ঈদের ৫ দিন
৯৯৯-এ ১ লাখ ১৫ হাজার কল, বেশি মারামারি-শব্দদূষণ সংক্রান্ত
২১ এপ্রিল ঈদের আগের দিন রাত। রাজধানী ঢাকার খিলগাঁও। তিলপাপাড়া থেকে বন্ধু রাহাদ হোসেনের মোটরসাইকেলে চড়ে ওয়ারিতে ঈদের কেনাকাটা করতে যাচ্ছিলেন নওশিন আক্তার। রাত ৯টার দিকে গুলিস্তানে হানিফ ফ্লাইওভারের কাছে বঙ্গভবনের উল্টো পাশে পেছন থেকে একটি ট্রাক তাদের মোটরসাইকেলে ধাক্কা দেয়। এতে পেছনে বসে থাকা নওশিন ছিটকে পড়েন রাস্তায়, গুরুতর আহত হন। পরে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন যায়। তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। আহত হন মোটরসাইকেল চালক রাহাদ।
নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার পাঁচগাঁও গ্রামে ঈদের আগের রাতে উচ্চ শব্দে মাইক চলছিল। মাইকের উচ্চ শব্দে পাশের বাড়ির মৃত্যু পথযাত্রী সোবহান শেখের অবস্থা তখন গুরুতর। অবস্থা বুঝে অসুস্থ সোবহান শেখের ছেলে আহসান হাবীব ৯৯৯ নম্বরে ফোন করেন। পরে ৩০ মিনিটের মধ্যে স্থানীয় থানা পুলিশ মাইক বন্ধ করে দেয়।
আরও পড়ুন>> শব্দ যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে প্রতিদিন ২২ জন কল করে ৯৯৯ এ
এভাবে ঈদের ছুটির পাঁচদিনে (১৯-২৪ এপ্রিল) ৯৯৯-এ ফোন আসে মোট এক লাখ ১৫ হাজারের বেশি। এসব ফোনকলে সবচেয়ে বেশি মারামারি, মাইক বাজিয়ে উচ্চশব্দ সৃষ্টি করা, হামলা ও দুর্ঘটনার তথ্য দেওয়া হয়। এছাড়া ৯৯৯ সংশ্লিষ্ট নয় এমন কলও রয়েছে এর মধ্যে।
জাগো নিউজের হাতে আসা জাতীয় জরুরি সেবা থেকে পাওয়া কলের তালিকা বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া যায়।
১০টি প্রধান সমস্যার তথ্য জানিয়ে ঈদের পাঁচদিনে মোট কল আসে এক লাখ ১৫ হাজারের বেশি। এর মধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মারামারি সংক্রান্ত কারণে ফোন আসে দুই হাজার ৮২৫টি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উচ্চ স্বরে গান-বাজনা ও মাইকিংসহ বিভিন্ন শব্দদূষণের প্রতিকার চেয়ে ৯৫৭ জন ভুক্তভোগী কল করেন।
জুয়া খেলা সংক্রান্ত সমস্যার প্রতিকার চেয়ে কল করেন ৬১৬ জন, অগ্নিকাণ্ড সংক্রান্ত তথ্য জানিয়ে কল করেন ৫৭৯ জন, নারী নির্যাতনের প্রতিকার রোধে কল ৫৭৩ জন, ঈদে বাড়ি ফেরা ও ঘুরতে বেরিয়ে দুর্ঘটনায় পড়ার তথ্য জানিয়ে কল ৫৬৯ জন, সন্ত্রাসীমূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে কল ৪৯৬ জন, ঈদে পারিবারিক কলহের প্রতিকারের জন্য কল ৪৮৩ জন, আগুন নিয়ন্ত্রণের জন্য কল ৪৬০ জন ও জমি দখল সংক্রান্ত কল করেন ৪০০ জন ভুক্তভোগী। এছাড়া জমি, চুরি, কিশোর গ্যাং কর্মকাণ্ড ও আত্মহত্যাসহ সড়কে পড়ে থাকা মরদেহ উদ্ধারে বিভিন্ন এলাকা থেকে কল আসে ৯৯৯-এ।
আরও পড়ুন>> ৯৯৯-এ ফোন করে বলতে হবে না নাম-ঠিকানা-অবস্থান
