সমুদ্র দূষণে মানুষ সবচেয়ে বেশি দায়ী
সুবিশাল লবণাক্ত জলরাশির আধার হলো সমুদ্র, যা পৃথিবীর চার ভাগের প্রায় তিন ভাগজুড়ে বিস্তৃত। এর দূষণের কারণসমূহ খুঁজে বের করেছে বাংলাদেশ ওশান গ্রাফিক ইনস্টিটিউট।
নানা কারণে সামুদ্রিক পরিবেশের দূষণ হতে পারে। প্রাকৃতিক কারণে কিছু কিছু দূষণের চিত্র পাওয়া গেলেও সবচেয়ে বেশি সমুদ্র দূষণের জন্য দায়ী মানুষ, অর্থাৎ মানব সৃষ্ট কারণসমূহ।
বাংলাদেশ ওশান গ্রাফিক ইনস্টিটিউটের সামুদ্রিক পরিবেশ ও জলবায়ু বিভাগের প্রধান ঊর্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবু শরীফ মো. মাহবুব ই কিবরিয়া বলেন, সামুদ্রিক পরিবেশ নিয়ে কাজ করার সুবাদে অনেক দূষণ চিত্র স্বচক্ষে দেখি। সমুদ্রের দূষণ জনিত অবস্থার ওপর আলোকপাত করলে আমাদের প্রকৃত বাস্তবতা বুঝতে অনেক সহজ হবে বলে আমার মনে হয়। দূষণকারী উপাদানসমূহ পানির স্বাভাবিক বৈশিষ্টগুলোকে পরিবর্তন করে সামুদ্রিক জীবের জন্য একটি মৃত্যুফাঁদ তৈরি করে থাকে। মূলত এ উপাদানগুলো পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন ও হাইড্রোজেনের ঘণমাত্রাকে প্রভাবিত করে। কিছু কিছু দূষণকারী উপাদান সমুদ্রের পানির সঙ্গে বিক্রিয়া করে পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ একেবারেই কমিয়ে দেয়।
তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে, দ্রবীভূত অক্সিজেনের হ্রাস জৈব উপাদানগুলির ওপর ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ থেকে উদ্ভূত হয়, কারণ এরা শ্বাস-প্রশ্বাস প্রক্রিয়ায় অক্সিজেন ব্যবহার করে। অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে যেমন সামুদ্রিক মাছের জন্য শ্বাসরোধকর পরিবেশের উদ্ভব হয়, তেমনি বিষাক্ত সালফাইড সামুদ্রিক জীবের জন্য ভয়ংকর দূষিত পরিবেশ সৃষ্টি করে। অবস্থার আরও অবনতি হলে শুধু যে মাছই মারা যায় তা নয় বরং অনেক দূষণ-প্রতিরোধী অমেরুদণ্ডী প্রাণীরও বেঁচে থাকা একেবারেই কঠিন হয়ে পড়ে।
বাংলাদেশ ওশান গ্রাফিক ইনস্টিটিউট জানায়, সামুদ্রিক পরিবেশে উপস্থিত বিষাক্ত পদার্থ গ্রহণের ফলে জীবের তাৎক্ষণিক মৃত্যু হতে পারে, যদিও এটা নির্ভর করে বিষের শক্তিমাত্রা ও বিষ শরীরে ছড়িয়ে যাওয়ার সময়-সীমার ওপর। বিষাক্ত পদার্থগুলো সর্বপ্রথম জীবের শারীরবৃত্তীয় পীড়ন বাড়িয়ে দিয়ে এক ধরনের উত্তেজনা ও অতিসক্রিয়তা তৈরি করে। পরবর্তিতে শারীরিক বৈক্লব্যতা প্রকাশ পায় এবং অবশেষে মৃত্যু বরণ করে। জীবের ওপর বিষক্রিয়ার প্রভাব প্রজাতি ভেদে ভিন্ন ভিন্নভাবে প্রতিভাসিত হয়। মাছের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গসমূহ যেমন যকৃত, কিডনি, প্লীহা মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বিকল হতে পারে।
বাংলাদেশ ওশানগ্রাফিক ইনস্টিটিউটের সামগ্রিকভাবে বিশ্লেষণে দেখা যায়, সামুদ্রিক পরিবেশের দূষণের কারণে সামুদ্রিক জীবের ওপর যে বিরূপ প্রভাব পড়ছে তা মানুষের ক্ষতির কারণ হয়েই ফিরে আসছে। গবেষণায় দেখা যায়, সমুদ্রজাত বিভিন্ন খাবারে দূষণকারী বস্তুর উপস্থিতি, যা মানুষের পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাদ্যগ্রহণ প্রক্রিয়াকে ব্যহত করছে।
এমওএস/এমআইএইচএস/এমএস