গোলটেবিল বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী

বাংলাদেশের সবচেয়ে শক্তিশালী অংশীদার হতে পারে যুক্তরাষ্ট্র

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:৪২ এএম, ০৩ মে ২০২৩
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে ইউএস চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট/ছবি: পিআইডি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সবচেয়ে শক্তিশালী অংশীদার হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে আমাদের একক বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য, বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের বৃহত্তম উৎস, দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়ন অংশীদার এবং প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস।’

তিনি বলেন, ‘আমি আশাবাদী যে, যুক্তরাষ্ট্র এ চ্যালেঞ্জিং উদ্যোগে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, প্রযুক্তি স্থানান্তর এবং পারস্পরিক সুবিধার জন্য একটি মসৃণ ও অনুমানযোগ্য সরবরাহ শৃঙ্খল তৈরির মাধ্যমে আমাদের দীর্ঘমেয়াদি উৎপাদনশীল অংশীদার হবে।’

মঙ্গলবার (২ মে) ইউএস চেম্বার অব কমার্স ওয়াশিংটন ডিসির গ্রেট হলে ‘ইউএস-বাংলাদেশ ইকোনমিক পার্টনারশিপ: শেয়ার্ড ভিশন ফর স্মার্ট গ্রোথ’ শীর্ষক উচ্চপর্যায়ের এক্সিকিউটিভ বিজনেস গোলটেবিল বৈঠক হয়। বৈঠকে মূল বক্তব্য উপস্থাপনকালে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

বাংলাদেশের সবচেয়ে শক্তিশালী অংশীদার হতে পারে যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশের একটি প্রধান অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন সহযোগী উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘উভয় দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগসহ অনেক ক্ষেত্রে নিবিড় সম্পৃক্ততা রয়েছে। আমাদের অভিন্ন লক্ষ্য হলো- জনগণের জন্য পারস্পরিক সুবিধা ও সমৃদ্ধি অর্জন করা। আমাদের ক্রমবর্ধমান দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও জনগণের সঙ্গে জনগণের সম্পর্কে তা প্রতিফলিত হচ্ছে। ২০২১-২২ সালে বাংলাদেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১০ দশমিক ৪২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছে এবং ২ দশমিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে।’

আরও পড়ুন>> ৫ প্রকল্পে বাংলাদেশকে আড়াই বিলিয়ন ডলার দেবে বিশ্বব্যাংক

উপকূলীয় অঞ্চলে বাংলাদেশে একটি শিল্পকেন্দ্র গড়ে তোলার লক্ষ্যে জাপানের প্রস্তাবের উদাহরণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য এখন যুক্তরাষ্ট্রসহ আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক অংশীদারদের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নীত করা। সরকারের প্রচেষ্টায় গত ১৪ বছরে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য আর্থ-সামাজিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। বাংলাদেশ এখন সর্বজনীনভাবে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের রোল মডেল হিসাবে স্বীকৃত।

‘সুশাসনের ধারাবাহিকতা, আইনের শাসন ও স্থিতিশীলতা, গ্রামীণ অর্থনীতিতে বিনিয়োগ, নারীর ক্ষমতায়ন এবং আইসিটি খাতে অগ্রগতির কারণে এটা সম্ভব হয়েছে, যা আমাদেরকে ডিজিটাল বাংলাদেশ অর্জনের পথে এগিয়ে নিয়ে গেছে। এ কারণেই বাংলাদেশের ব্র্যান্ড ভ্যালু দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ব্র্যান্ড ফাইন্যান্স ইউকে জানিয়েছে, বাংলাদেশের ব্র্যান্ড ভ্যালু গত বছর ৩৭ শতাংশ বেড়েছে, যা বিশ্বে সর্বোচ্চ এবং গ্লোবাল সফট পাওয়ার ইনডেক্স ২০২৩ অনুযায়ী দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারতের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান’ যুক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে একটি স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা। এ রূপকল্প ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উচ্চ আয়ের উন্নত দেশে পরিণত করবে। স্মার্ট বাংলাদেশ মানে অন্তর্ভুক্তিমূলক হওয়া এবং স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট সমাজের ওপর এ ধারণা প্রতিষ্ঠিত।

jagonews24

প্রধানমন্ত্রী এর আগে ইউএস চেম্বার অব কমার্সের ব্রিফিং সেন্টারে ইউএসবিবিসির সিনিয়র এক্সিকিউটিভদের সঙ্গে দুটি পৃথক বৈঠকে এবং ইউএস চেম্বার অ্যান্ড কমার্সের প্রেসিডেন্ট ও সিইওদের সঙ্গে আরেকটি বৈঠকে যোগ দেন।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ একটি গর্বিত নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে ২০২১ সালে স্বাধীনতার ৫০তম বার্ষিকী উদযাপন করেছে। বাংলাদেশ আজ দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে দ্রুত বিকাশমান অর্থনীতি এবং বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতি। অনুমান করা হচ্ছে, এ অর্থনীতি ২০৩০ সালের মধ্যে ২৫তম বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হবে।

