‘যত বিপদে ফেলার চেষ্টা করেছে তত আমার মঙ্গল হয়েছে’

সায়েম সাবু
সায়েম সাবু সায়েম সাবু , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:১৬ পিএম, ০৩ জুন ২০২৩
বিদিশা এরশাদ/ ছবি: মাহবুব আলম

বিদিশা এরশাদ। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। চেয়ারম্যান, জাতীয় পার্টি পুনর্গঠন প্রক্রিয়া। মুখোমুখি হন রাজনীতির সমসাময়িক প্রসঙ্গ নিয়ে। দীর্ঘ আলোচনায় তুলে ধরেন ব্যক্তিজীবনের নানা চ্যালেঞ্জের কথা। দুই পর্বের সাক্ষাৎকারের আজ থাকছে প্রথমটি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সায়েম সাবু।

জাগো নিউজ: ফের আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ। এবার নারী নির্যাতনের। প্রেসিডেন্ট পার্কে এক নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে আপনার বিরুদ্ধে। এ প্রসঙ্গে আপনার বক্তব্য জানতে চাই।

বিদিশা এরশাদ: গুলশান থানায় একজন নারী এমন অভিযোগ করতে গিয়েছিলেন বলে জানতে পেরেছি। কিন্তু গুলশান থানা এমন অভিযোগ নেয়নি কেন? কূটনৈতিক জোনে এমন মারাত্মক অভিযোগ!

‘যত বিপদে ফেলার চেষ্টা করেছে তত আমার মঙ্গল হয়েছে’

আসলে এবার গল্পটা ভালো করে বুনতে পারেনি। আরও সুন্দর করে লিখতে পারতো। এ কারণেই মনে হয় গুলশান থানাকে কনভিন্স করতে পারেনি। কারণ ন্যূনতম প্রমাণ লাগে তো।

জাগো নিউজ: ধর্ষণের মতো অভিযোগকে আপনি গল্প বলছেন কেন? মিডিয়ায়ও নিউজ হয়েছে?

বিদিশা এরশাদ: ব্যাঙের ছাতার মতো অনলাইন। সব সাংবাদিক সমান দায়িত্ব নিয়ে কাজ করেন না। অনেকেই সাংবাদিকতায় পড়াশোনা করেও এ পেশায় আসে না।

আমি এরিক এরশাদের বাসায় এখন অবস্থান করছি। এটি একটি ট্রাস্টের সম্পদ। ট্রাস্টের আগের যে চেয়ারম্যান তাকে এরিক বরখাস্ত করেছে। কিন্তু তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে এরিককে বাসাটি বুঝিয়ে দেননি। বুঝিয়ে দিতেও চাইছেন না। প্রকাশ্যে আমার বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। আজে-বাজে কথা বলেছেন। এরিক একজন স্পেশাল চাইল্ড। তাকে নিয়েও উল্টা-পাল্টা বুঝিয়ে আমার বিরুদ্ধে নানা কথা বলিয়েছেন।

এ বাসায় কাজের লোক, ড্রাইভার থাকতে পারে না। তাদের মনিটরিং করা হয়। তাদের নেশাই হচ্ছে কীভাবে আমাকে বিতাড়িত করবে, মানসম্মান ক্ষুণ্ন করবে।

জাগো নিউজ: এরিক ট্রাস্টের মালিক। আপনি এরিকের মা। কর্তৃত্ব আপনাদের থাকার কথা।

বিদিশা এরশাদ: এই ট্রাস্টের একমাত্র সুবিধা ভোগ করার কথা। এরিক এখানে সব ক্ষমতার মালিক। আমি নিজেও না। কিন্তু বাতিল হওয়া চেয়ারম্যান কর্তৃত্বটা ঠিক দিতে চাইছেন না। আমরা তাদের বুঝিয়েছি। এরিক যে সিদ্ধান্ত নেবে সেটাই ফাইনাল। এরপরেও ট্রাস্টের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে এরিককে বুঝিয়ে দেওয়ার একটা ব্যাপার থাকে। এটি তারা দিতে চাইছে না। ব্যাংক হিসাব বন্ধ। এরিক ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে পারছে না প্রায় দশ মাস হয়ে গেছে। আমার ছেলে এরিকের পেটে লাথি মারা হচ্ছে।

জাগো নিউজ: আইনি সমাধান নেই?

