ব্যাপারীদের প্রত্যাশা গরুর দাম বাড়বে, ক্রেতাদের আশা কমবে
দেশের নানান প্রান্ত থেকে রাজধানী ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ১৯টি পশুর হাটে কোরবানির পশুবাহী ট্রাক আসছে কয়েক দিন থেকেই। হাটগুলো ভরে উঠেছে কোরবানির গরু-ছাগলে। বেচাকেনা সেভাবে শুরু না হলেও নগরবাসী পশুর হাটগুলোতে আসছেন। ঘুরে ফিরে দেখছেন গরু-ছাগল। কেউ কেউ আবার দরদামও করছেন। পছন্দ হলে পশুটি কিনেও আনছেন অনেকে। তবে এ সংখ্যা একেবারেই কম।
সাধারণত ঈদের আগের দিন গরু বেচাকেনা সবচেয়ে বেশি হয়। ক্রেতাদের আশা, ঈদের আগের রাতে গরুর দাম আরও একটু কমবে। অন্যদিকে ব্যাপারীদের প্রত্যাশা, গরুর দাম সামনে আরও বাড়বে।
মানিকগঞ্জের মুন্নাফ ব্যাপারী। চার দিন আগে হাটে ৫৬টি মাঝারি আকারের গরু তুলেছেন। এরমধ্যে মাত্র চারটি বিক্রি করেছেন। সামনে গরুর দাম বাড়বে এই প্রত্যাশায় বাকি গরু বিক্রি করছেন না তিনি।
আরও পড়ুন: ক্রেতা মিলছে না বড় গরুর, ব্যাপারীদের মাথায় হাত
মুন্নাফ ব্যাপারী জাগো নিউজকে বলেন, ঢাকায় মানুষের ঘুমানোর জায়গার অভাব। গরু কিনে রাখবে কোথায়? চাঁদ-রাতে গরু সব বিক্রি হয়ে যাবে। সামনে গরুর দাম বাড়বে। যদি দাম না বাড়ে ঘরের মাল ঘরে ফেরত নিয়ে যাবো। তারপরও পানির দরে গরু দেবো না।
এরই মধ্যে হাটে ক্রেতা সমাগম বাড়তে থাকে। তবে কেনার থেকে দেখার লোক বেশি। ক্রেতাদের প্রত্যাশা সামনে দাম কমবে।
নগরীর বর্ধিত পল্লবী থেকে গাবতলী পশুর হাটে এসেছেন হাজী মোহাম্মদ মঈনুদ্দীন। সঙ্গে করে বড় ছেলে ও কলেজ পড়ুয়া নাতি-নাতনিকে নিয়ে এসেছেন। মোহাম্মদ মঈনুদ্দীদের প্রত্যাশা, চাঁদ-রাতে গরুর দাম ঠিকই কমবে।
মোহাম্মদ মঈনুদ্দীন জাগো নিউজকে বলেন, ব্যাপারীরা গরুর দাম বেশি বলে। তারা গরু ছাড়ছে না। এক লাখ টাকার গরুর দাম এক লাখ ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা বলে। প্রতিবার দেখি ঈদের আগের রাতে গরুর দাম কমে। গতবার ঈদেও কমেছিল। আমার বিশ্বাস এবার ঈদেও গরুর দাম কমবে। হাটে ১২ থেকে ১৩টি গরু দেখে একটা ধারণা নিলাম। এবার গরুর দাম খুবই বাড়তি।
কুষ্টিয়া মিরপুরের শুকচান ব্যাপারী। এবার গাবতলীর হাটে ৩২টি গরু তুলেছেন। গত দুই কোরবানির ঈদের গড়ে ৮ লাখ টাকা লোকসান গুনেছেন শুকচান। এবার ঈদে লোকসান পুষিয়ে নেওয়ার প্রত্যাশায় আছেন তিনি।
আরও পড়ুন: ঢাকার সড়কে পশুর হাট, যাতায়াত-দুর্গন্ধে ভোগান্তি
তিনি বলেন, গত দুই কোরবানিতে বড় বসান (লোকসান) খাইছি। যা থাকে কপালে, এবারও গরু রেখে দেবো। পানির দরে বিক্রি করবো না। তবে এবার হাটে গরু কম। আশা করছি দাম বাড়বে।
ফলে কোরবানির গরু বেচাকেনা একেবারেই থমকে আছে বলা যায়। তবে গরু রাখার জায়গা যাদের আছে তারা অনেকে দর কষাকষি করে গরু কিনে নিচ্ছেন।
বর্তমানে হাটে গরু দেখভাল চলছে। দাম জিজ্ঞেস করেই চলে যাচ্ছেন ক্রেতারা। মিরপুরের মিজান ব্যাপারী ৪০টি গরু চুয়াডাঙ্গা থেকে গাবতলীর হাটে তুলেছেন। একটি গরুও বিক্রি করেননি ভালো দামের আশায়।
মিরপুরের রাজু ব্যাপারী, মন্টু ব্যাপারী ও দেলোয়ার ব্যাপারী এসেছেন গাবতলী হাটে। তারা সম্পর্কে চাচাতো ভাই। গ্রামের হাট ও বিভিন্ন বাড়ি থেকে এনে ৫৬টি গরু হাটে তুলেছেন। একটি গরুও তারা বিক্রি করেননি। মূলত বাড়তি দামের আশায় তিনি গরু বিক্রি করেননি।
আরও পড়ুন: সরবরাহ বাড়লেও দাম বেশি, ক্রেতা কম
রাজু ব্যাপারী জাগো নিউজকে বলেন, গরু বিক্রি হয় চাঁদরাতে। ঢাকার মানুষ গরু রাখবে কোথায়? গরু এখন বেচাকেনা নেই তেমন। ক্রেতারা আসছে, গরু দেখতে। হাটে গরু দেখে বাসায় গিয়ে সবাই গল্প গুজব করবে। এর পরেই গরু কিনবে। এক রাতেই গরু বিক্রি হয়ে যাবে।
এরই মধ্যে নগরীর অলি-গলি ও বাসার সামনে কোরবানির পশু দেখা যাচ্ছে। ফুটপাত দিয়ে ছোট ছোট মৌসুমি বেপারীরা বিক্রির জন্য ছাগলের পাল নিয়ে ছুটছেন।
এমওএস/এমএইচআর