মোখার হুঙ্কার উপেক্ষা করে সাগরবিলাস!
ইকবাল হোসেন ইকবাল হোসেন , নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
প্রকাশিত: ০৯:৫৮ পিএম, ১৪ মে ২০২৩
অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র কারণে কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেয় আবহাওয়া অধিদপ্তর। চট্টগ্রাম বন্দর ছিল ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায়। আগের দিন শনিবার থেকে প্রশাসনের তোড়জোড়ে উপকূলের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোর কিছু মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে সরে গেলেও উৎকণ্ঠার লেশমাত্র দেখা যায়নি চট্টগ্রামের বিস্তৃর্ণ জনপদে। অনেকে মোখার প্রভাব দেখতে দিনভর ভিড় করেছেন পতেঙ্গা সৈকতে। অনেকে দল বেঁধে সৈকতে ফুটবল খেলছেন। কেউ কেউ সাগরে জলকেলিতে মেতেছেন সহপাঠী কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে। আবার জাল দিয়ে মাছ শিকার করতেও দেখা গেছে অনেককে।
সরেজমিনে রোববার (১৪ মে) বিকেলে পতেঙ্গা আকমল আলী ঘাট এলাকার জেলেপল্লি ঘুরে দেখা গেছে, সেখানকার সবকিছু মোটামুটি স্বাভাবিক। ব্যাটালিয়ন পুলিশের সঙ্গে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী দল এবং যুব রেড ক্রিসেন্টের সদস্যদের আনাগোনা চোখে পড়েছে। সেখানকার প্রায় ৫০০ মানুষকে তারা নিরাপদে সরিয়ে নিয়েছেন। আবার জেলেপল্লির বাসিন্দাদের অনেকে নিজ তাগিদেই নিয়েছেন নিরাপদ আশ্রয়।
নোয়াখালীর রামগতির বাসিন্দা অহিদুর রহমান গত ১০ বছর ধরে পতেঙ্গা এলাকায় বসবাস করছেন। ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এখন ঘূর্ণিঝড় নিয়ে তার কোনো আতঙ্ক নেই। বরং উচ্ছ্বাস নিয়ে সাগরের পাড়ে গিয়েছেন প্রয়োজনীয় কাজে। দেখেছেন সাগরের বিক্ষুদ্ধ দৃশ্যও। এমনকি এবারের ঘূর্ণিঝড়ের নামই জানা নেই তার।
অহিদুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, আমার ছেলেরা এখানে পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। ঘূর্ণিঝড়ের কী নাম জানতে চাইলে ৮০ বছর বয়সী এ বৃদ্ধ বলেন, কী নাম জানি না। জানলেতো পটপটায় (তাড়াতাড়ি) বলে ফেলতাম।
পাশের বে-টার্মিনালের জন্য ভরাট করা এলাকায় ফুটবল খেলছিলেন কিশোর-তরুণরা। কায়সার হোসেন নামের এক তরুণ বলেন, আমাদের বাসা আকমল আলী রোড এলাকায়। পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে ফুটবল খেলতে এসেছি। গত বছরও ঘূর্ণিঝড় আসার আতঙ্ক তৈরি হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত আসেনি। এবার দিনেরবেলায় ঘূর্ণিঝড় মোখা আঘাত হানার কথা। এ কারণে স্কুল-কলেজও বন্ধ। বাইরে রোদও কম। বৃষ্টিও তেমন নেই। এ সুযোগে আমরা ফুলবল খেলতে এসেছি।
পাশের সৈকতে গিয়ে অনেক কিশোর-তরুণকে জলকেলিতে মেতে উঠতে দেখা যায়। অনেকে মেতে উঠে কাদা ছোড়াছুটিতে। আশফাক নামের এক কিশোর বলেন, স্কুল বন্ধ, তাই আমরা বন্ধুরা মিলে চিল করছি। তার এক সহপাঠী বলেন, আমাদের এখানে কোনো মোখা নেই। শুধু আনন্দ আছে।
রোববার বিকেলজুড়ে পতেঙ্গা সৈকতে ভিড় দেখা গেছে ভ্রমণপিপাসুদের। অনেকে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে বেড়াতে এসেছেন। সিডিএর নির্মিত সৈকত এলাকায় রীতিমতো দোকান খুলে বসেছেন অনেকে। সেসব দোকানে চা, পেঁয়াজু, কাঁকড়া ভাজা বিক্রির ধুম পড়েছিল।
নগরীর চান্দগাঁও এলাকা থেকে বন্ধুকে নিয়ে পতেঙ্গা সৈকতে বেড়াতে যাওয়া যুবক সিহাব আরমান জাগো নিউজকে বলেন, আমি বন্ধুকে নিয়ে মোটরসাইকেলে করে সৈকতে মোখার অবস্থা দেখতে এসেছিলাম। এসে দেখি লোকজন আনন্দ করছে। কোথাও আতঙ্কের বালাইও নেই।
ইকবাল হোসেন/এমকেআর/এএসএম