বাঞ্ছারামপুর সরকারি কলেজ

নিয়োগ জালিয়াতি, অধ্যক্ষসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৬:০৬ পিএম, ০৮ মে ২০২৩
ফাইল ছবি

অধ্যক্ষ ও প্রভাষক পদে নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর ডিগ্রি মহাবিদ্যালয়ের (বর্তমানে বাঞ্ছারামপুর সরকারি কলেজ) অধ্যক্ষ, প্রভাষকসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

সোমবার (৮ মে) সংস্থাটির সহকারী পরিচালক মাসুম আলী বাদী হয়ে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় কুমিল্লায় মামলাটি দায়ের করেন।

আসামির হলেন- কলেজের অধ্যক্ষ মো: আব্দুর রহিম, সাবেক সহকারী অধ্যাপক ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবদুল কাদের, বাংলা বিভাগের প্রভাষক রত্না খানম ওরফে রত্না বেগম ও একই বিভাগের সাবেক সহযোগী অধ্যাপক সায়েরা বেগম।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১০ সালে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ থাকাকালীন আবদুল কাদের অধ্যক্ষ পদের জন্য নিয়োগবিধি মোতাবেক অভিজ্ঞতা কম থাকা সত্ত্বেও এবং পূর্ববর্তী কলেজের ছাড়পত্র জমা না দেওয়া সত্ত্বেও মো. আব্দুর রহিমকে তৎকালীন বাঞ্ছারামপুর ডিগ্রি মহাবিদ্যালয়ে অধ্যক্ষ পদে অবৈধভাবে নিয়োগ দেন। অধ্যক্ষ পদের জন্য ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা প্রয়োজন হলেও আব্দুর রহিমের অভিজ্ঞতা ১ বছর ৪ মাস ২৯ দিন কম ছিল। এছাড়া আব্দুর রহিম পূর্বের কলেজে থেকে ২০০৫ সালে সাময়িক বরখাস্ত ছিলেন, যা তিনি নিয়োগকালে গোপন রাখেন।

এজাহারে আরও বলা হয়, পরে আব্দুর রহিম তার স্ত্রী রত্না খানম ওরফে রত্না বেগমকে একই কলেজে নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়োগ পরীক্ষায় অধ্যক্ষের পছন্দমতো মাউশির ডিজির প্রতিনিধি মনোনয়নের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সংখ্যক প্রার্থী না থাকা সত্ত্বেও রত্না খানম ওরফে রত্না বেগমকে প্রভাষক (বাংলা) পদে অবৈধভাবে নিয়োগ ও যোগদানের ব্যবস্থা করেন।

এতে বলা হয়, বাঞ্ছারামপুর ডিগ্রি মহাবিদ্যালয়ে তখন বাংলা বিভাগ ছিল না। কিন্তু অধ্যক্ষ মো. আব্দুর রহিম তার স্ত্রী রত্না খানম ওরফে রত্না বেগমকে ওই কলেজে নিয়োগ দেওয়ার অসৎ উদ্দেশ্যে সমাজকল্যাণ বিভাগের পরিবর্তে কর্তৃপক্ষকে সেভাবে বুঝিয়ে তিনি বাংলা বিভাগের অনুমোদন করিয়ে আনেন।

পরে বাংলা বিভাগে জনবল নিয়োগের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়, যেখানে বাংলা স্নাতক (সম্মান) বিষয়ে ৫ জন ও স্নাতক (পাস) বিষয়ে ১ জনসহ মোট ৬ জন প্রভাষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ২০১৩ সালে ১৬ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য নিয়োগ পরীক্ষার জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) ডিজির প্রতিনিধি হিসেবে ওই পদে প্রথমে নূর মোহাম্মদকে সহকারী অধ্যাপক (বাংলা) পদে মনোনয়ন দেওয়া হলেও বাঞ্ছারামপুর ডিগ্রি মহাবিদ্যালয়ের রেকর্ডে তা ফ্লুয়িড দিয়ে টেম্পারিং করে নূর মোহাম্মদের পরিবর্তে হাত দিয়ে বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক সায়েরা বেগমের নাম লেখা হয়। পরে একই স্মারকে সায়েরা বেগমের নাম উল্লেখ করে সংশোধিত স্মারকে প্রতিস্থাপন করিয়ে আনা হয়।

অধ্যক্ষ মো. আব্দুর রহিম তার স্ত্রী রত্না খানম ওরফে রত্না বেগমের নিয়োগ বোর্ডে সদস্যসচিব ছিলেন। তার স্ত্রী আবেদন করা সত্ত্বেও তিনি তা গোপন রাখেন এবং তিনি নিয়োগ বোর্ড থেকে সরে দাঁড়াননি। তিনি বাংলা বিষয়ের পরীক্ষায় সায়েরা বেগমকে ব্যবহার করে নিয়োগ পরীক্ষায় তার স্ত্রীর সফলতার জন্য পরিকল্পনা করেন। ওই কলেজে প্রভাষক (বাংলা) পদে ৬ জনকে নিয়োগের জন্য কমপক্ষে ১২ জন প্রার্থীর প্রয়োজনীয়তা থাকা সত্ত্বেও সেখানে মাত্র ৫ জন প্রার্থী ছিলেন। সায়েরা বেগম পরীক্ষা কমিটির বাংলা বিভাগের প্রধান হিসেবে বা অধ্যক্ষ আবদুর রহিম নিয়োগ বোর্ডের সদস্যসচিব হিসেবে কোনো আপত্তি উত্থাপন করেননি বা পুনঃনিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ব্যবস্থা করেননি। রত্না খানম ওরফে রত্না বেগম নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফলে ৫ জন প্রার্থীর মধ্যে চতুর্থ হন। পরিকল্পনানুযায়ী মোতাবেক সায়েরা বেগম রত্না খানমসহ ৪ জনকে নিয়োগের সুপারিশ করেন।

আসামিদের বিরুদ্ধে সরকারি ক্ষমতা ও আর্থিক সুবিধাদি অবৈধভাবে ভোগের মাধ্যমে সরকারের আর্থিক ক্ষতিসাধন করে দণ্ডবিধির ৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/৪০৯/১০৯ ধারা এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

ঘটনার সঙ্গে অন্য কারও সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তা মামলার তদন্তকালে দেখা হবে। তাদের দ্বারা সরকারি আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ মামলার তদন্তকালে নিরূপণ করা হবে বলেও এজাহারে বলা হয়েছে।

এসএম/ইএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।