দু’একটি দল ভোটে অংশ না নিলে গণতন্ত্র বিলীন হয়ে যায় না

সায়েম সাবু
সায়েম সাবু সায়েম সাবু , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১:০৬ পিএম, ০৯ মে ২০২৩

শ ম রেজাউল করিম। মন্ত্রী, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। জ্যেষ্ঠ আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট। প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ সফর প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলেন জাগো নিউজের সঙ্গে। শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকারের উন্নয়নের যে প্রশংসা মিলছে, তা জাতির জন্য বিশেষ বার্তা বলে উল্লেখ করেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সায়েম সাবু।

জাগো নিউজ: প্রধানমন্ত্রীর ত্রিদেশীয় সফরের শেষ দিন আজ। এই সফর প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া জানতে চাই।

শ ম রেজাউল করিম: প্রধানমন্ত্রীর সফর নিয়ে বিরোধীপক্ষ নানা সমালোচনা করছে। তারা দাবি করে আসছে, আন্তর্জাতিক মহল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) প্রধানের বক্তব্য অবশ্যই লক্ষ্য করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার পরিচালনায় থাকা প্রয়োজন। কারণ, উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন, অর্থনৈতিক উন্নয়নে তিনি (শেখ হাসিনা) যে ভূমিকা রেখেছেন, তাতে তার নেতৃত্ব আরও প্রয়োজন।’

আরও পড়ুন>> ‘সব প্রার্থীকেই প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করি, কাউকে ছোট করে দেখি না’

আমি মনে করি, আইএমএফ প্রধানের এমন প্রশংসামূলক বক্তব্য গোটা জাতির জন্য বিশেষ বার্তা। দ্বিতীয়ত, বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আমাদের ৫০ বছরের সম্পর্কের উদযাপন হলো। বিশ্বব্যাংকের টাকা নিয়ে অনেকেই দিতে পারেননি। আর আমরা বিশ্বব্যাংকের টাকা না নিয়েও পদ্মা সেতুর মতো বিস্ময়কর সাফল্য অর্জন করতে পেরেছি। আমাদের নিজস্ব সক্ষমতার চিত্র পদ্মা সেতু প্রধানমন্ত্রী বিশ্বব্যাংক প্রধানের হাতে তুলে দিয়েছেন।

একইভাবে কোরিয়া, জার্মান, জাপানের মতো দেশ যারা বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী হতে পারে তারাও প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অভিবাদন জ্ঞাপন করেছে। বিনিয়োগ বাড়াতে চাইছে।

জাগো নিউজ: আইএমএফ বা বিশ্বব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠানের প্রশংসায় আপনারা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন। বৈশ্বিক এসব প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন আছে। আপনারাও তাদের সমালোচনা করেন!

শ ম রেজাউল করিম: এসব প্রতিষ্ঠানের বাহবা নিয়ে আমরা এ কারণে উচ্ছ্বসিত যে, একটি সত্য স্বীকার করে তারা লজ্জায় পড়েছে। অন্তত পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের ভূমিকায় তাই মনে হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ যে মিথ্যা ছিল তা কানাডিয়ান আদালত প্রমাণ করেছে। এরপর বিশ্বব্যাংক ফের বিনিয়োগ করতে চেয়েছিল। আমরা ফিরিয়ে দিয়ে প্রমাণ করেছি, ‘আমরাও পারি।’ তারা যে আমাদের যোগ্যতাকে স্বীকৃতি দিয়েছে, এ কারণে আমরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতেই পারি।

আরও পড়ুন>> বিএনপির সঙ্গে শরিক দলগুলোর দূরত্ব বাড়ছে? 

