পদে পদে ভোগান্তি

টাকা দিলে আগে মেলে জন্মনিবন্ধন সনদ

মুসা আহমেদ
মুসা আহমেদ মুসা আহমেদ
প্রকাশিত: ০১:৫৫ পিএম, ৩০ এপ্রিল ২০২৩

নাগরিকত্ব প্রমাণ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি, চাকরিতে নিয়োগ, জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট নিবন্ধনসহ দেশে ১৯টি ক্ষেত্রে জন্মসনদের প্রয়োজন হয়। আবার কেউ মারা গেলে মৃত্যু নিবন্ধনের জন্যও লাগে জন্মসনদ। এটি না থাকলে উত্তরাধিকার নিশ্চিত করা যায় না। সব মিলে জন্মসনদ একজন নাগরিকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল নথি। অথচ এ সনদ পেতে ভোগান্তির শেষ নেই নাগরিকদের। রয়েছে নানান অভিযোগ।

নাগরিকদের অভিযোগ, যথা সময়ে জন্মসনদ দিতে পারছে না ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। নতুন জন্মসনদে থাকছে ভুল-ভ্রান্তি। সংশোধনে আরেক দফা হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। জন্মনিবন্ধনে সরকার নির্ধারিত টাকার চেয়ে দিতে হয় বেশি টাকা। বেশি টাকা না দিলে যথা সময়ে সনদ পাওয়া যায় না। করপোরেশনের চোখের সামনে এমন ঘটনা ঘটলেও তাদের থাকছে না কোনো ভূমিকা।

তবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সংশ্লিষ্টদের দাবি, তারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জন্মসনদ দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এখানে অনিয়ম-দুর্নীতির সুযোগ নেই। তবে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সফটওয়্যারের ত্রুটি এবং জনবল সংকটের কারণে শতভাগ সেবা পাচ্ছেন না নাগরিকেরা।

আরও পড়ুন>> মিরপুরে জনবল সংকটে বন্ধ জন্মনিবন্ধন কার্যক্রম

জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সফটওয়্যারটির তত্ত্বাবধান করে স্থানীয় সরকার বিভাগের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয় (জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন)। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এ বিভাগের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. রাশেদুল হাসান জাগো নিউজকে বলেন, ‘দেশের আটটি সিটি করপোরেশনসহ সব পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ একই সার্ভার থেকে জন্মনিবন্ধন করে। এতে বিভিন্ন সময় সার্ভারে ত্রুটি দেখা দেয়। এসব সমস্যা সমাধানে আমরা নিয়মিত কাজ করছি। তবে একদিনে সব সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়।

জন্মনিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ করতে উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। এখন সংস্থাটি আলাদা ১০টি অঞ্চল থেকে জন্মনিবন্ধন বিতরণ করে। এটি আরও সহজ করতে ডিএনসিসির পক্ষ থেকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে সংস্থাটি। আবেদনে জন্মনিবন্ধন কার্যক্রম আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে প্রতিটি ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ে এবং যে কোনো সংশোধনীর জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ডিএনসিসির আঞ্চলিক কার্যালয়ে স্থানান্তরের অনুরোধ জানিয়েছে।

জন্মনিবন্ধনে ডিএসসিসি ও ডিএনসিসিতে ভোগান্তির চিত্র

পুরান ঢাকার লালবাগের বাসিন্দা শাহ অলিউল্লাহ। ১৪ মার্চ নিজের জন্মনিবন্ধন করতে লালবাগে ডিএসসিসির অঞ্চল-৩ এর কার্যালয়ে যান তিনি। আলাপকালে শাহ অলিউল্লাহ বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন প্রবাসে থাকায় জন্মনিবন্ধন করা ছিল না। এখন ছেলে-মেয়েদের স্কুলে ভর্তিতে জন্মনিবন্ধন লাগে। তাই দুই মাস আগে এই কার্যালয়ে কাগজপত্র জমা দিয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো কাজ হয়নি। এ অফিসে সেবার নামে আমাদের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।’

আরও পড়ুন>> জন্মনিবন্ধন হারিয়ে গেলে কী করবেন?