ঈদের সময় জরুরি প্রয়োজনে কিংবা পুলিশি সহায়তার প্রয়োজন হলে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন করে সহায়তা নিতে আহ্বান জানিয়েছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, সপ্তাহে সাতদিন ২৪ ঘণ্টা চালু আছে সেবাটি। ল্যান্ডফোন বা মোবাইল থেকে ৯৯৯-এ খরচ ছাড়াই কল করা যাবে। ৯৯৯ জরুরি সেবা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের আওতাধীন বাংলাদেশ পুলিশ পরিচালিত একটি কর্মসূচি। যার অধীনে দেশের নাগরিকদের জরুরি সেবা দিতে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্স সেবা দেওয়া হয়। সপ্তাহে সাতদিন ২৪ ঘণ্টা চালু রয়েছে এই সেবা। যে কোনো ল্যান্ডফোন বা মোবাইল নম্বর থেকে সম্পূর্ণ টোল ফ্রি কল করে দেশের নাগরিকরা এসব সেবা পাবেন।
জাতীয় জরুরি সেবার পরিদর্শক (ট্রেইনার, ফোকাল পারসন অ্যান্ড পাবলিক রিলেসন্স) আনোয়ার সাত্তার জাগো নিউজকে বলেন, ঈদে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছুটি থাকলেও জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯ এ কোনো ছুটি থাকে না। রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করতে হয়।
তিনি বলেন, গত ঈদুল ফিতরে ৯৯৯-এ বিভিন্ন সহায়তার জন্য ফোন কল এসেছে প্রায় এক লাখ ১৫ হাজার। প্রতিদিন গড় করলে এ কলের সংখ্যা প্রায় ২৩ হাজারের মতো।
সেবামূলক এ সংস্থার প্রধান হিসেবে রয়েছেন একজন উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি)। এছাড়া আছেন একজন পুলিশ সুপার, তিনজন সহকারী পুলিশ সুপার, ৩৫ জন পরিদর্শক, ২৬ জন উপ-পরিদর্শক (এসআই), ৩৪ জন সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) এবং ৩২৩ জন কনস্টেবল। এর মধ্যে ৬৩ জন নারী। এছাড়া ফায়ার সার্ভিসের আট ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ছয়জন কর্মরত ৯৯৯-এ।
আরও পড়ুন>> ঈদে যে কোনো প্রয়োজনে ৯৯৯-এর সহায়তা নিন: স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
জাতীয় জরুরি সেবার নম্বরে শুধু যে যুক্তিসঙ্গত ফোন আসে তা কিন্তু নয়। অকারণেও অনেক ফোনকল আসে। একই নম্বর থেকে একাধিকবার ব্লাঙ্ক কলও দেওয়া হয়। এসব ফোন নম্বরে ৯৯৯ থেকে সতর্ক করে পাঠানো হয় মেসেজ।
যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া কোনো ব্যক্তিকে টেলিফোন করে বিরক্ত করলে তার শাস্তির বিধান রয়েছে আইনে। এ ধরনের অপরাধে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়ার কথা বলা আছে।
জানা যায়, ২০২১ সালের ১ জুলাই বিরক্ত করা কলের জন্য দণ্ডের বিধান রেখে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন ২০০১ এর ধারা ৭০ (১) সংশোধন করা হয়। এই আইনে যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া কল দিলে এক লাখ টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড হতে পারে। এমনকি মোবাইল কোর্টের মাধ্যমেও বিরক্তিকর কলারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।
টিটি/এএসএ/এএসএম