এই বিদ্রোহ পুতিনকে আরও শক্তিশালী করবে!
ড. ইমতিয়াজ আহমেদ। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক। পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, কানাডার কার্লটন বিশ্ববিদ্যালয় এবং অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন জাপানের ইয়োকোহামা সিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখন অধ্যাপনা করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে।
রাশিয়া পরিস্থিতি ও পুতিনের অবস্থান নিয়ে মুখোমুখি হন জাগো নিউজের। দুই পর্বের সাক্ষাৎকারের আজ থাকছে প্রথমটি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সায়েম সাবু।
জাগো নিউজ: ২৪ ঘণ্টার বিদ্রোহ। প্রায় রাশিয়া কাঁপছিল। আবার রক্তপাত ছাড়াই অবসান ঘটলো ওয়াগনার বাহিনীর আচমকা এই বিদ্রোহের। পর্যবেক্ষণ করছিলেন নিশ্চয়।
ড. ইমতিয়াজ আহমেদ: এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বেশ কয়টি বিষয় সামনে এসেছে। আদৌ এটি ক্যু ছিল কি না তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। আবার সাজানো বিষয় ছিল কি না, সেটা নিয়েও অনেকে প্রশ্ন করছেন।
আরও পড়ুন>> ‘রাশিয়া কোণঠাসা হলে পারমাণবিক বোমা মারবেই’
তবে ওয়াগনার গ্রুপকে যে এক সময় থামাতে হবে সেই তাগিদ বড় আকারে চলে আসছিল প্রতিদিনই। কারণ ইউক্রেন যুদ্ধে বড় ক্রেডিটটা ওয়াগনার বাহিনীই নিয়ে আসছিল এবং ইউক্রেনের দখল করা অঞ্চল তাদের নিয়ন্ত্রণেই ছিল। ৫০ হাজারের মতো সদস্যের এই বাহিনীর সফলতা বাড়ছিল দিনে দিনে। পুতিন একটি আন্তর্জাতিক কাঠামোর মধ্যে থেকে ইউক্রেন যুদ্ধ পরিচালনা করছেন। নানা নিষেধাজ্ঞা মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ওয়াগনার বাহিনীকে থামানোর কোনো বিকল্প ছিল না।
জাগো নিউজ: তাহলে কি ওয়াগনার বাহিনীকে থামানোর পথ এটিই ছিল?
ড. ইমতিয়াজ আহমেদ: যারা রাশিয়া নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে পর্যবেক্ষণ করে আসছেন, তারা অনেকেই মনে করছেন রাশিয়ায় যা ঘটছে, তা পুতিনের নিয়ন্ত্রণের মধ্য থেকেই। এসব নাটকীয় ঘটনা পুতিনকে আরও শক্তিশালী করছে বলে অনেকে মনে করছেন। পুতিন এই ঘটনার মধ্য দিয়ে যাচাই করলেন ওয়াগনার গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা প্রিগোশিনের সঙ্গে আসলে কে কে আছেন। তিনি দেখতে পেলেন খুব বেশি সদস্য প্রিগোশিনের সঙ্গে নেই, এমনকি অফিসাররাও থাকলেন না।
আরও পড়ুন>> অর্থনীতি ও সামরিক শক্তিতে ইরানের অগ্রগতি ঈর্ষণীয়
শেষ পর্যন্ত আমরা দেখতে পেলাম বেলারুশের প্রেসিডেন্টের মধ্যস্থতায় বিদ্রোহের অবসান ঘটলো এবং প্রিগোশিন সেখানে আশ্রয় পেল। তবে কীভাবে সেখানে আশ্রয় পেল, তা দেখার বিষয়। আবার দেখা যাচ্ছে, ওয়াগনার বাহিনীর সদস্যদের বড় একটি অংশ রাশিযার মূল সামরিক বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন।
তবে এসব ঘটনা ইউক্রেন যুদ্ধের ওপর বড় প্রভাব ফেলবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
জাগো নিউজ: এই বিদ্রোহকে ‘সাজানো’ বলছেন। গুটি কে চালতে পারে?
ড. ইমতিয়াজ আহমেদ: একটি দেশের মূল সামরিক বাহিনী একটি প্যারালাল ফোর্সকে মেনে নিতে পারে না। অন্তত দীর্ঘমেয়াদে একটি বিভাজন সৃষ্টি হবেই। আমরাদের দেশেও স্বাধীনতার পর এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। রক্ষীবাহিনীর সঙ্গে সামরিক বাহিনীর দ্বন্দ্ব স্পষ্ট হলো।
আরও পড়ুন>> পাকিস্তানে এখন নির্বাচন হলে ইমরান খানের দলই জিতবে
সামরিক কাঠামো অন্য কোনো চ্যালেঞ্জ সহ্য করতে পারে না। কমান্ডের মধ্য থেকে কাজ করলে সাধারণত সমস্যা হয় না। কিন্তু ওয়াগনার বাহিনী কমান্ডের বাইরে চলে গিয়েছিল। প্রিগোশিন মিডিয়ায় কথা বলছেন। সামরিক বাহিনীর সঙ্গে দ্বন্দ্বের বিষয়টি প্রকাশ করছেন। এমন আচরণ মূল সামরিক কাঠামোর মধ্য থেকে প্রকাশ হতে পারে না। এটি রাশিয়ার সামরিক বাহিনী পছন্দ করেনি। অন্য কোনো দেশও এমন পরিস্থিতি মানবে না।
প্রশ্ন হচ্ছে ঘটনাটি কে সাজালো। এর জবাব পেতে হয়তো আরও সময় লাগবে।
জাগো নিউজ: এ ঘটনা পুতিনকে শক্তিশালী করছে বলছেন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, এই বিদ্রোহ পুতিনের অবস্থা নড়বড়ে করে দিচ্ছে। ইউক্রেন প্রেসিডেন্টও তাই বলছেন।
ড. ইমতিয়াজ আহমেদ: আমার কাছে ঠিক এমন মনে হয়নি। বিশ্লেষকরা মনে করছেন পুতিন এ ঘটনার মধ্য দিয়ে নিজের অবস্থান আরও পরিষ্কার করার সুযোগ পেলেন। তিনি দেখতে পেলেন, সামরিক বাহিনী বা এর বাইরে অন্য কোনো শক্তি পুতিনের বিপক্ষে আছে কি না? কিন্তু দেখা গেলো তেমন কেউ নেই যিনি পুতিনকে এই মুহূর্তে চ্যালেঞ্জ করতে পারেন।
তবে এমন ঘটনার প্রভাব দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হয়। কী প্রভাব পড়বে তা হয়তো ভবিষ্যতে বলা যাবে। ওয়াগনারের মূল বাহিনী রাশিয়ার সঙ্গেই আছে। পুতিন যেভাবে সমস্ত ঘটনা সামলে এনেছেন, তাতে তার শক্তিমত্তার প্রকাশ ঘটেছে।
এএসএস/এএসএ/এমএস