হয়রানির ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে শাহ অলিউল্লাহ বলেন, ‘আমি যখন কাগজপত্র জমা দেই, তখন এ অফিসের এক পিয়ন এক হাজার টাকা চেয়েছিল। বলেছিল চার-পাঁচদিনের মধ্যে কাজ হয়ে যাবে। কিন্তু আমি সেটায় রাজি না হয়ে সাধারণভাবে আবেদন করেছি। কিন্তু দেখছি দুই মাসেও কাজ হয়নি।’

একই কার্যালয়ে জন্মনিবন্ধন করতে যান জব্বর আলী ও কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী যুবায়ের ইসলাম। তারা জানান, অফিসে ঢোকা মাত্রই দুই-তিনজন বললো ৫০০ টাকা করে দিন চার-পাঁচদিনের মধ্যে কাজ হয়ে যাবে। অন্যথায় মাসখানেকের মতো সময় লাগবে। তাই কাগজপত্রের সঙ্গে ৫০০ টাকা করে জমা দিয়ে এলাম।

এমন অভিযোগের পর ঘণ্টাখানেক ওই দপ্তরের জন্মনিবন্ধন শাখায় ঘোরেন এ প্রতিবেদক। দেখা যায়, অনেকটা প্রকাশ্যেই জন্মনিবন্ধনের নামে ৫০০ টাকা করে ঘুস নিচ্ছেন ময়না নামে এক অফিস সহায়ক। জানতে চাইলে ময়না বলেন, ‘আমি ৫০০ টাকা করে নিচ্ছি, এটা ঠিক। কিন্তু আমি এখান থেকে এক থেকে দেড়শ টাকা পাই। ওপরে নিচে সব জায়গায় টাকা দিতে হয়। আগে মানুষের চাপ ছিল। তখন এক হাজার থেকে দুই হাজার টাকা নিতাম। এখন চাপ কমে আসায় কম করে টাকা নেই।’

এভাবেই প্রতিদিন টাকার বিনিময়ে ৪০-৫০টা কাজ করে দেন বলে জানান ময়না।

আরও পড়ুন>> পুরোনো জন্মনিবন্ধন অনলাইন করার নিয়ম

ডিএসসিসি এলাকায় জন্মনিবন্ধন সেবা কার্যক্রম তদারকি করে সংস্থাটির স্বাস্থ্য বিভাগ। এই বিভাগের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ফজলে শামসুল কবির জাগো নিউজকে জানান, তাদের অঞ্চলগুলোতে জন্মনিবন্ধন সেবায় এ ধরনের অভিযোগ কেউ করেনি। বিষয়টি তারা পর্যবেক্ষণ করবেন। কেউ অনিয়ম করলে ব্যবস্থা নেবেন।

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি মহাখালীতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) অঞ্চল-৩ এর কার্যালয়ে জন্মনিবন্ধনের আবেদন করেন বনানীর বাসিন্দা খন্দকার রইস আহমেদ। গত ৭ মার্চ তার জন্মনিবন্ধন দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ১৬ মার্চ পর্যন্ত তিনি জন্মনিবন্ধন হাতে পাননি। নিবন্ধন পেতে ওই কার্যালয়ের এক দপ্তর থেকে আরেক দপ্তরে ঘুরছেন। খন্দকার রইস আহমেদ বলেন, ৭ মার্চের পর প্রায় প্রতিদিনই জন্মসনদ নিতে এই অফিসে আসছি। কিন্তু তারা সনদ দিচ্ছে না। এখন বলছে, সার্ভারে ত্রুটি। সনদ দিতে আরও দু-একদিন সময় লাগবে।

গত বছরের ১৬ নভেম্বর একই কার্যালয়ে জন্মনিবন্ধনের জন্য আবেদন করেন কড়াইলের বাসিন্দা মো. মাসুদ রানা। গত ১৫ মার্চ পর্যন্ত তিনি জন্মনিবন্ধন হাতে পাননি। আক্ষেপ করে মাসুদ রানা জাগো নিউজকে বলেন, ‘যে দিনই জন্মসনদ নিতে যাই, তারা বলেন সার্ভারে ত্রুটি। পরে আসেন। এভাবে কয়েক মাস ধরে ঘুরছি। কিন্তু গতকাল (১৫ মার্চ) তারা বলছে, আবেদন ফাইল খুঁজে পাচ্ছে না। এখন আবেদনই যদি না পায়, তা হলে সনদ দেবে কবে?’

