বাজেট গরিববান্ধব, সমালোচনা গৎবাঁধা: তথ্যমন্ত্রী
২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটকে গণমুখী ও গরিববান্ধব বলে অভিহিত করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। একই সঙ্গে তিনি বলেন, বাজেট নিয়ে সমালোচকদের সমালোচনা বরাবরের মতোই গৎবাঁধা ও গতানুগতিক।
শুক্রবার (২ জুন) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে সরকারি বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ কথা বলেন মন্ত্রী।
আরও পড়ুন: পুরো বাজেটই গরিবের জন্য উপহার: অর্থমন্ত্রী
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের টানা ১৫তম বাজেট এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০তম এই বাজেট ২০০৮-৯ সালের তুলনায় প্রায় নয়গুণ বড় এবং পিপিপিতে (পারচেজিং পাওয়ার প্যারিটি) ২০০৯ সালের ১০০ বিলিয়ন ডলার জিডিপির তুলনায় এখনকার জিডিপি এক ট্রিলিয়ন প্লাস ডলার, অর্থাৎ প্রায় দশগুণ বড়। যা নিঃসন্দেহে দেশের অগ্রগতি সমৃদ্ধির পরিচায়ক।
এবার বাজেট প্রণয়ন বড় চ্যালেঞ্জ ছিল উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিশ্বমন্দা, ইউক্রেন যুদ্ধ, ডলার সংকটের কারণে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে শৈথিল্য আসায় বাজেট প্রণয়ন চ্যালেঞ্জ ছিল।
তারপরও এবারের বাজেট গত বছরের তুলনায় প্রায় এক লাখ হাজার কোটি টাকা বেশি।
আরও পড়ুন: জনআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন নেই, ২০০০ টাকা ন্যূনতম কর ‘বৈষম্যমূলক’
প্রস্তাবিত এ বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম বৃদ্ধি করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে মোট বাজেটের ১৬ দশমিক ১৮ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আরও মানুষকে সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ে আনার এবং এ খাতে বিভিন্ন ভাতার পরিমাণ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, এই বাজেটের সবচেয়ে বড় উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে- এই অর্থবছরেই সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু হচ্ছে। যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চিন্তাপ্রসূত। কোনো রাজনৈতিক দল এ ধরনের সার্বজনীন পেনশন চালুর প্রস্তাব দেয়নি।
১৮-৫০ বছর বয়সের যে কেউ ১০ বছরের জন্য চাঁদা দিয়ে পেনশন ব্যবস্থার আওতায় আসতে পারবে জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ৫০ এর বেশি বয়স হলেও ১০ বছর চাঁদা দিয়ে পেনশনের সুযোগ রয়েছে।
আরও পড়ুন: আইএমএফের পরামর্শ শুনলে সফল হবো: অর্থমন্ত্রী
বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, আপনারা বিএনপির দাবি-দাওয়া জানেন। তাদের দাবিতে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য ও তারেক রহমানের মুক্তির বাইরে জনমানুষ নিয়ে কিছু থাকে না।
আয়কর নিয়ে প্রশ্নের জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশের কর ও জিডিপির অনুপাত দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বনিম্ন। গত ১৪ বছরে দেশের জিডিপি প্রায় দশগুণ, বাজেট প্রায় নয়গুণ বৃদ্ধি পেলেও আয়কর দেওয়ার হার বেড়েছে মাত্র তিনগুণ। ২০০৯ সালে ১১ লাখ মানুষ আয়কর দিতো, গত বছর ২৯ লাখ মানুষ আয়কর দিয়েছে। অথচ দেশে অন্তত দুই কোটি মানুষ আয়কর দিতে সক্ষম। কিন্তু মানুষ কর দেয় না। তাই করের আওতা বাড়ানো অযৌক্তিক নয়।
‘আইএমএফের প্রেসক্রিপশনে এ বাজেট লুটপাটের’- বিএনপির এমন সমালোচনা খণ্ডন করে মন্ত্রী বলেন, বিএনপির অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান আইএমএফের প্রেসক্রিপশনে বাজেট দিতে প্রতিবার বাজেটের আগে প্যারিস কনসোর্টিয়ামে ছুটে যেতেন সাহায্যের জন্য। বর্তমানে বাংলাদেশের বাজেট কোনোভাবেই বিদেশি সাহায্য নির্ভর নয়। এ বাজেটে ১ লাখ কোটি টাকার কিছু বেশি বৈদেশিক ঋণ নেওয়া হবে। বিএনপি লুটপাটে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন, তারা পরপর পাঁচবার দেশকে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন বানিয়েছিল।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বাজেটকে বাস্তববিবর্জিত বলেছে- এ নিয়ে প্রশ্নে তথ্যমন্ত্রী বলেন, গত ১৪ বছরে সিপিডি বাজেটের প্রশংসা করতে পারেনি। এবছর তো বাজেট প্রস্তাব অধিবেশন চলমান থাকা অবস্থায়ই তারা বলেছে, এই বাজেট উচ্চাভিলাষী, বাজেট বাস্তবায়ন হবে না।
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের চলতি বাজেট নিয়ে সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রী বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা থাকবে। ইতিবাচক সমালোচনাকে আমরা সবসময় স্বাগত জানাই।
আইএইচআর/জেডএইচ/এএসএম