চালু হলে ইআরএলের ক্রুড অয়েল পরিশোধন ক্ষমতা প্রতি বছর ৪৫ লাখ মেট্রিক টনে দাঁড়াবে। অন্যদিকে দেশের জ্বালানি চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে প্রতি বছর প্রায় ৫০ লাখ মেট্রিকটন ডিজেল আমদানি করতে হয়।

বঙ্গোপসাগরের কর্ণফুলী চ্যানেলের নাব্যতা ৮ মিটার থেকে ১৪ মিটারের নিচে হওয়ায় অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতার কারণে ক্রুড অয়েলবাহী বড় ভ্যাসেল হ্যান্ডেল করতে পারে না চট্টগ্রাম বন্দর। এ কারণে ক্রুড অয়েলবাহী মাদার (বড়) ভ্যাসেলগুলো গভীর সমুদ্রে নোঙর করা হয়।

মাদার ভ্যাসেল থেকে লাইটারেজ করে ক্রুড আনলোডিং করা হয়। লাইটারেজ অপারেশনের মাধ্যমে ক্রুড আনলোড করা সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল। আমদানিকৃত জ্বালানি খালাসে ব্যয় ও সময় বাঁচানোর পাশাপাশি নিরাপত্তা বাড়াতে এসপিএমসহ পাইপ লাইন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়।

আরও পড়ুন>> কমেছে আমদানি, অলস ভাসছে শত শত লাইটারেজ

সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালে ইআরএলর মাধ্যমে সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করে বিপিসি। কিন্তু নানান জটিলতার কারণে সময়ক্ষেপণে প্রকল্পটির ব্যয় কয়েকগুণ বেড়ে যায়। কয়েকবার সংশোধিত হয়ে ২০১৬ সালের ১৮ আগস্ট পাঁচ হাজার ৪২৬ কোটি ২৬ লাখ ৮৩ হাজার টাকার প্রকল্পটির প্রশাসনিক অনুমোদন দেয় জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ।

প্রশাসনিক অনুমোদনের পর ২০১৬ সালের ৮ ডিসেম্বর চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেডের (সিপিপিইসিএল) সঙ্গে চুক্তি করে বিপিসি। প্রায় দেড় বছর পর ২০১৮ সালের ১৪ মে থেকে কাজ শুরু করে ইপিসি ঠিকাদার। এরপর প্রায় তিন দফায় সংশোধিত হয়ে প্রকল্পটি ব্যয় দাঁড়ায় সাত হাজার ১২৪ কোটি টাকায়।

বর্তমানে আরও এক হাজার ২১৭ কোটি টাকা ব্যয় ও এক বছর সময় বাড়ানোর জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিপিসি। এতে প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়াবে ৮ হাজার ৩৪১ কোটি টাকা। নতুন প্রস্তাবনা অনুসারে প্রকল্পটি ২০২৪ সালের ৩০ জুন সম্পন্ন হবে।

আরও পড়ুন>> এডিস মশার উৎস খুঁজতে এবার চসিকেও ব্যবহার হচ্ছে ড্রোন

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পে এসপিএম নির্মাণের পাশাপাশি মহেশখালীর মাতারবাড়ি উপকূলে ৫০ হাজার মেট্রিক টন ধারণক্ষমতার তিনটি ক্রুড অয়েল স্টোরেজ ট্যাংক এবং ৩০ হাজার মেট্রিক টন ধারণক্ষমতার তিনটি ডিজেল স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণ করা হয়েছে। পাশাপাশি মহেশখালীতে পাম্প স্টেশন স্থাপন, স্কাডা সিস্টেম স্থাপন এবং ফায়ার ফাইটিং সিস্টেম তৈরি করা হয়েছে। প্রকল্পের মূলকাজের অংশ হিসেবে অফশোরে ১৪৬ কিলোমিটার ও অনশোরে ৭৪ কিলোমিটারসহ মোট ২২০ কিলোটিমার পাইপলাইন স্থাপনের কাজও শেষ হয়েছে।

অন্যদিকে কুতুবদিয়া চ্যানেল ও মাতারবাড়ি অ্যাপ্রোচ চ্যানেল অংশে ডিপ পোস্ট ট্রেন্সিং পদ্ধতিতে চারটি পাইপলাইন সমুদ্রতটের ৩০ ফুট গভীরে স্থাপন করা হয়েছে। তাছাড়া মহেশখালীর ধলঘাটায় একটি, চট্টগ্রামের গহিরায় একটি, ডাঙ্গারচরে একটি ব্লক বাল্ব স্টেশন এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে মাইক্রোয়েভ রিলে টাওয়ারের কাজও শেষ পর্যায়ে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।

ইকবাল হোসেন/এএএইচ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।