আরও পড়ুন>> স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে পাশে থাকবে বিশ্বব্যাংক, আশা প্রধানমন্ত্রীর

তিনি বলেন, ক্রয়ক্ষমতার দিক থেকে বাংলাদেশ এরইমধ্যে ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি। এটি প্রকৃত মূল্যে কয়েক বছরের মধ্যে ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি হতে চলেছে। আমাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নীতিগুলো অনেক ক্ষেত্রেই বাংলাদেশকে আমাদের দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশীদের চেয়ে এগিয়ে নিয়ে গেছে। বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় বৃহত্তর প্রতিবেশীদের তুলনায় বেশি। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম বাংলাদেশকে নারীর ক্ষমতায়নে শীর্ষ দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষ দেশ হিসেবে এবং বিশ্বব্যাপী নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে শীর্ষ দশটি দেশের মধ্যে স্থান দিয়েছে।

সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশ ১৭ কোটি জনসংখ্যার বাজার। এর ভৌগোলিক অবস্থান ৩ বিলিয়ন জনসংখ্যার বাজারের কেন্দ্রে রয়েছে। বাংলাদেশ এখন এ অঞ্চলে ও এর বাইরেও বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য একটি আদর্শ জায়গা হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। আমাদের ভৌত, আইনি এবং আর্থিক অবকাঠামো উন্নত করা হচ্ছে। অবকাঠামোতে বিনিয়োগের মাধ্যমে সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার জন্য সরকারের প্রচেষ্টা সারাদেশে দৃশ্যমান।

jagonews24

তিনি বলেন, দেশের বৃহৎ পদ্মা নদীর ওপর গত বছর আমরা নিজস্ব অর্থায়নে আমাদের দীর্ঘতম সেতু নির্মাণ সম্পন্ন করেছি, যা এখন আঞ্চলিক উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ নজির। বর্তমান সরকার মেট্রোরেল নির্মাণ করেছে এবং গভীর সমুদ্রবন্দরসহ বন্দরের অবকাঠামো উন্নত করেছে। এগুলো অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক সংযোগ বাড়িয়েছে। আমাদের জলবায়ু দায়িত্বশীল প্রবৃদ্ধি নীতি, শ্রম সংস্কার এবং শ্রম নিরাপত্তা মান উন্নয়ন প্রশংসার দাবিদার।

আরও পড়ুন>> দেশ বিক্রি নয়, উন্নয়নের উচ্চতা বাড়াতে সফরে প্রধানমন্ত্রী: কাদের

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশ গর্বিত যে ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবিসি) দ্বারা প্রত্যায়িত বিশ্বের শীর্ষ ১০০টি সবুজ পোশাক কারখানার মধ্যে ৫৩টি বাংলাদেশে। বাংলাদেশ ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হবে। এর জন্য আমাদের বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা বাড়াতে এবং রপ্তানি ভিত্তি প্রসারিত করতে সমর্থন প্রয়োজন হবে।

এসময় প্রধানমন্ত্রীর আইসিটিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল পরিচালনা পর্ষদের পরিচালক এবং চেয়ারম্যান এক্সেলরেট এনার্জি স্টিভেন কোবোস, বোস্টন কনসাল্টিং গ্রুপের গ্লোবাল চেয়ার ইমেরিটাস (বিসিজি) হ্যান্স-পল বার্কনার, মাস্টারকার্ডের গ্লোবাল পাবলিক পলিসি অ্যান্ড ইন্দো-প্যাসিফিক পলিসি অপারেশনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট রবি অরোরা, বিকাশের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কামাল কাদির, শেভরন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর এরিক ওয়াকার এবং গ্লোবাল হেড অব এক্সপ্রোরেশন অ্যান্ড নিউজ এক্সনমোবিলের ভেঞ্চার ড. জন আর্ডিল উচ্চস্তরের গোলটেবিলে বক্তৃতা করেন।

বাংলাদেশের সবচেয়ে শক্তিশালী অংশীদার হতে পারে যুক্তরাষ্ট্র

ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট এবং ইউএস চেম্বার অব কমার্সের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট-সাউথ এশিয়া অ্যাম্বাসেডর অতুল কেশপ বৈঠকে স্বাগত বক্তব্য রাখেন।

আরও পড়ুন>> মাথা নিচু করে দেশবাসীকে অসম্মান করতে চাই না: প্রধানমন্ত্রী

অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, বোয়িং ইন্ডিয়া ও দক্ষিণ এশিয়ার প্রেসিডেন্ট শাইল গুপ্ত, ইউএস সয়াবিন এক্সপোর্ট কাউন্সিলের দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান কেভিন রোপেকে প্রমুখ।

অন্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন টইউজ-এর পাবলিক পলিসি অ্যান্ড গভর্নমেন্ট অ্যাফেয়ার্স-এশিয়া প্যাসিফিক মাইক অরগিল, ইউএস চেম্বার অব কমার্সের দক্ষিণ এশিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট রায়ান মিলার, ইউএস চেম্বার অব কমার্সের নির্বাহী পরিচালক সন্দীপ মাইনি এবং ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের পরিচালক সিদ্ধান্ত মেহরা।

এএএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।