সাইবার অপরাধ
সামাজিক মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি অপপ্রচারের শিকার শিশুরা
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে গত পাঁচ বছরে তুলনামূলকভাবে কমেছে সাইবার বুলিং। কমেছে অভিযোগের সংখ্যাও। তবে ভয়াবহ বিষয় হচ্ছে ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি অপপ্রচারের শিকার হচ্ছে শিশুরা। শনিবার (২০ মে) সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে ‘বাংলাদেশে সাইবার অপরাধপ্রবণতা ২০২৩’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতেই তুলে ধরা হয় সাইবার অপরাধপ্রবণতার বিস্তারিত তথ্য।
সাইবার স্পেস ভুক্তভোগীদের দেওয়া মতামতের ভিত্তিতে সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, ২০২২ সালে ৫২ দশমিক ২১ শতাংশ সাইবার বুলিংয়ের ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে, যা ২০১৭ সালে ছিল ৫৯ দশমিক ৯০ শতাংশ। আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীতে অভিযোগের হারও দিন দিন কমছে।
২০১৮ সাল থেকে পাঁচটি জরিপের প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী অভিযোগকারীর শতকরা হার ছিল ৬১ শতাংশ, ২০২৩ সালে গিয়ে তা কমে ২০ দশমিক ৮৩ শতাংশে নেমেছে। এদিকে, ২০২৩ সালের জরিপে ভুক্তভোগীদের ১৪ দশমিক ৮২ শতাংশের বয়সই ১৮ বছরের নিচে, যা ২০১৮ সালের জরিপের তুলনায় ১৪০ দশমিক ৮৭ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি অপপ্রচারের শিকার হচ্ছে শিশুরা। বয়সভিত্তিক অপরাধের ধরনে ভুক্তভোগীদের মধ্যে তরুণরা একই ধরনের অপরাধের শিকার।
প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের গবেষণা সহকারী স্বর্ণা সাহা। এসময় তিনি বলেন, সাইবার স্পেসে ভুক্তভোগীদের দেওয়া মতামতের ভিত্তিতে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন (সিক্যাফ) ধারাবাহিকভাবে পঞ্চমবারের মতো প্রতিবেদন প্রকাশ করছে। দেশে সম্প্রতি নতুন ধরনের অপরাধের মাত্রা বেড়েছে। ২০১৫-২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত ১১টি ট্যাবে করা তথ্যে অপরাধের মাত্রা ক্রমেই বাড়ছে। ২০২২ সালের প্রতিবেদনে যেখানে অন্যান্য অপরাধ ছিল ১ দশমিক ৮১ শতাংশ। ২০২৩ সালে প্রতিবেদনে এটি বেড়ে ৬ দশমিক ৯১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এসব অপরাধের মধ্যে রয়েছে নানা মাত্রিক প্রতারণা। প্রতারণাগুলো হচ্ছে চাকরি দেওয়ার মিথ্যা আশ্বাস এবং অ্যাপ ব্যবহারের মাধ্যমে।
তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো অপরাধের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হলেও বিগত পাঁচ বছরে তুলনামূলকভাবে কমছে সাইবার বুলিং সংশ্লিষ্ট অপরাধের ঘটনা। ২০২২ সালে ৫২ দশমিক ২১ শতাংশ রেকর্ড করা হয়েছে, যা ২০১৭ সালে ছিল ৫৯ দশমিক ৯০ শতাংশ। সামাজিক মাধ্যমসহ অন্যান্য আইডি হ্যাকিংয়ের ঘটনাগুলোও ধারাবাহিকভাবে কমলেও আর্থিক সংশ্লিষ্ট প্রতারণা থেমে নেই। ২০২২ সালে ভুক্তভোগীদের ১৪ দশমিক ৬৪ শতাংশই অনলাইনে পণ্য কিনতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন। সামাজিক মাধ্যমের আইডি হ্যাকিংয়ের শিকার সর্বোচ্চ ২৫ দশমিক ১৮ শতাংশই নারী। তারপরও আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীতে অভিযোগের হার দিন দিন কমছে। ২০১৮ সালের জরিপে যেখানে অভিযোগকারীর শতকরা হার ছিল ৬১ শতাংশ, ২০২৩ এ গিয়ে তা কমে ২০ দশমিক ৮৩ শতাংশে নেমেছে।
এ ছাড়াও ২০২৩ সালের জরিপে ভুক্তভোগীদের ১৪ দশমিক ৮২ শতাংশের বয়সই ১৮ বছরের নিচে, যা ২০১৮ সালের জরিপের তুলনায় ১৪০ দশমিক ৮৭ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি (২ শতাংশের বেশি) অপপ্রচারের শিকার হয় শিশুরা। বয়সভিত্তিক অপরাধের ধরনে ভুক্তভোগীদের মধ্যে তরুণরা (১৮-৩০ বছর) সর্বোচ্চ (১২ শতাংশের বেশি) একই ধরনের অপরাধের শিকার।
সিক্যাফ এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, সর্বশেষ জরিপে ভুক্তভোগীদের ৭৫ শতাংশের বয়সই ছিল ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। ২০১৮ সালের জরিপ থেকে এ পর্যন্ত একাধারে এই বয়সী ভুক্তভোগীর সংখ্যা সর্বোচ্চ এবং তাদের মধ্যে অধিকাংশই সামাজিক মাধ্যমে ভুয়া অ্যাকাউন্টে অপপ্রচার ও আইডি হ্যাকিংয়ের শিকার।
সংগঠনের সভাপতি কাজী মুস্তাফিজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন আইএসপিএবি মহাসচিব নাজমুল করিম ভূঞা, বিটিআরসির সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিসেস মহাপরিচালক ব্রি. জে. মো. নাসিম পারভেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. রাশেদা রওনক খান, সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতাবিষয়ক জাতীয় কমিটি, বাংলাদেশের সদস্য প্রকৌশলী মো. মুশফিকুর রহমান।
আরএসএম/এসএনআর/এমএস