বঙ্গবন্ধু রেলসেতু

আইএমইডি প্রতিবেদনে নির্মাণঝুঁকি, কাজ সম্পন্ন ৬১ শতাংশ

মফিজুল সাদিক
মফিজুল সাদিক মফিজুল সাদিক , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৬:১২ পিএম, ১৩ মে ২০২৩
যমুনা নদীর ওপর নির্মেয়মাণ বঙ্গবন্ধু রেলসেতু/ফাইল ফটো

যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সড়ক সেতুর ৩০০ মিটার উজানে সমান্তরালভাবে নির্মিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলসেতু। দৈর্ঘ্য ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার। সেতুটি যুক্ত করবে টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জকে। বঙ্গবন্ধু রেলসেতুর নির্মাণকাজের মোট অগ্রগতি ৬১ শতাংশ। সেতুটির অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল ১০০ বছর। ডিসেম্বর ২০২৫ সালের মধ্যেই স্টিল অবকাঠামোর সেতুটি চালু হবে বলে জানায় বাংলাদেশ রেলওয়ে।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময় নির্মাণকালীন কিছু ঝুঁকি উঠে এসেছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) নিবিড় পরিবীক্ষণ প্রতিবেদনে।

প্রকল্পের ঝুঁকির বিষয়ে বলা হচ্ছে, অনুমোদিত ইএমপি অনুযায়ী সড়কের ধুলাবালি নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেওয়ায় প্রকল্প এলাকার জনগণ স্বাস্থ্যঝুঁকি ও পরিবেশগত ঝুঁকির সম্মুখীন।

আরও পড়ুন>> ১২০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন ছুটবে বঙ্গবন্ধু রেলসেতুতে

প্রতিবেদনে প্রকল্পের কিছু দুর্বল দিক প্রকাশ করেছে আইএমএডি। এর মধ্যে রেলওয়ে সড়কবাঁধ নির্মাণে যথাযথ এবং অনুমোদিত পদ্ধতি অনুসরণ না করা, প্রকল্পের কার্যক্রম সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত না করা, চুক্তি মোতাবেক প্যাকেজ ডাব্লিউডি২-এর ল্যাবরেটরিতে মেশিনারি ও জনবল মোবালাইজ না করা, প্রকল্পের ম্যানেজমেন্ট সাপোর্ট কনসালট্যান্ট নিয়োগ না করা, অনুমোদিত ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক পালস (ইএমপি) অনুযায়ী নির্মাণকালীন সড়কের ধুলাবালি নিয়ন্ত্রণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না করা ও প্যাকেজে ডাব্লিউডি২ সম্পূর্ণ ল্যাবরেটরি টেস্টিং ইক্যুইপমেন্ট শ্রেণি বিন্যাস না করা।

এক্সিট প্ল্যান হিসেবে প্রকল্প বাস্তবায়নের পরে প্রকল্পের কাজে নিয়োজিত ঠিকাদার প্যাকেজভিত্তিক এক বছর রক্ষণাবেক্ষণ করবে। পরবর্তীসময়ে প্রকল্পের আওতায় নির্মিত ব্রিজ ও যাবতীয় ভৌত অবকাঠামো হস্তান্তর করবে বাংলাদেশ রেলওয়ের কাছে। নিয়মিত ও প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ের দক্ষ জনবল, যন্ত্রপাতি ও প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করে এই সেতু এবং ভৌত অবকাঠামোর ডিজাইন লাইফ ১০০ বছর সচল রাখার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।

আরও পড়ুন>> ২০২৪ সালে ট্রেন চলবে বঙ্গবন্ধু রেলসেতুতে

আইএমইডির প্রতিবেদন বলছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সময়ক্ষেপণ হয়েছে। বিদ্যমান প্রকল্পের প্যাকেজ বাস্তবায়নে চুক্তি সই হয় ৫ এপ্রিল, ২০২০ তারিখে। প্যাকেজের আওতায় বাংলাদেশে মেঘনা, মেঘনা-গোমতি প্রকল্পে কাজ চলমান থাকায় তাদের জনবল ও যন্ত্রপাতি প্রকল্প সাইটে মোবালাইজ করা সহজ হয়। নির্দিষ্ট সময়ে যন্ত্রপাতি মোবালাইজ করতে ২১ মার্চ ২০২১ তারিখে কাজ শুরু হয়। সেতুর পাইল ড্রাইভিংয়ের জন্য প্যাকেজের ক্রেন, বার্জ, ওয়াটার জেট, হ্যামারসহ প্রয়োজনীয় মালামাল ও যন্ত্রপাতি মিয়ানমার থেকে প্রকল্প সাইটে মোবালাইজ করার পরিকল্পনা ছিল। এরই মধ্যে মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থান হওয়ায় রাজনৈতিক অস্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করায় নির্দিষ্ট সময়ে যন্ত্রপাতি মোবালাইজ করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীসময়ে তা সিঙ্গাপুর থেকে মোবালাইজ করা হয়। এতে প্রকল্প বাস্তবায়নে সময়ক্ষেপণ হয়।

