‘বাংলাদেশ এখন মধুর চাক, অনবরত মৌমাছি ভিড়ছে’

সায়েম সাবু
সায়েম সাবু সায়েম সাবু , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৬:১১ পিএম, ০৫ মে ২০২৩

ড. ইমতিয়াজ আহমেদ। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক। পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, কানাডার কার্লটন বিশ্ববিদ্যালয় এবং অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন জাপানের ইয়োকোহামা সিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখন অধ্যাপনা করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে।

মধ্যপ্রাচ্যে পরিবর্ত রাজনীতি ও দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে মুখোমুখি হন জাগো নিউজের। দুই পর্বের সাক্ষাৎকারের আজ থাকছে শেষটি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সায়েম সাবু।

জাগো নিউজ: ইন্দো-প্যাসেফিক অঞ্চলে বাংলাদেশ তার অবস্থান নিয়ে পলিসি ঘোষণা করেছে। যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন এ অঞ্চলে ‘কোয়াড’ নামে সামরিক জোটে বাংলাদেশকেও পাশে চাইছে। চীন আপত্তি জানিয়েছে আগেই। কী ঘটছে এখানে?

অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ: বাংলাদেশ তার পলিসি ঘোষণার মধ্য দিয়ে অবস্থান পরিস্কার করেছে। প্রথম এমন একটি পলিসি গঠন করেছে বাংলাদেশ। এতে দেশের অবস্থানটা পরিস্কার হয়েছে।

ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল একটি মুক্ত এলাকা হবে তা নিয়ে বাংলাদেশ পলিসিতে জানিয়েছে। একই সঙ্গে নিজ দেশের সার্বভৌমত্ব এবং নিরাপত্তার বিষয়টিও পরিস্কার করেছে।

বাংলাদেশ একটি বিষয় বারবার অনুধাবন করছে, এটি হচ্ছে, উন্নয়ন প্রশ্নে কোনো দেশের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার ব্যাপারে ঘাটতি রাখতে চায় না। কিন্তু এমন কোনো সম্পর্কে জড়াবে না, যা তৃতীয় কোনো দেশের বিপক্ষে যাবে। সামরিক জোট এ কারণেই বাংলাদেশ এড়িয়ে চলছে। সামরিক জোট মানে কোনো দেশ বা জোটের বিপক্ষে অবস্থান। অর্থনৈতিক জোটে এমন পক্ষ-বিপক্ষ থাকে না।

আরও পড়ুন>>অর্থনীতি ও সামরিক শক্তিতে ইরানের অগ্রগতি ঈর্ষণীয়

যেমন, পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংক ঋণ দিলো না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেমে থাকেননি। নিজস্ব অর্থে চীনের সহায়তায় সেতু গড়ে তুললো। এই সেতুর সুফল এখন সবাই পাবে। জাপান, যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য এই সেতু দিয়ে আনা-নেওয়া হবে।

মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর করে দিচ্ছে জাপান। এখানে সব দেশের জাহাজই ভিড়বে। সুবিধা সব দেশেই পাবে। এটিই অর্থনৈতিক উন্নয়ন। সামরিক জোট এই বিবেচনায় সম্ভব না। বাংলাদেশ নিজ থেকে আরেকটি দেশের বিপক্ষে অবস্থান নেবে, এটি ঠিক না।

আরও পড়ুন>> ইরান-সৌদি সম্পর্ক বিশ্ব রাজনীতির নতুন মোড়

জাগো নিউজ: শেখ হাসিনার সরকার কোন দিকে ঝুঁকছে? যুক্তরাষ্ট্র নাকি চীনে? এমন প্রশ্নে জনমনও দ্বিধান্বিত। আপনার কোনো বিশ্লেষণ?

ইমতিয়াজ আহমেদ: আমার কাছে মনে হয়েছে শেখ হাসিনার সরকার একটি কৌশলগত অবস্থান নিয়ে উভয়পক্ষের সঙ্গেই ভালো সম্পর্ক রাখতে চাইছে। ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ বঙ্গবন্ধুর এমন নীতিই অনুসরণ করছে। সামরিক কোনো সম্পর্ক গড়ে কারও পক্ষেই যাবে না বলে বিশ্বাস করি।

জাগো নিউজ: এটিকে ব্যালেন্স নীতি বলা যায়?

ইমতিয়াজ আহমেদ: আমি তা বলবো না। ব্যালেন্স নীতি তা নয়। বাংলাদেশ বলতে চাইছে তোমার সঙ্গে আমার উন্নয়নের সম্পর্ক। এই সম্পর্ক থেকে চীন বা রাশিয়াকে আমি শত্রু বানাতে পারি না। আবার চীনকেও বোঝাতে চাইছে, তোমার কারণে আমি পশ্চিমা বিশ্বকে শত্রু বানাতে চাই না। এমন শত্রু শত্রু খেলায় আমি নেই।

জাগো নিউজ: বাংলাদেশ এখন এমনটি বলতে পারার সক্ষমতা রাখে! আপনি মনে করছেন?

ইমতিয়াজ আহমেদ: বাংলাদেশের ইতিহাস অর্ধশত বছরের। অনেক দূর এগিয়ে বাংলাদেশ এখন সফলতার গল্প বলছে। বিশেষ করে গত দুই দশকে বাংলাদেশ যে উন্নয়নের পথে হাঁটছে তা বিশ্বকে তাক লাগিয়েছে।

বাংলাদেশ এখন মধুর চাক, অনবরত মৌমাছি ভিড়ছে। এই মধুটা বাড়ানো দরকার। তাহলে মৌমাছি আরও বাড়বে। আমার উন্নয়ন, প্রবৃদ্ধি যদি ধরে রাখতে না পারি, তাহলে সবাই মুখ ফিরিয়ে নেবে।

আমরা চাইছি বলে অন্যরা বাংলাদেশকে গুরুত্ব দিচ্ছে এমন নয়। অন্যের প্রয়োজনে বাংলাদেশকে গুরুত্ব দিচ্ছে। এটি বুঝতে হবে। মধু তৈরির কাঠামোটা তৈরি করতে হবে আরও ব্যাপকভাবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, সুশাসন জোরদার করতে পারলে বাংলাদেশ বৈশ্বিক দরকষাকষি করতে আরও সুযোগ পাবে। সামরিক অংশীদারত্বই সব নয়। অর্থনৈতিক অংশীদারত্বই আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

এএসএস/এএসএ/এএসএম

বাংলাদেশ এখন মধুর চাক, অনবরত মৌমাছি ভিড়ছে। এই মধুটা বাড়ানো দরকার। তাহলে মৌমাছি আরও বাড়বে। আমার উন্নয়ন, প্রবৃদ্ধি যদি ধরে রাখতে না পারি, তাহলে সবাই মুখ ফিরিয়ে নেবে

বাংলাদেশ একটি বিষয় বারবার অনুধাবন করছে, এটি হচ্ছে, উন্নয়ন প্রশ্নে কোনো দেশের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার ব্যাপারে ঘাটতি রাখতে চায় না। কিন্তু এমন কোনো সম্পর্কে জড়াবে না, যা তৃতীয় কোনো দেশের বিপক্ষে যাবে। সামরিক জোট এ কারণেই বাংলাদেশ এড়িয়ে চলছে

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।