মেসেঞ্জারে ফিশিং লিংক দিয়ে আইডি হ্যাক, হাতিয়ে নিতো লাখ লাখ টাকা
‘আপনার ছবি ব্যবহার করে কে বা কারা অশ্লীল ভিডিও তৈরি করে পোস্ট করছে’- এ ধরনের থাম্বনেলসহ ফিশিং লিংক তৈরি করে টার্গেটে থাকা ব্যক্তির ফেসবুক আইডির মেসেঞ্জারে পাঠানো হতো। পরে ভুক্তভোগী ব্যক্তি আগ্রহ নিয়ে ওই লিংকে ঢুকতেই তার ফেসবুক আইডি চলে যেতো প্রতারকের নিয়ন্ত্রণে। এভাবেই বিভিন্ন ব্যক্তির ফেসবুক আইডি হ্যাক করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল প্রতারক।
এমনই এক চক্রের মূলহোতা মো. আলমগীর সরদার (২৪) নামের এক ব্যক্তিকে খুলনার পাইকগাছা থানাধীন বৃত্তি গোপালপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তিনি পাইকগাছা থানা এলাকার বাসিন্দা।
গ্রেফতারকালে ওই ব্যক্তির কাছ থেকে হ্যাকিংয়ের কাজে ব্যবহৃত একাধিক ডিভাইসসহ বিভিন্ন ব্যক্তির নামে নিবন্ধিত অনেকগুলো মোবাইল সিম উদ্ধার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) সিআইডি সিপিসির সাইবার ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড অপারেশন বিভাগের একটি টিমের অভিযানে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
গোয়েন্দা পুলিশ জানিয়েছে, ভুক্তভোগীদের পরিচিতজনদের কাছে বিভিন্ন কৌশলে অর্থ দাবির প্রক্রিয়া শুরু করতেন আলমগীর। হ্যাক করা ফেসবুক আইডির মেসেঞ্জার থেকে ফ্রেন্ডলিস্টে যুক্ত বিভিন্ন আইডির মেসেঞ্জারে ‘আমার স্ত্রী অসুস্থ, আমার টাকা দরকার। কয়েকটি নম্বরে কিছু টাকা পাঠাও’সহ আরও বিভিন্ন ধরনের সাজানো মেসেজ পাঠিয়ে অর্থ চাইতেন। এছাড়াও ভুক্তভোগীদের কাছে হ্যাক করা ফেসবুক আইডি ফেরত দেওয়ার কথা বলে অর্থ দাবি করতেন তিনি। এভাবে হ্যাকার আলমগীর হাতিয়ে নিতেন লাখ লাখ টাকা।
এক পর্যায়ে হ্যাকিংয়ের শিকার এক ভুক্তভোগী চক্রটির বিরুদ্ধের সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারের (সিপিসি) সাইবার সাপোর্ট ইউনিটে অভিযোগ করেন। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে সিপিসি বিষয়টি পর্যবেক্ষণ এবং অনুসন্ধান করে। পরে হ্যাকার আলমগীরকে শনাক্তের পর অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার আজাদ রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ২০২১ সালের জুন থেকে আলমগীর ফ্ল্যাক্সিলোডসহ বিকাশ ও অন্যান্য এমএফএস’র ব্যবসা শুরু করেন। ব্যবসার পাশাপাশি তিনি ফ্রি ফায়ার গেমের প্রতি আসক্ত হন এবং এক পর্যায়ে হ্যাকিংয়ের প্রতি তার আগ্রহ বাড়তে থাকে। অনলাইন থেকে হ্যাকিং সংক্রান্ত বিভিন্ন কৌশল রপ্ত করেন এবং বিভিন্ন ভুক্তভোগীর ফেসবুক আইডির মেসেঞ্জারে ফিশিং লিংক পাঠিয়ে তাদের ফেসবুক আইডি নিয়ন্ত্রণে নেন আলমগীর।
তিনি বলেন, ভুক্তভোগীর পরিচিতদের ফেসবুক মেসেঞ্জারে বানানো তথ্য পাঠিয়ে অর্থ সাহায্য চাওয়াসহ ভুক্তভোগীর কাছে তার হ্যাক করা ফেসবুক আইডি ফেরত দেওয়ার কথা বলে অর্থ দাবি করতে থাকেন। এখন পর্যন্ত তিনি বিভিন্ন ভুক্তভোগীকে হ্যাকিংয়ের ফাঁদে ফেলে কৌশলে বিকাশ ও অন্যান্য এমএফএস নম্বরে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে সিআইডির জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন।
গ্রেফতার ব্যক্তির বিরুদ্ধে রাজধানীর পল্টন মডেল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে বলেও জানান সিআইডির এ কর্মকর্তা।
আরএসএম/এমকেআর/জেআইএম