ধীরে এগোচ্ছে ‘মোখা’, বাংলাদেশের দিকে বাঁক নিলে বাড়বে সংকেত

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:২৬ পিএম, ১১ মে ২০২৩
ছবি: সংগৃহীত

খুবই ধীরগতিতে এগোচ্ছে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’। বর্তমান পরিস্থিতিতে ‘মোখা’র সুপার সাইক্লোনে পরিণত হওয়ার শঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। এটি উত্তর-পূর্ব দিকে বাঁক নিয়ে বাংলাদেশের দিকে এগোলে সতর্ক সংকেত বাড়ানো হবে।

বৃহস্পতিবার (১১ মে) বিকেলে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান জাগো নিউজকে এ তথ্য জানান।

ঘূর্ণিঝড়টি আগামী রোববার সকাল থেকে দুপুরের মধ্যে বাংলাদেশের কক্সবাজার ও মিয়ানমারের উত্তর উপকূল অতিক্রম করতে পারে বলেও জানান তিনি।

আজিজুর রহমান বলেন, ‘মোখা’ অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় (ভেরি সিভিয়ার সাইক্লোন) হবে। এর পরের স্টেজ হলো সুপার সাইক্লোন। মোখার সেই স্টেজে যাওয়ার আশঙ্কা নেই।

আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় মোখায় রূপ নিলো গভীর নিম্নচাপ, ২ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত

ঘূর্ণিঝড় মোখার এগোনোর গতি এখন খুবই ধীর হয়ে গেছে জানিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক বলেন, এটি এখন ঘণ্টায় ৮ কিলোমিটার বেগে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে এগোচ্ছে। গতকাল (বুধবার) এর গতি ঘণ্টায় ১৫ থেকে ১৭ কিলোমিটার ছিল। আজ সকালে সেটি আটে নেমে এসেছে।

তিনি বলেন, এটি এখনো বাংলাদেশের স্থলভাগ থেকে গড়ে ১২শ কিলোমিটার দূরে রয়েছে। ৮ কিলোমিটার বেগে এগোলে ১০০ কিলোমিটার যেতে ১৬ ঘণ্টা লাগবে। তাহলে ১২শ কিলোমিটার আসতে আরও কয়েক দিন লাগবে।

‘কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ের এই গতি থাকবে না। উত্তর-পূর্ব দিকে বাঁক নেওয়ার পর এর গতি আরও বাড়বে।’

আজিজুর রহমান আরও বলেন, বর্তমান গতি এবং এরপর গতি বাড়লে এটি আগামী ১৪ মে সকাল থেকে দুপুরের মধ্যে স্থলভাগে আঘাত হানতে পারেন। সবগুলো পূর্বাভাস মডেল একমত যে, এটি বাংলাদেশের কক্সবাজার ও মিয়ানমারের সিত্তুই বন্দর এলাকার দিয়ে স্থলভাগ অতিক্রম করবে।

মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশ কম আক্রান্ত হতে পারে জানিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের ডানপাশে জলোচ্ছ্বাস বেশি হয়। ডান পাশে বাতাস এবং বৃষ্টিও বেশি হয়। ঘূর্ণিঝড়ের ডান পাশ পড়েছে মিয়ানমারের অংশে।

আরও পড়ুন: শুক্র-শনিবারও খোলা থাকবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়

তিনি বলেন, তারপরও আমরা শঙ্কামুক্ত না। কক্সবাজার ছাড়া অন্যান্য স্থানে বাতাস হবে না তা নয়। ভারী বৃষ্টি হবে, সঙ্গে বাতাসও থাকতে পারে। বরিশাল, ভোলা ও নোয়াখালী অঞ্চলে কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে। মূলত প্রভাব পড়বে কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম।

মোখার কেন্দ্রের পরিধি হবে ৩০ থেকে ৫০ কিলোমিটার। ঘূর্ণিঝড়ের পুরো শরীরের দৈর্ঘ্য ৪০০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার হবে বলেও জানান আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক।

আজিজুর রহমান আরও বলেন, এটি অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় থেকে কিছুটা দুর্বল হয়ে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেওয়ার পর স্থলভাগে আঘাত হানতে পারে। এটি দিনে স্থলভাগ অতিক্রম করবে। ফলে সেটি একটি ইতিবাচক দিক। রাতে হলে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়।

তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখা দিক বদলে বাংলাদেশের দিকে মুখ নেওয়ার পর সতর্ক সংকেত বাড়বে। এর দূরত্ব ১০০০ কিলোমিটার নিচে আসলে সংকেত বাড়ানো হবে।

এর আগে সোমবার (৮ মে) সকালে দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়। ওইদিন মধ্যরাতে এটি ঘনীভূত হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর সুস্পষ্ট লঘুচাপ আরও শক্তিশালী হয়ে নিম্নচাপ, পরে বুধবার সকালে গভীর নিম্নচাপে রূপ নেয়। শেষে আজ বৃহস্পতিবার সকালে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায় গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে।

আরও পড়ুন: দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুত জনবলসহ পায়রা বন্দরের নৌযান

ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নেওয়ার পর এর নাম হয় ‘মোখা’। নামটি ইয়েমেনের দেওয়া। কফির জন্য খ্যাত ইয়েমেনের ‘মোখা’ বন্দরের নামে ঘূর্ণিঝড়টির নামকরণ করা হয়েছে।

গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার পর চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত নামিয়ে এর পরিবর্তে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে (ক্রমিক নম্বর-৬) বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ আরও উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ২৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ১৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ২২০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ১৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে এবং পরবর্তীতে দিক পরিবর্তন করে ক্রমান্বয়ে উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হতে পারে।

এতে আরও বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা বা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে।

চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে তাদেরকে গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

আরএমএম/কেএসআর/এএসএম

টাইমলাইন  

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।