প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মো. মাসউদুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রকল্পের কাজ ৬১ শতাংশ শেষ। কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। আশা করা যাচ্ছে নির্দিষ্ট সময়ে কাজ সম্পন্ন হবে। এরই মধ্যে ১৫টি স্প্যান স্থাপন করা হয়েছে।’



আরও পড়ুন>> দেশের বৃহত্তম রেলসেতু ঘিরে যমুনাপাড়ে বিশাল কর্মযজ্ঞ

প্রকল্প পরিচালক আরও বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে কিছু মালামাল নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সে দেশে সামরিক অভ্যুত্থানের কারণে সম্ভব হয়নি। প্রকল্পের একটি প্যাকেজে পিছিয়ে গেছে।’

বাংলাদেশ রেলপথ মন্ত্রণালয় জানায়, রাজধানীর সঙ্গে উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন এনেছে বঙ্গবন্ধু সেতু। যমুনা নদীর ওপর স্থাপিত বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে এসব অঞ্চলের যানবাহন চলাচল করে। এর এক পাশে এক লাইনের একটি ডুয়েল গেজ রেললাইন রয়েছে। বাংলাদেশের আঞ্চলিক বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর নির্মিত এই সিঙ্গেল লাইনের পাশাপাশি সম্পূর্ণ রেলসেতু নির্মাণ করা প্রয়োজন।

তাই অভ্যন্তরীণ, ক্রস বর্ডার এবং ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে ট্রাফিকের বর্ধিত চাহিদা বিবেচনা রেখে নির্বিঘ্নে নিরবচ্ছিন্ন ট্রেন চলাচল নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ রেলওয়ের এই সড়ক সেতুর ৩০০ মিটার উজানে যমুনা নদীর ওপর আরেকটি ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাকসম্পন্ন ৪ দশমিক ৮০ কিমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু ও প্রায় ৭ দশমিক ৬ কিমি ডাবল লাইন সমন্বিত রেলওয়ে অ্যাপ্রোচ অ্যামবাঞ্চমেন্ট নির্মাণ করা হচ্ছে। জাইকার ঋণসহায়তায় প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন>> বঙ্গবন্ধু রেলসেতুর ২০ পিয়ারের কাজ সম্পন্ন, উদ্বোধন ২০২৪ এর শেষে

৯ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে রেলসেতুটি নির্মাণ করার কথা থাকলেও প্রথম সংশোধনীর পর সেতু প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৭শ কোটি টাকা। এর মধ্যে দেশীয় অর্থায়ন থাকবে ২৭ দশমিক ৬০ শতাংশ বা চার হাজার ৬৩১ কোটি টাকা এবং জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ঋণ দেবে ১২ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা, যা পুরো প্রকল্পের ৭২ দশমিক ৪০ শতাংশ।



আইএমইডির সবশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি, নকশার কাজ শেষ। দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে বঙ্গবন্ধু রেলসেতুর নির্মাণকাজ। এখন চলছে সেতুর মূল অংশের কাজ। স্টিল অবকাঠামোর এ সেতুতে লাইন থাকবে দুটি। পারাপারের জন্য কোনো ট্রেনকে তাই অপেক্ষা করতে হবে না। ট্রেনও চলতে পারবে সর্বোচ্চ ১২০ কিলোমিটার গতিতে। ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের সঙ্গে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সংযোগ তৈরি করতেও সহায়তা করবে এই সেতু। নির্মাণ শেষ হলে এটিই পাবে দেশের দীর্ঘতম রেলসেতুর তকমা।

বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্র জানায়, দেশের সবচেয়ে বড় এ রেলসেতুতে মোট পিয়ার (খুঁটি বা পিলার) থাকবে ৫০টি। ক্রেনের সাহায্যে হ্যামার দিয়ে বসানো হচ্ছে পাইলিং পাইপ। রেলসেতুর পিয়ার হবে কংক্রিটের। ওপরের সুপার স্ট্রাকচার হবে স্টিলের। দেশে যেমন সেতুর পাইলিং কাজ চলমান, অন্যদিকে সুপার স্ট্রাক্চারের কাজ চলমান ভিয়েতনাম ও মিয়ানমারে। পিলারের কাজ শেষ হলেই বিদেশ থেকে সুপার স্ট্রাক্চার এনে বসিয়ে দেওয়া হবে।

এমওএস/এএসএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।