জনপ্রিয় হচ্ছে অনলাইনে ভাগে কোরবানি
পশুর দাম বেড়ে যাওয়ায় একা কোরবানি দেওয়া বেশ জটিল হয়ে উঠেছে নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের জন্য। আবার শহুরে জীবনে কয়েকজন মিলে ভাগে কোরবানি দেওয়াও কঠিন। ঠিকঠাক অংশীদার মেলানো, পশু কেনা, রক্ষণাবেক্ষণ, কোরবানির মাংস ব্যবস্থাপনা, সবকিছু বড় মুশকিলের কাজ শহরের বাড়িতে। এ কঠিন সমস্যার সমাধান নিয়ে এসেছে দেশের কয়েকটি অনলাইন প্রতিষ্ঠান। তারা ভাগে কোরবানি দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে।
অর্থাৎ অনলাইনে পছন্দের পশু বুকিং দিয়ে এর ভাগের অগ্রিম অর্থ পরিশোধ করলেই ক্রেতার ঠিকানায় পশু কোরবানি করে নির্দিষ্ট সময়ে মাংস পৌঁছে দেওয়া হয়। আবার কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান ভাগের দাম নির্ধারিত রাখে। একজন কোরবানিদাতা একাধিক ভাগও নিতে পারেন। এরপর প্রতিষ্ঠানগুলো পশু জবাই করে ভাগদাতার মাংস বাসায় কিংবা কাছাকাছি আউটলেটে সরবরাহ করবে।
এ ভাগে কোরবানির এ বছর প্রথম নয়। কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বেশ কয়েক বছর থেকে এ আয়োজন করে আসছে কোরবানি ঈদে। তবে এ আয়োজন বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে করোনাকালীন কোরবানিতে। সেসময় প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে। বেড়েছে ভাগে কোরবানির চাহিদাও।
আরও পড়ুন>> যাদের কোরবানি কবুল হবে না
প্রতিবারের মতো এবারও অনেক প্রতিষ্ঠান ভাগে কোরবানির পশু বিক্রি করছে। এর মধ্যে বেঙ্গলমিট, ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম দারাজ, প্রিয়শপডটকম, ডিজিটাল হাট, মাদল উল্লোখযোগ্য। এছাড়া ছোট ছোট অনেক অনলাইনে এবার ভাগে কোরবানি দেওয়ার সুযোগ থাকছে। আবার দেশের অনেক খামারের অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোতেও ভাগে কোরবানির প্রচারণা চলছে এখন।
বেঙ্গলমিটের হেড অব মার্কেটিং শেখ ইমরান আজিজ জাগো নিউজকে বলেন, শেয়ারড (ভাগে) কোরবানির এ আয়োজন বেঙ্গলমিট ৯ বছর ধরে করে আসছে। এ ধারণা আমাদের প্রথম। এ আয়োজনের অভিজ্ঞতা বলছে, ভাগে কোরবানির প্রবণতা বাড়ছে। মানুষ নিজের প্রয়োজনের মাংসটুকু ঘরে বসে পেয়ে যাচ্ছেন, যা শহুরে জীবনের জন্য এখন কঠিন।
আরও পড়ুন>> কোরবানির পশু কখন জবাই করবেন?
এ বছর ভাগে কোরবানির আয়োজন কেমন জানতে চাইলে ইমরান আজিজ বলেন, এখন পর্যন্ত ভালো সাড়া রয়েছে। তবে চূড়ান্ত বোঝা যাবে আগামী সপ্তাহে। ভাগে কোরবানির সংখ্যা আমাদের প্রক্রিয়াকরণ ক্ষমতার ওপর নির্ভর করে। ফলে চাহিদা থাকলেও পাঁচশোর বেশি কোরবানি করা যায় না।
জানা গেছে, বেঙ্গলমিট এবার প্রতিটি গরুকে ৭ ভাগে বিক্রি করছে। তবে একজন চাইলে একাধিক ভাগ দিতে পারবেন। কোরবানির দিন ফুল প্রসেস করে মাংস ডেলিভারি দেওয়া হবে ক্রেতার নিকটস্থ বেঙ্গলমিটের আউটলেটে। এজন্য কোরবানির আগে ওয়েবসাইটে (qurbani.bengalmeat.com) গিয়ে অর্ডার দিতে হবে। সঙ্গে কার নামে কোরবানি হবে, তা জানিয়ে বুকিং দিতে হবে। টাকা পরিশোধ করা যাবে যেকোনো ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে। আবার শপে গিয়ে ক্যাশ পেমেন্টেরও সুবিধা রয়েছে।
আরও পড়ুন>> কোরবানি করতে পারবেন কতদিন?
ভাগে কোরবানির খরচ প্রসঙ্গে ইমরান আজিজ বলেন, সেটা নির্ভর করবে ক্রেতা কোন পশুতে ভাগ দেবেন, তার ওপর। অর্থাৎ ওই পশুর দামের যে কয়ভাগ তিনি দেবেন, সেই দামই দিতে হবে। আমরা শুধু পশুর দামের ওপর নির্ভর করে এর প্রসেসিংয়ের ফি নেই। সেটা কোরবানির পরে স্ট্যান্ডার্ড প্রসেসিং করে ফুড গ্রেড প্যাকেটে পৌঁছে দেওয়া হয়। আমরা সবসময় চেষ্টা করি সবার জন্য হালাল, ঝামেলামুক্ত ও নিরাপদ কোরবানি সার্ভিস দেওয়ার।
অতিরিক্ত সেবা হিসেবে আবার কিছু প্রতিষ্ঠান ফুল প্রসেসিং সার্ভিস, স্লটারিং সেবা দিচ্ছে। এসব অনলাইন প্রতিষ্ঠান থেকে কোরবানির পশু কিনে কসাই খরচ ও সার্ভিস চার্জ দিলে ওই প্রতিষ্ঠান কোরবানি সম্পন্ন করে মাংস প্রসেস করে বাসায় পৌঁছে দেবে।
আরও পড়ুন>> কোরবানি ওয়াজিব না সুন্নত?
এ সেবা কয়েক বছর ধরে দিচ্ছে মাদল। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার মাসুমা খাতুন জাগো নিউজকে বলেন, ভাগে কোরবানির এ আয়োজন কোনো লাভজনক ব্যবসা নয়। ধর্মীয় দিক চিন্তা করে সেবা দেওয়ার জন্য এটা করা হচ্ছে। এতে নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের জন্য সুবিধা হচ্ছে। অনেকে কোরবানি দিতে আগ্রহী হচ্ছে, যারা প্রকাশ্যে ভাগে কোরবানি দিতে চান না।
সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে আয়োজিত অনলাইন পশুর হাট ‘ডিজিটাল হাট’ও এবার কোরবানি পশুর ফুল প্রসেস সেবা দিচ্ছে। এ উদ্যোগের সঙ্গে জড়িত ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের ও এটুআই। এখানে আবার অনেক ক্রেতা নিজেরা সংগঠিত হয়ে একসঙ্গে ৭ বা ৫ নাম পাঠিয়ে গরুর মূল্য, কসাই খরচ ও সার্ভিস চার্জ পরিশোধ করে ভাগে কোরবানি দিচ্ছে। এতে ডিজিটাল হাট কোরবানিসহ মাংস প্রসেস করে দেবে।
এনএইচ/এএএইচ/এমএস