জমজমাট জাতীয় বৃক্ষমেলা, ১৮ দিনে ৭ লাখ চারা বিক্রি

তাসনিম আহমেদ তানিম
তাসনিম আহমেদ তানিম তাসনিম আহমেদ তানিম , শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (শেকৃবি) প্রতিবেদক শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
প্রকাশিত: ১১:২৮ এএম, ২৪ জুন ২০২৩

দুই সপ্তাহের ব্যবধানে জমে উঠেছে জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলা। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের পুরোনো বাণিজ্যমেলা মাঠে ৫ জুন থেকে শুরু হয় বৃক্ষমেলা। শুরুর দিকে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের কারণে প্রথম সপ্তাহে বৃক্ষপ্রেমী ও ক্রেতাদের আনাগোনা কম ছিল।

তবে কয়েকদিন বৃষ্টি হওয়ায় তাপমাত্রা কিছুটা কমার কারণে বৃক্ষপ্রেমীরা ছুটছেন মেলায়। এবারের বৃক্ষমেলার প্রতিপাদ্য ‘গাছ লাগিয়ে যত্ন করি, সুস্থ প্রজন্মের দেশ গড়ি’।

শুক্রবার ছুটির দিন থাকায় মেলায় লোকজনের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেকেই যাচ্ছেন মেলায় পছন্দের গাছটি কিনতে। শহরের অল্প জায়গা থাকায় ছাদ বাগানের উপযোগী গাছের চারার চাহিদা বেড়ে গেছে।

আয়োজকরা জানান, এ বছরে মেলায় মোট ১৩১টি স্টল রয়েছে। সরকারি ৭টি এবং বেসরকারি মালিকানাধীন ৯০টি প্রতিষ্ঠান এসব স্টল দিয়েছে। রয়েছে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার এবং বৃদ্ধদের বিশ্রাম কক্ষ। এখন পর্যন্ত প্রায় ৫ কোটি ৩৮ লাখ টাকায় প্রায় ৬ লাখ ৯৮ হাজার চারা বিক্রি হয়েছে। মেলায় সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, ন্যাশনাল হারবেরিয়াম, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন ও বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট।

মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, প্রবেশ পথ দিয়ে ঢুকলেই হাতের ডান পাশে বন অধিদপ্তরের কন্ট্রোল রুম এবং তথ্যকেন্দ্র। বাম পাশে রয়েছে জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের স্টল। সেখানে শোভা পাচ্ছে ক্যাকটাস, ভুট্টা, বনসাই, বটসহ নানা বিরল প্রজাতির গাছ। একটু সামনে গেলেই চোখে পড়বে পানির দৃষ্টিনন্দন পানির ফোয়ারা। সকালে মেলায় লোক সমাগম কম থাকলেও দুপুরের পরে প্রচুর দর্শনার্থীরা মেলায় আসতে থাকেন। ছোট ছোট গাছে ঝুলে আছে আম, জাম, কাঁঠাল, ডালিম, লেবু, জাম্বুরাসহ নানান ফল। শোভা পাচ্ছে জাতীয় ফুল শাপলা থেকে শুরু করে বেলী, গোলাপ কিংবা বাগানবিলাস। বনজ, ফলজ, ঔষধি, অর্কিড, শোভাবর্ধনকারী গাছের পসরা সাজিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সবুজের বিশাল সমারোহে পরিণত হয়েছে মেলা প্রাঙ্গণ।

বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখা যায়, বরিশাল নার্সারিতে ইন্দোনেশিয়ান আম, চিয়াংমাই, বিএন ৭, আলফানসো, ডকমাই শ্রীমুয়াং, রেড আইভরি, ডাবল ক্যাপ্টিন, কাটিমন আমের চারা দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করছে। এ ছাড়াও বিক্রি হচ্ছে বারমাসি নাশপাতি, আপেল, অ্যাভোকাডো, পার্সিমনের বিভিন্ন জাতের চারা।

jagonews24

চারাগুলো বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকায়। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন স্টলে ১০০-৪০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন রকম ফলের চারা।

