বাজেটে ১১ প্রস্তাব পুনর্বিবেচনার দাবি বাজুসের
নতুন অর্থবছরের (২০২৩-২৪) বাজেটে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) পক্ষ থেকে জানানো ১২টি দাবির মধ্যে ১১টিই বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। এই ১১ দাবি পুনর্বিবেচনার দাবি জানাচ্ছে জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের সংগঠনটি।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে সোমবার (৫ জুন) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জনানো হয়। বাজুস কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির সহ-সভাপতি ও স্ট্যান্ডিং কমিটি অন ট্যারিফ অ্যান্ড ট্যাক্সেশনের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন, বাজুসের উপদেষ্টা রুহুল আমিন রাসেল, বাজুসের সহ-সম্পাদক ও স্ট্যান্ডিং কমিটি অন ট্যারিফ অ্যান্ড ট্যাক্সেশনের ভাইস চেয়ারম্যান সমিত ঘোষ অপু, স্ট্যান্ডিং কমিটি অন ট্যারিফ অ্যান্ড ট্যাক্সেশনের সদস্য সচিব পবন কুমার আগরওয়াল।
সংবাদ সম্মেলনে বাজুসের পক্ষ থেকে দাবিসমূহ তুলে ধরেন সংগঠনটির সহ-সভাপতি ও স্ট্যান্ডিং কমিটি অন ট্যারিফ অ্যান্ড ট্যাক্সেশনের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে আশার আলো দেখা গেলেও, জুয়েলারি শিল্পের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। তবে ব্যাগেজ রুলের সংশোধন করায় প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি। দেশের অর্থ দেশে রাখার এই আন্তরিক প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানান আনোয়ার হোসেন।
তিনি বলেন, আমরা আশা করছি ব্যাগেজ রুল সংশোধন করায়, এদেশে সোনা চোরাচালান এবং মুদ্রা পাচার অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। কারণ ব্যাগেজ রুলের সুবিধা নিয়ে এর আগে অবাধে সোনার বার বিদেশ থেকে দেশে প্রবেশ করছে। চোরাচালানের মাধ্যমে বিদেশে পাচার হয়। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। অর্থমন্ত্রীর এই যুগান্তরকারী পদক্ষেপ বৈধভাবে সোনা আমদানিকে উৎসাহিত করবে।'
ব্যাগেজ রুলের আওতায় বিদেশ থেকে আনা গয়নার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সীমা ১০০ গ্রাম থেকে কমিয়ে ৫০ গ্রাম করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, এতে স্থানীয় সোনা শিল্পীদের স্বার্থ রক্ষার পাশাপাশি স্থানীয় জুয়েলারি শিল্পের দিকে ক্রেতা সাধারণ আকৃষ্ট হবে। স্থানীয় স্বর্ণ শিল্পীদের বাঁচানোর জন্য এই পদক্ষেপ সময়ের দাবি। বাংলাদেশের স্বর্ণ শিল্পীদের হাতে তৈরি গয়না স্থানীয় ও বিশ্ব বাজারে সমানভাবে সমাদৃত হয়ে থাকে। তাই স্থানীয় স্বর্ণ শিল্পীদের টিকিয়ে রাখার জন্যে সরকারের এই পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
আনোয়ার হোসেন বলেন, প্রাক-বাজেট সংবাদ সম্মেলনে আমরা ১২টি প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলাম। যা ছিল আমাদের জুয়েলার্স মালিকদের আশার প্রতিফলন। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে আমাদের ১২টি প্রস্তাবের ১টি বাদে অন্য কোনো প্রস্তাবই সংযুক্ত হয়নি। যা শুধু আমাদের আশাহতই করেনি, পাশাপাশি জুয়েলারি শিল্পকে হুমকির মুখে ফেলেছে। এ সময় বাজুসের ১১টি প্রস্তাব পুনর্বিবেচনার দাবি করেন তিনি।
বাজুসের এই ১১ প্রস্তাব হলো-
>> সোনা, সোনার অলংকার, রুপা বা রুপার অলংকার বিক্রির ক্ষেত্রে আরোপিত ভ্যাট হার ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করা।
>> ইএফডি মেশিন যতো দ্রুত সম্ভব নিবন্ধন করা সকল জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানে বিতরণ করতে হবে।
>> অপরিশোধিত আকরিক সোনার ক্ষেত্রে আরোপিত সিডি ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে আমদানি শুল্ক শর্তসাপেক্ষে ১ শতাংশ নির্ধারণ করা।
>> আংশিক পরিশোধিত সোনার ক্ষেত্রে সিডি ১০ শতাংশের পরিবর্তে আইআরসি ধারী এবং ভ্যাট কমপ্লায়েন্ট শিল্পের জন্য শুল্ক হার ৫ শতাংশ করা।
>> হীরা কাটিং এবং প্রক্রিয়াজাত করণের উদ্দেশ্যে যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান দ্বারা আমদানি করা রাফ ডায়মন্ডের সিডি ২৫ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ করা, এসডি ২ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ করা। এছাড়া ভ্যাট, এআইটি, আরডি এবং এটি অপরিবর্তিত রাখা।
>> বৈধ পথে মসৃণ হীরা আমদানি উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান দ্বারা আমদানি করা মসৃন হীরার এসডি ৬০ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ করা।
>> আয়কর আইনে ৪৬-(বিবি) (২) ধারার অধীনে সোনা পরিশোধনাগার শিল্পে ১০ বছরের জন্য কর অবকাশ সুবিধা দেওয়া।
>> সোনার অলংকার প্রস্তুত করার উদ্দেশ্যে আমদানি করা কাঁচামাল ও মেশিনারিজের ক্ষেত্রে সকল প্রকার শুল্ক কর অব্যাহতি প্রদানসহ ১০ বছরের জন্য কর অবকাশ সুবিধা দেওয়া।
>> বৈধভাবে সোনার বার, সোনার অলংকার, সোনার কয়েন রপ্তানি উৎসাহিত করতে কমপক্ষে ২০ শতাংশ ভ্যালু এডিশন করা শর্তে, রপ্তানিকারকদের মোট ভ্যালু এডিশন ৫০ শতাংশ হারে আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া।
>> এইচ এস কোড ভিত্তিক অস্বাভাবিক শুল্ক হার হ্রাস করে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে শুল্ক হার সমন্বয়সহ এসআরও সুবিধা দেয়া।
>> মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০২২ ধারা-১২৬ক অর্থ আইন,২০১৯ (২০১৯ সালের ১০নং আইন) এর ১০২ ধারা বলে, চোরাচালান প্রতিরোধ করতে গিয়ে কাস্টমস কর্তৃপক্ষসহ সকল আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উদ্ধার করা সোনার মোট পরিমাণের ২৫ শতাংশ সংস্থাগুলোর সদস্যদের পুরস্কার হিসেবে দেওয়া।
এমএএস/এসএনআর/এএসএম