বাজেটে কি উপেক্ষিত হলো সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী?

সাইফুল হক মিঠু
সাইফুল হক মিঠু সাইফুল হক মিঠু
প্রকাশিত: ০৮:৪৫ পিএম, ১৩ জুন ২০২৩

করোনা-পরবর্তী ইউরোপ যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দরিদ্র ও অতিদরিদ্র মানুষ। নতুন বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে যদিও বাড়তি এই বরাদ্দকে শুভঙ্করের ফাঁকি বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ১ লাখ ২৬ হাজার ২৭২ কোটি টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে, যা ২০২২-২৩ অর্থবছরের চেয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ বেশি। যদিও সরকারি কর্মচারীদের পেনশনের অর্থ এই বরাদ্দে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকার সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ রেখেছিল ১ লাখ ১৭ হাজার ৬৩৪ কোটি টাকা। যেখানে সরকারি পেনশন ছিল ২২ হাজার ১০ কোটি টাকা। চলতি বছর সরকারি পেনশনের অর্থ ৫ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে ২৭ হাজার ৪১৪ কোটি টাকা করা হয়েছে।

গত ১ মে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করেন।

আরও পড়ুন: বঞ্চিত বাঙালির মুখে এখন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির হাসি

বাজেট বিশ্লেষণে দেখা যায়, হতদরিদ্রদের জন্য সরকারের নেওয়া বিভিন্ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ কমেছে প্রস্তাবিত বাজেটে।

খোলাবাজারে বিক্রি বা ওপেন মার্কেট সেলসে (ওএমএস) ২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকারের বরাদ্দ ছিল ১ হাজার ৫৪২ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত বাজেটে যা ১ হাজার ৮৯ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। যেখানে বরাদ্দ কমেছে ২৯ দশমিক ৩ শতাংশ।

গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বলছে, সামাজিক নিরাপত্তার আওতাভুক্ত ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিংয়ে (ভিজিএফ) ২০২২-২৩ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ২ হাজার ১০৭ কোটি টাকা, যা ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ কমিয়ে নতুন বাজেটে করা হয়েছে ১ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা।

আরও পড়ুন: অসহায় মানুষের সামাজিক নিরাপত্তা বিধানে কাজ করছে সরকার

একইভাবে হতদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান সৃজন কর্মসূচি বা ইজিপিপিতে ২০২২-২৩ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ২ হাজার ৩৩৮ কোটি টাকা, যা ৯ দশমিক ৮ শতাংশ কমিয়ে ২ হাজার ১১০ কোটি টাকা করা হয়েছে।

বাজেটে দরিদ্র ও হতদরিদ্র মানুষের জন্য অপর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে মনে করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের মনিটরিং বাড়ানো প্রয়োজন বলেও জানান তিনি।

SS-2.jpg

জাগো নিউজকে তিনি বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী আরও জোরদার করতে হবে। সামাজিক নিরাপত্তার জন্য সরকার যে বরাদ্দ রেখেছে, তা অপ্রতুল বলে মনে করি। গরিব মানুষের কাছে নগদ টাকা থাকার ব্যবস্থা করতে হবে।

তিনি বলেন, নিম্নমধ্যবিত্ত ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনযাপনের মান অনেক নিচে নেমে যাচ্ছে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙে পড়লে অস্থিরতা আরও বাড়বে।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। যদিও এখাতে বরাদ্দ আরও বাড়ানো অনেক বেশি প্রয়োজন ছিল। বর্তমানে যে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ চলছে তার অভিঘাতটা দরিদ্র ও অতি দরিদ্র মানুষের ওপর পড়ছে। মূল্যস্ফীতির অভিঘাত মোকাবিলায় সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে বরাদ্দ বাড়ানোর প্রয়োজন ছিল।

আরও পড়ুন: কম খাচ্ছেন নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ

তিনি বলেন, সরকারি পেনশনের টাকা সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যেটা আসলে বেষ্টনীতে থাকার কথা নয়। এটা অন্তর্ভুক্ত থাকার ফলে পরিমাণটা বেশি দেখা যায়। এবারও পেনশনের ২৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে, যা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তা একেবারেই পর্যাপ্ত নয়। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর বরাদ্দ ও আওতা দুটোরই বাড়ানো প্রয়োজন।

জানতে চাইলে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফোরামের প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট সাইদুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় দেশে দরিদ্র ও অতি দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেড়ে গেছে। গরিব মানুষ কিনতে পারছে না। এমন অবস্থায় সেফটি নেটে বরাদ্দ ও আওতা বাড়বে বলে আশা করেছিলাম।

আরও পড়ুন: এ অর্থবছরেই সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করা সম্ভব: অর্থমন্ত্রী

তিনি বলেন, এত টাকা ঋণ পরিশোধ ও জনপ্রশাসনে বরাদ্দ করলো। অথচ গরিব মানুষের জন্য বরাদ্দ খুব কমই বাড়লো। এটা গরিবকে আরও গরিব করবে, অসহায় করবে। সে কিনতে পারবে না। ভিক্ষুকের সংখ্যা বাড়বে, গরিব মানুষের সংখ্যাও বাড়বে।

এসএম/এসএইচএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।