বেলী গার্ডেন নার্সারিতে নান্দকমাই-সিমোয়ান, ব্রুনাই কিংসহ বিভিন্ন রকমের বিদেশি গাছ বিক্রি হচ্ছে। ডিপ্লোমা নার্সারিতে বিদেশি গাছের মধ্যে রয়েছে আফ্রিকান কোকো চকলেট, থাই নাশপাতি, ফিলিপাইনের সানথুন, জাপানের পার্সিমন, থাই চিয়্যাংমাই। গাছ ভেদে এদের দাম ১৫-৪০ হাজার টাকা।

গ্রিন স্পেস নার্সারিতে পাওয়া যাচ্ছে দুর্লভ ও বিপন্নপ্রায় ৭৫ প্রজাতির গাছ। ব্র্যাক নার্সারিতে ১৫০-৬০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে নানা ফলজ গাছ। বনসাই পাওয়া যাচ্ছে ১ হাজার ২০০ থেকে শুরু করে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকায়।

মুসুর ছাদবাগানে পাওয়া যাচ্ছে ছাদবাগান উপযোগী বাহারি রকমের গাছের চারা। উদ্দীপন পাখি পল্লীতে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খড়কুটোয় হাতে তৈরি পাখির বাসা। হোসেন নার্সারিতে কৃষির ছোট-বড় সব যন্ত্রপাতি বিক্রি হচ্ছে। দাম ২০০ থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত।

ন্যাশনাল হারবেরিয়ামে পাওয়া যাচ্ছে নানা রকমের ঔষধি ও মসলা জাতীয় গাছের চারা। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের একটি আদর্শ গ্রাম প্রদর্শনী দেখতে ভিড় করছেন অনেকে।

মেলায় গাছের পাশাপাশি পাওয়া যাচ্ছে গৃহসজ্জায় শোভাবর্ধনকারী পরিবেশবান্ধব জিনিসপত্র। এ ছাড়াও মিলছে মধু, খাঁটি সরিষার তেল, আচারসহ ঘরে তৈরি নানান সামগ্রী।

স্টল মালিকরা জানান, শুরুর চেয়ে এখন বেচাকেনা বাড়ছে। তবে যখনি বৃক্ষমেলা জমে উঠেছে তখনই কোরবানির ঈদের কারণে ২৭ তারিখ থেকে ছুটি, ফলে কিছুটা লোকসানের সম্মুখীন হতে হবে তাদের।

মিরপুর পল্লবী থেকে পরিবারসহ মেলায় ঘুরতে আসা আসাদুজ্জামান বলেন, বাচ্চাদের নিয়ে আসছি বিভিন্ন গাছের সঙ্গে পরিচিত করানোর জন্য। খুবই ভালো সময় কেটেছে। বৃক্ষমেলা ছাড়া শহরের মধ্যে এতো গাছের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার এমন সুযোগ নেই। কিছু অর্কিড, ফুল ও পেয়ারা চারা কিনেছি। ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা কমাতে বৃক্ষরোপণের বিকল্প নেই। ঈদের পরে আবারও মেলায় আসবো আরও কিছু চারা কিনতে।

বন অধিদপ্তরের সহকারী বন সংরক্ষক দ্বীপন চন্দ্র দাস বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি থেকে পরিত্রাণ পেতে এবং বেশি বেশি গাছ লাগানোকে উৎসাহিত করতে বন অধিদপ্তরের এ আয়োজন। এ বছর মেলায় অর্কিড, ফলজ ও শোভাবর্ধক গাছের চারা প্রচুর বিক্রি হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী সবাইকে তিনটি (বনজ, ফলজ, ঔষধি) করে গাছ লাগানোর আহ্বান করেন। এখন গাছ লাগানোর উপযুক্ত সময় তাই সবার উচিত এখান থেকে চারা সংগ্রহ করে চাষযোগ্য জায়গায় (ছাদ, বেলকনি, বাড়ির আঙিনায়) গাছ লাগানো যা আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ভূমিকা রাখবে।

মেলার প্রথম পর্ব চলবে ২৬ জুন পর্যন্ত। আবার ঈদের পর ১ জুলাই শুরু হয়ে ১২ জুলাই শেষ হবে বৃক্ষমেলার আয়োজন। মেলা সকলের জন্য উন্মুক্ত। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়ে চলছে রাত ৮টা পর্যন্ত।

এসএনআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।