রাষ্ট্র আমলাদের হাতে বন্দি: মেনন

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:২৭ পিএম, ৩০ এপ্রিল ২০২৩

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেছেন, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে আমাদের রাষ্ট্র সামরিক ও বেসামরিক আমলাদের হাতে বন্দি হয়ে গেছে। দারিদ্র্যসীমা ও বৈষম্যের ফারাক অনেক বেশি হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, দারিদ্র্যসীমা কমিয়ে আনতে পারলেও সমাজে অর্থনৈতিক বৈষম্য এমনভাবে বেড়েছে যা তুলনাহীন পর্যায়ে চলে গেছে। অনেকে অর্থনৈতিক বৈষম্যের কথা স্বীকার করতে চান না। কিন্তু তারাও এখন বলতে বাধ্য হচ্ছেন।

রোববার (৩০ এপ্রিল) দুপুরে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির কভারেজ এবং কার্যকারিতা কীভাবে উন্নত করা যায়? একটি প্রাথমিক জরিপ থেকে অনুসন্ধান’ শীর্ষক সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

রাশেদ খান মেনন বলেন, সোস্যাল সেফটি বা সামাজিক নিরাপত্তা কোনো দান বা খয়রাত নয়। এটা অধিকার। সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়টি বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে শুরু হয়েছিল। বর্তমান সরকারের আমলে ২০১৫ সালে ভাতার প্রচলন শুরু হয়। এটাকে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি হিসেবে সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।

তিনি বলেন, সামাজিক নিরাপত্তার পরিমাণ ও বরাদ্দ বাড়াতে হবে। সামাজিক নিরাপত্তার মধ্যে সরকারি পেনশনকে অন্তর্ভুক্ত করে বড় বরাদ্দ দেখানো হয়। আমরা এটা বাদ দেওয়ার জন্য বললেও সেটা করা হয়নি। তবে আইএমএফ এবার সেটা আবারও বলেছে। হয়তো এবার সরকার শুনবে। কারণ, আমরা বিদেশিদের কথা ভালো শুনি। আজকে সামাজিক নিরাপত্তার আওতা বাড়াতে সিপিডি যে প্রস্তাব দিয়েছে, সেটা যৌক্তিক।

সামাজিক ভাতা পাওয়ার যোগ্য লোক শনাক্তকরণে দুর্নীতি রয়েছে জানিয়ে মেনন বলেন, তবে এক্ষেত্রে মনিটরিং করার জন্য সমাজকল্যাণ অধিদপ্তরের পর্যাপ্ত লোকবল সংকটও রয়েছে।

সভায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, নগর দরিদ্ররা কারও নজরে আসে না। হরিজনদের ক্যাম্পে যান, তাহলে প্রকৃত চিত্র দেখবেন। নগর দরিদ্র আমরা খেয়ালই করি না। ঢাকা শহরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর মাঠ দখল হয়ে যাচ্ছে। ছাত্র-ছাত্রীদের অবস্থা কী? এ জায়গায় গবেষণা প্রয়োজন। এখনো প্রাথমিক শিক্ষায় উপবৃত্তি ২০১৫ সাল থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। কারও কি নজরে আসে না?

তিনি বলেন, সিপিডি দেখিয়েছে কীভাবে টাকাগুলো আসতে পারে। কেন কর ফাঁকি রোধ করা হচ্ছে না। কেন শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়ছে না। কোভিডের কারণে যারা ঝরে গেল, তাদের কি খাতা থেকে বাদ দিয়ে দিলাম। ৪৭ হাজার ছাত্র-ছাত্রী যারা শিশুশ্রম ও বাল্যবিবাহের শিকার তাদের কেন উপবৃত্তি থেকে বাদ দেওয়া হলো। তাদের কেন ফিরিয়ে আনা গেল না, সেটাই বড় প্রশ্ন।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে সিপিডি জানায়, বর্তমানে বয়স্ক ও বিধবা ভাতার ক্ষেত্রে মাসে ৫০০ টাকা ও শিক্ষা উপবৃত্তির জন্য মাসে ১৫০ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। সামাজিক ভাতাপ্রাপ্তদের মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ বয়স্ক ও ৩৩ শতাংশ বিধবা অযোগ্য সুবিধাভোগী রয়েছে। এদের মধ্যে আবার প্রায় ১২ শতাংশ পেনশন, ভিজিডি বা অন্যান্য ভাতা নিচ্ছে। এর মাধ্যমে প্রায় ১৫০০ কোটি টাকা অযোগ্য সুবিধাভোগীদের জন্য ব্যয় করা হচ্ছে। যা প্রতিরোধ করা প্রয়োজন।

প্রতিষ্ঠানটি মনে করে, দরিদ্র এবং দুর্বলদের চিহ্নিত করতে দারিদ্র্যপ্রবণ এলাকায় একটি কার্যকরী পারিবারিক জরিপ করা উচিত। অন্যদিকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করা ও যথাযথ কাগজপত্রের অভাবে ৫ থেকে ৩০ শতাংশ ছাত্রছাত্রী উপবৃত্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাদেরও এ সুবিধার আওতায় আনা প্রয়োজন।

প্রবন্ধে আরও বলা হয়, সুবিধাভোগীদের কভার করার জন্য অতিরিক্ত চার হাজার ৩০২ কোটি টাকা প্রয়োজন। যা অযোগ্যদের দেওয়ার মাধ্যমে অপব্যবহার হওয়া ১৫০০ কোটি টাকা থেকে পরিচালনা করা যেতে পারে। ওই টাকার মাধ্যমে ভাতার প্রকৃত প্রাপ্য এমন ৪৫ শতাংশকে কভার করা সম্ভব।

এতে বলা হয়, বর্তমান সুবিধাভোগীর প্রয়োজন বিবেচনায় পরিমাণ যদি বাড়ানো যায় অর্থাৎ ২০০০ থেকে ২৫০০ টাকা করা যায়, তাহলে অতিরিক্ত ৩ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকা লাগবে। সরকার কর ফাঁকি ও কর অস্বচ্ছতার মাধ্যমে প্রতিবছর যে রাজস্ব হারাচ্ছে, সেটা যদি আদায় করা সম্ভব হয় তাহলে সেখান থেকে এ অর্থ সংগ্রহ করা সম্ভব।

সিপিডি বলছে, দুর্নীতি কমিয়ে জরিপের মাধ্যমে যোগ্য অ-সুবিধাভোগী চিহ্নিত করে তাদের ভাতার আওতা বাড়ানোর প্রয়োজন।

এসএম/এমকেআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।