জাগো নিউজ: এমন স্বীকৃতি আগের সরকারগুলোও পেয়েছে। বিএনপি-জামায়াতের সরকারপ্রধান সফরে গেলেও উন্নয়ন নিয়ে এমন প্রশংসা পেয়েছে…

শ ম রেজাউল করিম: এর আগে কোনো সরকার এমন স্বীকৃতি পায়নি। সামগ্রিক উন্নয়নে শেখ হাসিনার সাফল্য তারা দেখতে পাচ্ছে তথ্যের ভিত্তিতে। তাদের প্রতিনিধিরা এমন তথ্য প্রকাশ করছে। এর আগে এমন হয়নি বলে আমি বিশ্বাস করি। আর কোনো প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন নিয়ে এভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি।

জাগো নিউজ: গণতন্ত্র, নির্বাচন, সুশাসন নিয়েও তারা প্রশ্ন তুলেছে…

শ ম রেজাউল করিম: আমাদের রাষ্ট্র ব্যবস্থা ‘বেদ-বাক্য’ যুক্ত নয়। যুক্তরাষ্ট্র আজ আমাদের নির্বাচন নিয়ে কথা বলছে। অথচ ১৯৭১ সালে এই যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তাদের ভূমিকা কী ছিল, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এরপর তারা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের আশ্রয় দিয়ে আরও জঘন্যতম কাজ করে যাচ্ছে। তাদের নির্বাচন নিয়েও ক্যাপিটাল হিলে হামলা হলো। প্রকাশ্যে মানুষ খুন করে যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশ। বিশ্বব্যাপী যুদ্ধের নামে যে নারকীয় তাণ্ডব চালাচ্ছে, তার জবাব কে দেবে?

আরও পড়ুন>> স্বাধীনতার ৫০ বছর পর বিদেশিরা এসে ছবক দেওয়া লজ্জার: শাহিদুজ্জামান 

জাগো নিউজ: তার মানে নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া তাগিদকে পাত্তা দিচ্ছেন না?

শ ম রেজাউল করিম: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্পষ্ট করে বলেছেন, বাংলাদেশ বাংলাদেশের মতো করে চলবে। এখানে অন্য কারও প্রেসক্রিপশনের প্রয়োজন নেই। যুক্তরাষ্ট্রেও সব মানুষ ভোটে অংশ নেয় না। বাংলাদেশেও দু-একটি দল ভোটে অংশ না নিলে গণতন্ত্র বিলীন হয়ে যায় না। ভোট নিয়ে বাংলাদেশে উচ্ছ্বাস বাড়ছে। এদেশের জনগণই ঠিক করবে কারা দেশ পরিচালনা করবে। প্রধানমন্ত্রী বারবার বলে আসছেন আপনারা পর্যবেক্ষক পাঠান। আমরা গ্রহণ করবো। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের গণতন্ত্র বিচার করতে হবে।

জাগো নিউজ: তাহলে বিদেশিদের তোলা প্রশ্ন নিয়ে সরকার এভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে কেন?

শ ম রেজাউল করিম: তারা ক্রমাগত মিথ্যাচার করে যাবে, আর আমরা কিছুই বলবো না, এমন তো হতে পারে না। বাংলাদেশে তো আরও রাষ্ট্রদূত আছেন। তারা তো এভাবে মাঠে যান না, যেভাবে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ঘুরে বেড়াচ্ছেন। অন্যরা তো অযাচিতভাবে এমন কথাবার্তা বলছে না। কারণ, কার কী ভূমিকা তা আমরাও জানি। শিষ্টাচারবহির্ভূত কোনো কিছুই আমরা বরদাস্ত করতে পারি না। এ কারণেই আমরা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে জনগণের কাছে পরিষ্কার বার্তা দিতে চাই।

জাগো নিউজ: সামনের নির্বাচনে বিদেশিদের কোনো চাপ অনুভব করছেন না?

শ ম রেজাউল করিম: প্রশ্নই আসে না। প্রধানমন্ত্রী আল্লাহ আর জনগণ ছাড়া কাউকেই ভয় করেন না। অন্য কোনো চাপ প্রধানমন্ত্রীকে টলাতে পারবে না। আমরা কোনো চাপ অনুভব করি না।

এএসএস/এএসএ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।