ব্যবসাবান্ধব জাগো নিউজ
যতই দিন যাচ্ছে, ততই পরিস্কার হচ্ছে যে পৃথিবী যেভাবে এগোচ্ছে, তাতে মানুষের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী হওয়া যাচ্ছে না। এ রকম পরিস্থিতি মেনে নেওয়া যায় না। পৃথিবীতে দারিদ্র্য কমছে, তবুও পানির ওপর নাকটা ভাসিয়ে রাখার মতো। পানি ছেড়ে ডাঙায় ওঠার কোনো রূপকল্প নেই।
গরীবের আধলা পয়সা উন্নতি হওয়ায় আগে ধনীর ঘরে মিলিয়ন ডলার উঠে আসছে। ধনী-দরিদ্রের আয় ও সম্পদের বৈষম্য ক্রমাগত বাড়ার সব আয়োজন পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় স্থায়ীভাবে স্থাপন করা আছে। এর থেকে পরিত্রাণের কোনো আয়োজন এই ব্যবস্থায় নেই। তার সঙ্গে স্থায়ীভাবে বাসা বেঁধে আছে বেকারত্ব।
ধনী দেশেও বেকারত্ব, গরিব দেশের তো এটাই প্রাথমিক পরিচয়। মানুষ বাড়ছে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, শ্রমের চাহিদা সে অনুপাতে বাড়ছে না, বাড়ছে বেকারত্ব। আগে রাষ্ট্রের দানের ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তির সংখ্যা থেকে বোঝা যেত, ধনী দেশে কত লোক বেকার আছে। এখন তা আর দরকার হয় না। শুধু তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের পরিমাণ দেখলে বোঝা যায় সমস্যাটা কত গভীরে।
এ অবস্থার কি পরিবর্তন হবে? খুব সহজে যে কথাটা বলা যায়, তা হলো, এই অবস্থা মেনে নেওয়া যায় না। পরিবর্তন হতেই হবে। মানুষ যা মেনে নেয় না, সেটা পাল্টে যেতে বাধ্য। যা আমাদের কাছে অগ্রহণযোগ্য, আমাদেরই তা পাল্টাতে হবে। অন্য কোনো ঊর্ধ্বতন ক্ষমতা আমাদের জন্য সেটা করে দেবে না।
হ্যা, এই কথাগুলোই বাংলাদেশির কথা, বাঙালির কথা। আমরা পারি না, তা হয় না। আমাদের অনেক উদাহরণ আছে।
তবে এখন দরকার অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা। বেকারত্ব দূরীকরণের মহোৎসব সৃষ্টি করতে হবে। বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। ব্যবসার প্রসার দরকার। শুধু রাষ্ট্রীয়ভাবে উন্নয়নকে এগিয়ে নেওয়া যায়না। দরকার বেসরকারি খাতের উন্নয়ন।
আজ কেউ অস্বীকার করতে পারবে না, অর্থনীতিকে কেন্দ্র করেই চলছে রাজনীতি। অর্থনৈতিক দূতোয়ালিও (ইকোনমিক ডিপ্লোমেসি) আজ গুরুত্ব পাচ্ছে বিশ্ব সম্পর্কে।
বাংলাদেশেও এগিয়ে যাচ্ছে। গত এক দশক আমাদের দেশজ উৎপাদন-জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের ওপরে, রপ্তানি বাড়ছে, শিল্প বাড়ছে, অর্থনীতি এখন উৎপাদন ও শিল্প নির্ভর হয়ে ওঠছে, প্রবাসী আয় বাড়ছে, রিজার্ভ বাড়ছে। এক কথায় অর্থনীতির সূচকগুলোতে বেশ সফলতা দেখিয়েছে বাংলাদেশ। যদিও কবে মধ্যম আয়ের দেশ হবে বাংলাদেশ যেটি নিয়ে বির্তক রয়েছে। তবে সামাজিক সূচকেও বাংলাদেশের সাফল্য আজ প্রশংসিত। মাথাপিছু আয় আজ নতুন মাত্রা ছুঁয়েছে।
বাংলাদেশের এই অগ্রগতির কারণ বর্ণনা করে ‘দেশ সহায়তা কৌশল অগ্রগতি’ নামের প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে।