বিদিশা এরশাদ: অবশ্যই আছে। ওরা ভাবছে আমি নারী মানুষ। চাপ দিয়ে, মানসিকভাবে ও রাজনৈতিকভাবে প্ল্যাটফর্ম ভেঙে দিয়ে সুবিধা নিতে চাইছে।

জাগো নিউজ: ধর্ষণের অভিযোগ মিথ্যা হলে আপনি আইনের আশ্রয় নিচ্ছেন না কেন?

বিদিশা এরশাদ: এটি থানা-পুলিশের ব্যাপার। আমি থানাকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বলেছি। মিডিয়াকে বলছি। এই চক্রের বিরুদ্ধে একের পর এক জিডি করেছি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করেছি।

‘যত বিপদে ফেলার চেষ্টা করেছে তত আমার মঙ্গল হয়েছে’

জাগো নিউজ: চক্রের কথা বলছেন। দলের মধ্যে থেকে এমন চক্র কাজ করছে কি না?

বিদিশা এরশাদ: না। দলের মধ্যে থেকে এটি করছে না। একদম ট্রাস্টের সঙ্গে যারা যুক্ত ছিলেন, তারাই এরিকের সম্পদ ভোগ করার জন্য এমন ষড়যন্ত্র করছেন। ট্রাস্টের নামে একটি কোল্ডস্টোরেজ আছে রংপুরে। সেখান থেকে একটি টাকাও এরিক এখন পর্যন্ত পায়নি। এরিকের এফডিআরগুলো আটকে আছে। সেখান থেকে একটি টাকাও এরিক তুলতে পারছে না। একটি দোকান আর ফ্ল্যাটভাড়া ছাড়া এরিক কোনো টাকা তুলতে পারছে না। যত ব্যয়, তা আমাকেই করতে হয়। আমি তো মা। আমাকে করতেই হবে। আমার নিজের সম্পত্তি বিক্রি করে হলেও করতে হবে।

দেখুন, মেয়েটি যে সময় ধরে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে, সে সময় আমি হাসপাতালে। আমার গলব্লাডারের অপারেশন তখন। আমি কোথাও গেলে সবাই অবগত হন। আমি কূটনৈতিক এলাকায় থাকি। ওমরা করতে গেলেও আমি সবাইকে বলে যাই। গুলশান পুলিশ সব জানে প্রেসিডেন্ট পার্ক সম্পর্কে।

এই মেয়েকে আমি কখনই চিনি না। সে কখনই এখানে চাকরি করেনি। সত্যি কথা বলতে কী, মিথ্যা ষড়যন্ত্র করে আমাকে দমানোর বহু চেষ্টা করা হয়েছে। পারেনি। ভবিষ্যতেও পারবে না ইনশাল্লাহ।

জাগো নিউজ: শক্তি কই পান?

বিদিশা এরশাদ: মহান আল্লাহ আমার শক্তি। কারণ আমি জীবনে কখনও পাপ করিনি। আমার জানা মতে কোনো অন্যায় করিনি। যত বিপদে ফেলার চেষ্টা করেছে তত আমার মঙ্গল হয়েছে।

শক্তি আর সততা দিয়ে মোকাবিলা করলে সব ষড়যন্ত্র পায়ে মাড়ানো যায়। কৌশলও থাকতে হবে। আর এখন হচ্ছে ডিজিটাল যুগ। আপনি যা-তা গল্প বানিয়ে দিলেই মানুষ বিশ্বাস করবে না। আপনাকে তো প্রমাণ করতে হবে। একজন নারী হওয়ার কারণেই আমাকে বারবার বদনাম নিতে হয়েছে।

