আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে নেই চিরচেনা জটলা, জনমনে স্বস্তি
রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে এসেছেন ফরহাদ হোসেন। তিনি মালয়েশিয়ায় থাকেন। পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হওয়ায় দুদিন আগে দেশে এসেছেন। মাত্র এক ঘণ্টার ব্যবধানে তিনি ই-পাসপোর্টের সব কার্যক্রম সম্পন্ন করে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেন।
ফরহাদ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, একসময় আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে আসতে ভয় পেতাম। কারণ, লাইনে দাঁড়িয়ে সারাদিন পার করতে হতো। অনেক সময় ৮-৯ ঘণ্টা অপেক্ষা করেও ফিরে যেতে হয়েছে। এ নিয়ে এক ধরনের আতঙ্ক কাজ করতো। কিন্তু আজ দ্রুত সময়ে পাসপোর্ট করতে পারলাম। সব মিলিয়ে এক ঘণ্টা সময় লেগেছে।
মিরপুর ৬০ ফিট এলাকা থেকে পাসপোর্ট নবায়ন করতে এসেছেন বশির আহমেদ। তিনি সৌদি আরবে যাবেন। মাত্র দেড় ঘণ্টার মধ্যে ই-পাসপোর্টের সব কাজ সম্পন্ন করেছেন তিনি। বশির আহমেদ বলেন, এক বছর আগে আমার বড় ভাই পাসপোর্ট করিয়েছেন। সকাল থেকে সারাদিন লেগেছিল। ছবি ও ফিঙ্গার প্রিন্ট দিতেই চার ঘণ্টা লাইনে দাঁড়াতে হয়েছিল।
সোমবার (২২ মে) সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে চিরচেনা জটলা নেই। সব ফ্লোরে সবাই স্বস্তি নিয়ে ই-পাসপোর্ট করছেন। পাসপোর্ট অফিসের সামনে সব সময় দীর্ঘ লাইন দেখা গেলেও এখন সে চিত্র অতীত। একসময় পুরো ঢাকা এবং সারাদেশ থেকে মানুষ ই-পাসপোর্ট করাতে আগারগাঁও অফিসে আসতো। বর্তমানে এখানে মাত্র ১২টি থানার মানুষ ই-পাসপোর্ট করছেন। থানাগুলো হলো, শেরে বাংলানগর, মিরপুর, কাফরুল, রুপনগর, গুলশান, বনানী, শাহবাগ, ধানমন্ডি, কলাবাগান, রমনা ও তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল।
ঢাকা মহানগর ও পার্শ্ববর্তী এলাকার জন্য পাসপোর্ট অফিসসমূহ বিকেন্দ্রীকরণের কারণেই মূলত জনমনে স্বস্তি ফিরেছে। এখন আগারগাঁও এলাকায় দালালের দৌরাত্ম্য নেই। কারণ, দালালের কাছে যাওয়ার প্রয়োজনও হচ্ছে না বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।
নগরীর রূপনগর এলাকা থেকে ছোট মেয়ের ই-পাসপোর্ট করাতে এসেছেন আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, কয়েক মাস আগে বড় ছেলের জন্য ই-পাসপোর্ট করিয়েছি অনেক কষ্টে। শেষ পর্যন্ত কিছু টাকা খরচ করে মানুষের সহায়তা নিয়েছি। তবে এখন সে সমস্যা নেই। আগারগাঁও এলাকায় অপেক্ষা করতে হয়নি। খুব সহজেই ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম সম্পন্ন করলাম।
মানুষ বাড়ির পাশেই ই-পাসপোর্ট করাতে পারছেন। পাসপোর্ট নিয়ে জনভোগান্তি কমাতে রাজধানীর মুগদা, সবুজবাগ, শাহজাহানপুর, খিলগাঁও, রামপুরা, মতিঝিল, পল্টন, বাড্ডা ও হাতিরঝিল এ ৯টি থানার বাসিন্দাদের জন্য আফতাবনগরে নতুন ই-পাসপোর্ট আঞ্চলিক অফিস চালু হয়েছে। আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসের অতিরিক্ত চাপ কমানো এবং যানজট থেকে মুক্তি দিয়ে সেবা সহজ করতে নগরীতে একাধিক অফিস এবং আবেদন প্রক্রিয়াকরণ সেন্টার (এপিসি) স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এ লক্ষ্যেই আফতাবনগরে নতুন দপ্তর চালু করা হয়েছে। এর নাম দেওয়া হয়েছে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, ঢাকা পূর্ব।
এর আগে গত ১ মার্চ থেকে রাজধানীর বসিলায় ঢাকা পশ্চিম আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস চালু হয়। ওই অফিসে সাভার, ধামরাই, মোহাম্মদপুর, আদাবর, দারুস সালাম, শাহ আলী, হাজারীবাগ, নিউ মার্কেট থানার নাগরিকরা পাসপোর্ট সেবা পাচ্ছেন।
আগারগাঁওয়ের বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসে শেরে বাংলা নগর, মিরপুর, কাফরুল, রূপনগর, গুলশান, বনানী, শাহবাগ, ধানমন্ডি, কলাবাগান থানা এলাকার বাসিন্দারা পাসপোর্ট সেবা পাচ্ছেন। উত্তরা-পূর্ব, উত্তরা-পশ্চিম, উত্তর খান, দক্ষিণ খান, তুরাগ, বিমানবন্দর, খিলক্ষেত, আশুলিয়া, পল্লবী, ভাষানটেক থানা এলাকার আবেদনকারীরা উত্তরা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস থেকে সেবা পাচ্ছেন।
কেরানীগঞ্জের আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের আওতায় রয়েছে শ্যামপুর, কদমতলী, কোতোয়ালী, গেন্ডারিয়া, সূত্রাপুর, দোহার, নবাবগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ মডেল থানা, কেরানীগঞ্জ দক্ষিণ, লালবাগ, চকবাজার, কামরাঙ্গীরচর, বংশাল ও ওয়ারী থানা।
ঢাকা সেনানিবাসের পাসপোর্ট অফিসের সেবা নিতে পারবেন ক্যান্টনমেন্ট থানার অধীনে বসবাসরত নাগরিকরা। সচিবালয়ের পাসপোর্ট অফিসের সেবা নেবেন শুধু সচিবালয়ে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাদের পোষ্যরা।
এ প্রসঙ্গে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের (পরিচালক) মো. সাইদুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, পাসপোর্ট সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে আঞ্চলিক অফিস চালু হচ্ছে। যেমন- রাজধানীর ৯টি থানার বাসিন্দাদের সুবিধা দিতে আফতাবনগরে নতুন অফিস চালু করা হয়েছে। এখন আর তাদের যানজট ঠেলে আগারগাঁও আসতে হয় না। এতে মানুষের ভোগান্তি কমছে। আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস চালু হওয়ায় স্বস্তিতে এ কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারছেন সেবাপ্রার্থীরা।
এমওএস/এমকেআর/এমএস