নোবেল বিজয়ী বাঙালি অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক অমর্ত্য সেন তাঁর নিজের দেশ ভারতের তুলনায় সামাজিক সূচকে বাংলাদেশের এই সাফল্যের কথা বারবার লিখেছেন। তিনি তাঁর সর্বশেষ প্রকাশিত অ্যান আনসারটেইন গেন্ডারি: ইন্ডিয়া অ্যান্ড ইটস কনট্রাডিকশনস বইয়ে ভারতের তুলনায় বাংলাদেশের অগ্রগতি নিয়ে আলাদা একটি অধ্যায়ও রেখেছেন।
অথচ স্বাধীনতার পরপর বাংলাদেশের টিকে থাকা নিয়ে অনেকেরই সংশয় ছিল। সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার (তখন নিরাপত্তা উপদেষ্টা) স্বাধীনতার আগেই বাংলাদেশকে বলেছিলেন ‘ইন্টারন্যাশনাল বাস্কেট কেস’। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবে কি না, এ নিয়ে ব্যাপক সংশয় ছিল। এ কারণেই বাংলাদেশকে উন্নয়নের ‘টেস্ট কেস’ হিসেবে ধরা হতো। তার চার দশক পর এখন বাংলাদেশকে বরং উন্নয়নের বিস্ময় হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এ থেকেই আমাদের আর্থসামাজিক অগ্রগতির ধারণা করা যায়।
সামগ্রিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে এখনো কিছু কিছু ক্ষেত্রে নতুন করে উন্নয়নের পরীক্ষাগার হিসেবে দেখা হচ্ছে। যেমন, বাংলাদেশের সামনে এখন চ্যালেঞ্জ হচ্ছে এত ঘনবসতিপূর্ণ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ দেশে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রেখে টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সুলভ শ্রমশক্তিকে কাজে লাগিয়ে রপ্তানি নির্ভর দ্রুতগতি ধরে রাখা, অর্থনৈতিক বৈষম্য সীমিত রেখে সামাজিক ভারসাম্য বজায় এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক সুশাসনে একই সঙ্গে অগ্রগতির দৃষ্টান্ত তৈরি।
এমন পরিস্থিতিতে আমরা জাগো নিউজকে ব্যবসা উন্নয়নে সাাজাতে চাই। কাজটা সহজ নয়, অনেক কঠিন। কিন্তু বাংলাদেশে অনেক কিছুই তরুণরা করেছে। আমরাও পারব।
সব সময়ই আমাদের চেষ্টা থাকবে, একটি ভালো বাণিজ্যের অনলাইন হয়ে ওঠার, সুসাংবাদিকতা দিয়ে, পেশাদারি দক্ষতা, নিরপেক্ষতা, বস্তু নিষ্ঠতা আর দেশপ্রেম যাতে অন্ধকার কাটিয়ে অর্থনীতি এগিয়ে যেতে পারে।
খুবই পরিকল্পিতভাবে, সচেতন সিদ্ধান্ত নিয়ে জাগো নিউজ। আপনার ব্যবসার ইতিবাচক কথা আমরা বলতে চাই। করপোরেট, ব্যাংক, বীমাসহ আর্থিক খাত, শিল্পগোষ্ঠী, তৈরি পোশাক খাত, ওষুধ শিল্প, প্রযুক্ত নির্ভর শিল্প, জাহাজ নির্মাণসহ এমন কোন সম্ভাবনাময় খাত থাকবে না, যার ভালো খরবটি জাগো নিউজ প্রকাশ করবে না। খারাপ সংবাদ সংবাদ মাধ্যমের জন্য ভালো সংবাদ, তা আমরা জানি। তবে উন্নয়ন সাংবাদিকতার সুন্দর চর্চা আমাদের থাকবে পাঠকের জন্য।
সাংবাদিকতার পাশাপাশি নানা রকম ভালো ব্যবসায়িক উদ্যোগের সঙ্গেও নিজেদের যুক্ত রাখব আমরা। আমরা স্বপ্ন দেখি, একটি অর্থনৈতিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ, আমার চাই, দারিদ্র্য মুক্ত হতে।