কোরবানির পশুর হাট
সরবরাহ বাড়লেও দাম বেশি, ক্রেতা কম
খাবারের দাম ও লালন-পালন খরচ বেড়ে যাওয়ায় এবার ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির পশুর দাম গত বছরের তুলনায় বেড়ে গেছে। এতে যেমন ক্রেতারা কাঙ্ক্ষিত দামে পশু মেলাতে পারছেন না, আবার বিক্রেতারাও দাম না পাওয়ার দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। রোববার (২৫ জুন) রাজধানীর আফতাবনগর হাটে ক্রেতা ও বিক্রেতারা জানিয়েছেন এসব কথা।
বিক্রেতারা জানান, ঠিক গত বছরের তুলনায় এ বছর গরুর দাম ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ওই হাটে গত বছর ছোট ও মাঝারি আকৃতির গরুর (৩ থেকে ৫ মণ) মণপ্রতি দাম ছিল ২৮ থেকে ২৯ হাজার টাকা এবং বড় গরু (৫ মণের উপরে) মণপ্রতি ২৬ থেকে ২৭ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ বছর ছোট ও মাঝারি আকৃতির গরু মণপ্রতি ৩২ থেকে ৩৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বড় গরু বিক্রি হচ্ছে মণপ্রতি ৩০ থেকে ৩২ হাজার টাকায়। যদিও অধিকাংশ ব্যাপারী প্রথমে দাম হাঁকছেন আরও বেশি।
আরও পড়ুন> ঢাকায় প্রতি বর্গফুট চামড়ার সর্বোচ্চ দাম ৫৫ টাকা, বাইরে ৪৮ ঢাকায় প্রতি বর্গফুট চামড়ার সর্বোচ্চ দাম ৫৫ টাকা, বাইরে ৪৮
ব্যাপারীরা আরও জানিয়েছেন, দামের কারণে এ বছর ছোট গরুর চাহিদা বেশি। এখন যারা হাটে আসছেন, তারা ছোট গরু কিনছেন। এক থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে গরুর চাহিদা বেশি। ছোটগুলোর মধ্যে আবার দেশি জাতের গরুর চাহিদা সবচেয়ে বেশি। আর বড় গরুর ক্রেতা তুলনামূলক কম।
আফতাবনগর হাট ঘুরে দেখা গেছে, ঈদ সামনে রেখে বিক্রেতারা ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন। দাম বেশি হলেও গরুর সরবরাহে কোনো কমতি নেই। সেই তুলনায় ক্রেতা অনেক কম। তবে কাল, পরশু বাজার জমবে বলে আশা করা হচ্ছে।
হাট ইজারাদার জানান, বৃহস্পতিবার থেকে বেচাকেনা শুরু হলেও মূল বেচাকেনা শুরু হবে সোমবার থেকে।
এদিকে, ওই হাটে নাটোর থেকে সাতটি বড় গরু নিয়ে আসা আব্দুল সালাম বলেন, সব বড় গরু এনেছি, ৮ থেকে ১৪ মণ মাংসের। বড় বলে বিক্রি কম। তিন দিনে একটা কাস্টমারও নিতে চায়নি।
১৪ মণের গরু সাড়ে ৫ লাখ টাকায় বিক্রি করতে চান তিনি। তিনি বলেন, দামও সেভাবে বলেনি কেউ। মনে হয় বাজারে এবার বড় গরুর দাম ভালো হবে না।
কুষ্টিয়ার আসাদুজ্জামান পিন্টু এনেছেন ৫০টি গরু। তিনি বলেন, এগুলো গড়ে ৩২ হাজার টাকা মণ কেনা। ৫০টা গরু এনেছি, মাত্র ১ টা বিক্রি হয়েছে এই তিনদিনে।
খরচ বেশি হয় বিক্রিত গরুর দাম নিয়ে খুব বেশি সন্তুষ্ট নয় খামারিরা। সরবরাহ বেশি থাকায় শেষ পর্যন্ত কাঙ্খিত দাম না পাওয়া দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারাও।
পাবনার খামারি জামাল মিয়া বলেন, গত বছর ১৬টি গরু বিক্রি হলেও আশানুরূপ দাম পাইনি। এ বছর সেই তুলনায় খরচ অনেক বেড়েছে। দাম বাড়িয়ে চাইলে ক্রেতাদের খুব একটা সাড়া মিলছে না।
তিনি বলেন, এ বছর ৩০টি গরু এনেছি হাটে। ৪টি গরু বিক্রি হয়েছে। সেগুলো সব ছোট গরু। লাভ কম। বড়গুলোর ক্রেতা নাই। কিন্তু আমার বেশিরভাগ বড় গরু। শেষ পর্যন্ত দাম কমে বিক্রি করতে হলে লোকসানে পড়তে হবে।
তিনি জানান, তার খামারে বেশিভাগ ৪০০ থেকে ১ হাজার ১০০ কেজি ওজনের গরু ছিল। প্রায় এক বছর লালন-পালন করতে প্রতিটি গরুতে শুধু খাবার খরচ হয়েছে ২ থেকে আড়াই লাখ টাকা। সব গরু তিনি এখনও হাটে নেননি। পরিস্থিতি বুঝে বাকিগুলো হাতে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তার।
তিনি বলেন, গো-খাদ্যের দাম বছরজুড়ে বেশি ছিল। এতে খামারিদের লাভ হয়নি। পশু পালনে খরচ কমেনি।
আরও পড়ুন> টিকিট ছাড়া কাউকে স্টেশনে ঢুকতে দেওয়া হবে না
অফতাব নগরে গরুর আমদানি বেশি থাকলেও এখনও ক্রেতার খুব একটা ভিড় নেই। গরুর দাম বেশি হওয়ায় কাঙ্ক্ষিত ব্যবসা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন অধিকাংশরা। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সেখানে খুব বেশি ক্রেতা দেখা মেলেনি। যারা রয়েছেন তাদের মধ্যে অধিকাংশই দর্শনার্থী।
আনিসুজ্জামান হেলাল নামের একজন ক্রেতা বলেন, গত বছরের থেকে প্রতিটি ছোট গরু প্রায় ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা বেশি চাচ্ছে। এ দামে গরু কেনা প্রায় অসম্ভব। বাজারের ভাব বোঝা যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, প্রচুর গরু, ক্রেতা নেই। তারপরও কেউ দাম ছাড়তে চাচ্ছে না।
এনএইচ/এসএনআর/এমএস