জনসংখ্যার অর্ধেকই শ্রমশক্তি, বাড়ছে নারীর অবদান
মিরপুর ৬০ ফুট বারেক মোল্লায় থাকেন মোমেনা খাতুন (৫৫)। সংসারে স্বামী ও তিন সন্তান। একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দিয়েছিলেন, বছর দেড়েক হলো তালাক দিয়েছে তার স্বামী। মেয়ের ফুটফুটে একটি বাচ্চাও আছে। সংসারের সদস্য অনেক। স্বামী অন্যের বাড়িতে গেট কিপারের কাজ করে মাসে আয় করেন ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। এই টাকা দিয়ে সংসার চলে না। ফলে অন্যের বাড়িতে কাজ করেন মোমেনা। দৈনিক তিনজনের বাড়িতে রান্না, ঘর মোছার কাজ করে মাসে তার আয় পাঁচ হাজার টাকা।
মোমেনা মলেন, ‘আপনার মামা যে আয় করে তা দিয়ে সংসার চলতো না। তাই পরের বাসায় কাম করি।’
নগরীর শেরেবাংলা নগরে ছোট দোকান দিয়ে বসে আছেন নাদিয়া বেগম। সংসারের টুকিটাকি সব জিনিস বিক্রি হয় দোকানে। স্বামী আরিফুল হক শুধু মালামাল কিনে আনেন। দোকানের বাকি সব কিছুই সামলান নাদিয়া।
পোশাক শ্রমিক নাসিমা আক্তার এক সময় তাজরীন পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে আহত নাসিমা দমে যাননি। অন্যের বাসায় কাজ করেন এখন। তবে ক্ষতিপূরণের আশায় এখনো আন্দোলন করে যাচ্ছেন।
নাসিমা, মোমেনা, নাদিয়ার মতো শ্রমশক্তিতে নারীর উপস্থিতি এভাবে বেড়েই চলেছে।
আরও পড়ুন>> অটো চালানোকেই পেশা হিসেবে নিয়েছেন সাহিদা
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রকাশিত শ্রমশক্তি জরিপ ২০২২-এর তথ্য বলছে, দেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১। এর মধ্যে বর্তমানে দেশে শ্রমশক্তি ৭ কোটি ৩৪ লাখ ১০ হাজার। মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই শ্রমশক্তি। মোট শ্রমশক্তির মধ্যে পুরুষ ৪ কোটি ৭৪ লাখ ৮ হাজার এবং নারী ২ কোটি ৫৯ লাখ ৩ হাজার। তবে ১৫ বা তদুর্ধ্ব বয়সী শ্রমশক্তির বাইরে রয়েছে এমন জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ৪ কোটি ৬৯ লাখ।
দেশে গত পাঁচ বছরে বেকারের সংখ্যা কমে ২৬ লাখ ৩০ হাজারে নেমেছে, যেটি ২০১৬ সালের হিসাবে ছিল ২৭ লাখ। এসব ব্যক্তি সপ্তাহে এক ঘণ্টাও কাজ পায় না। এর মধ্যে বেকার পুরুষ ১৬ লাখ ৯০ হাজার আর বেকার নারী ৯ লাখ ৪০ হাজার।
আরও পড়ুন>> সবজি বেচেই টিকে আছেন রাহিলা-নুরজাহান-সেলিনারা
শ্রমশক্তিতে ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের তরুণ শ্রমশক্তি হিসেবে ধরা হয়। ছয় বছরে ৬৭ লাখ ২০ হাজার তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান হয়েছে। ২০১৭ সালে শ্রমশক্তিতে থাকা ২ কোটি ১ লাখ তরুণ-তরুণী কাজে নিয়োজিত ছিলেন। এখন এমন তরুণের সংখ্যা বেড়ে ২ কোটি ৬৮ লাখ ২০ হাজার হয়েছে। সুখবর হলো, গত ছয় বছরে এ বয়সী নারীরা বেশি কাজ পেয়েছেন। গত ছয় বছরে বাড়তি ৬৩ লাখ ১০ হাজার তরুণী কাজে নেমেছেন। অন্যদিকে, নতুন করে এমন বয়সী মাত্র ৪ লাখ ১০ হাজার তরুণ কাজ পেয়েছেন। শ্রমশক্তিতে এভাবে বাড়ছে নারীর উপস্থিতি।
বিবিএসের তথ্য বলছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরের তুলনায় ২০২২ সালে বেকারত্বের হার কমেছে। আগে যেখানে বেকারত্বের হার ছিল ৪ দশমিক ২ শতাংশ, এখন কমে সেটি হয়েছে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। ২০২২ সাল পর্যন্ত শ্রমিকের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৭ কোটি ৩৪ লাখ ১০ হাজার। গত পাঁচ বছরে ৯৯ লাখ ১০ হাজার শ্রমিক বেড়েছে।
জরিপে বলা হচ্ছে, শ্রমশক্তির বাইরে মোট জনশক্তি ৪ কোটি ৬৯ লাখ। ২০১৬ সালের তুলনায় এ সংখ্যা ১৪ লাখ বেড়েছে। দেশে গড় বেকারত্বের হার ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। এর মধ্যে পুরুষ ৩ দশমিক ৫৬ এবং নারী ৩ দশমিক ৬৩ শতাংশ। তাছাড়া, দেশে এখন ৭ কোটি ৭ লাখ কর্মক্ষম ব্যক্তি রয়েছেন। এর মধ্যে কৃষিখাতে সবচেয়ে বেশি, ৩ কোটি ২২ লাখ।
আরও পড়ুন>> মে দিবসের ইতিহাস বেশিরভাগ মানুষেরই অজানা
বিবিএস জরিপে উঠে এসেছে, শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণের হার ৪২ দশমিক ৬৮ শতাংশ। এর মধ্যে গ্রামে ৫০ দশমিক ৮৯ ও শহরে ২২ দশমিক ৫৯ শতাংশ নারী শ্রমশক্তি।
শ্রমশক্তি জরিপে দেখা যায়, কৃষিখাতে ৩২ দশমিক ২, শিল্পে ১২ দশমিক ০৫ ও সেবাখাতে ২৬ দশমিক ৬৫ মিলিয়ন জনগোষ্ঠী কাজে নিয়োজিত। কৃষি ও সেবাখাতে শ্রমশক্তি বেড়েছে।
জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, এখন দেশের শ্রমশক্তি ৭ কোটি ৩৪ লাখ ১০ হাজার। এর মধ্যে কাজে নিয়োজিত ৭ কোটি ৭ লাখ ৮০ হাজার মানুষ। ২০১৭ সালে এই সংখ্যা ছিল ৬ কোটি ৮ লাখ। এই সময়ের মধ্যে প্রায় ৯৯ লাখ কর্মসংস্থান বেড়েছে।
কৃষিখাতে কর্মজীবী মানুষের অংশগ্রহণও বেড়েছে। গত ছয় বছরে এই খাতে বেড়েছে ৭৫ লাখ কর্মজীবী। ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে কৃষিখাতে কর্মসংস্থান বাড়ার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, কোভিডের কারণে বিপুলসংখ্যক মানুষ গ্রামে ফিরে গেছেন। তাদের অনেকেই কৃষিখাতে শ্রমিক হিসেবে নিয়োজিত আছেন। এছাড়া শিল্প খাতে ১ কোটি ২০ লাখ লোক এবং সেবা খাতে ২ কোটি ৮৩ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে।
এমওএস/এএসএ/এএসএম