একটি দৈনিকের প্রথম পাতায় আমার সুইমিং স্যুটের ছবি দিয়ে বেইজ্জতি করা হলো, তখনই আমি ধরে নিয়েছি আমাকে এর মধ্যে দিয়েই চলতে হবে। অনেকেই বলেছিলেন, আপনি বলুন এই ছবি আপনার না। আমার বাবা বলেছিলেন, আমার মেয়ে মিথ্যা বলে না। বাবা জানতে চাইলেন এই ছবি কোথায় তোলা। আমি বললাম, গ্রিসে হানিমুনে তোলা। আগের স্বামীর সঙ্গে। বাবা বললেন, সব সত্য বলে দাও।

রিমান্ডে নিয়ে আমার নখ উপড়ে ফেলা হয়েছিল। এরপরেও আমি কোনো মিথ্যা জবানবন্দি দেইনি। এখন তারা আর কী করতে পারবে? এরিকের সম্পত্তির জন্য এত লোভ! আমাকে নিয়ে তাদের এত ভয়! তারা বোঝে না যে আমার ব্যাকআপ প্ল্যাটফর্ম আছে। আমার পার্টি থেকে পাঁচজন চলে যাচ্ছে বলেই সব শেষ হয়ে গেলো না।

জাগো নিউজ: কী ব্যাকআপ প্ল্যাটফর্ম আছে আপনার?

বিদিশা এরশাদ: প্রত্যেকেরই নিজস্ব শক্তি আছে। এটিই চালিকাশক্তি। আমার ব্যাকআপ কী, তা সবাইকে জানাই না। কারণ তারা আবার সেখানে গিয়ে ডিস্টার্ব করবে। কাজের মেয়ে পর্যন্ত থাকতে পারে না এই চক্রের কারণে।

জাগো নিউজ: আপনি মোকাবিলা করতে পারছেন। অন্য নারীদের বেলায় কী বলবেন?

বিদিশা এরশাদ: বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নারীর এগিয়ে যাওয়া খুবই কঠিন। বিশ্বাস করুন, নারীকে বেঁচে থাকা পর্যন্ত যুদ্ধ করতে হয়। যদিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীর জীবনকে অনেক সহজ করে দিয়েছেন।

এরপরেও মনে হয় পুরুষ ছাড়া বাঁচা যাবে না! পুরুষ ছাড়া চলবে না আমাদের? আমিও ফিল করি। ফিল করি না বললে মিথ্যা কথা বলা হবে। যেমন কর্মচারীরা একজন পুরুষের কথা শুনবেন। আমার কথা কম শুনবেন। এরপরেও আমাকে ম্যানেজ করে চলতে হবে। আমি পুরুষদের রেসপেক্ট করি। আমি পুরুষবিদ্বেষী নই। আমার বাবা আছেন, ভাই আছেন। আমার ঘরে ছেলে সন্তান আছে।

এএসএস/এএসএ/জেআইএম

একটি দৈনিকের প্রথম পাতায় আমার সুইমিং স্যুটের ছবি দিয়ে বেইজ্জতি করা হলো, তখনই আমি ধরে নিয়েছি আমাকে এর মধ্যে দিয়েই চলতে হবে। অনেকেই বলেছিলেন, আপনি বলুন এ ছবি আপনার না। আমার বাবা বলেছিলেন, আমার মেয়ে মিথ্যা বলে না। বাবা জানতে চাইলেন এ ছবি কোথায় তোলা। আমি বললাম, গ্রিসে হানিমুনে তোলা। আগের স্বামীর সঙ্গে। বাবা বললেন, সব সত্য বলে দাও।

শক্তি আর সততা দিয়ে মোকাবিলা করলে সব ষড়যন্ত্র পায়ে মাড়ানো যায়। কৌশলও থাকতে হবে। আর এখন হচ্ছে ডিজিটাল যুগ। আপনি যা-তা গল্প বানিয়ে দিলেই মানুষ বিশ্বাস করবে না। আপনাকে তো প্রমাণ করতে হবে। একজন নারী হওয়ার কারণেই আমাকে বারবার বদনাম নিতে হয়েছে।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।