আরও পড়ুন>> জন্মনিবন্ধন ইংরেজি করতে করণীয়

মাসুদ রানার আবেদন পাওয়া যাচ্ছে না কেন এবং জন্মসনদ দিতে এত দেরির কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে অঞ্চল-৩ এর জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন সহকারী আব্দুল মান্নান জানান, তিনি এই দপ্তরে এক সপ্তাহ আগে এসেছেন। আবেদন সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না। তবে নাম-ঠিকানা ধরে আবেদনটা অনলাইন থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করছেন।

জন্মনিবন্ধন সনদ পেতে নাগরিকদের এই ভোগান্তির বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএনসিসির অঞ্চল-৩ এর সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. ফিরোজ আলম জাগো নিউজকে জানান, তিনি মূলত অঞ্চল-১ এর (উত্তরা) সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। অঞ্চল-৩ এ সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা না থাকায়, এক সপ্তাহ ধরে এখানে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন।

তিনি বলেন, আমি এ অঞ্চলে এসে দেখি হাজারো আবেদন জমা পড়ে আছে। সনদের জন্য নাগরিকদের দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। অথচ এখন মাত্র আমরা দুজন (আব্দুল মান্নানসহ) এই শাখায় দায়িত্ব পালন করছি। প্রতিদিন এক থেকে দেড়শ মানুষের সনদ দিচ্ছি।

টাকা দিলে আগে মেলে জন্মনিবন্ধন সনদ

একটা অঞ্চলে দুজন লোক দিয়ে কীভাবে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে, তা জানতে গিয়ে ভিন্ন তথ্য পাওয়া গেছে। ডিএনসিসির সচিব দপ্তর সূত্র জানায়, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি জন্মনিবন্ধনে জালিয়াতি করায় অঞ্চল-৫ এর স্বাস্থ্য শাখার জন্ম-মৃত্যুনিবন্ধন সহকারী মাফরুজা সুলতানাকে চাকরিচ্যুত করেছে ডিএনসিসি। তিনি অঞ্চল-৩ ও অঞ্চল-৯ এ অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতেন। এছাড়া একই অভিযোগে অঞ্চল-৩ ও অতিরিক্ত দায়িত্ব অঞ্চল-৯ এর সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (মূল পদ সহকারী সার্জন) আজিজুন নেছাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে নিবন্ধন সহকারী মাফরুজা সুলতানা অঞ্চল-৩ ও অঞ্চল-৯ এ অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনকালে উজবেকিস্তানে জন্ম নেওয়া রুশ বংশোদ্ভূত মা-বাবার সন্তান এলিনা তৌহিদের জন্মনিবন্ধন করেছেন। এছাড়া তিনি স্বাক্ষর জাল করে জন্মনিবন্ধন সনদ প্রদান ও যারা জন্মনিবন্ধন সনদ পাওয়ার যোগ্য নন, তাদেরও সনদ দিয়েছেন।

আরও পড়ুন>> প্রবাসীরা জন্মনিবন্ধন করবেন যেভাবে

অন্যদিকে আজিজুন নেছাকে সাময়িক বরখাস্তের বিষয়ে দেওয়া অফিস আদেশে বলা হয়, তিনি উত্তর সিটির কর্মচারী চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী দায়িত্ব পালনে অবহেলা ও অদক্ষতার অভিযোগে অভিযুক্ত। বিধিমালার ৫৫–এর (১) উপবিধি অনুযায়ী তাকে সাময়িক বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এই দুই কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করায় ডিএনসিসির প্রায় সব অঞ্চলে জন্মনিবন্ধনে ধীরগতি তৈরি হয়েছে। এছাড়া সার্ভারে ত্রুটি থাকায় এ সমস্যা নাগরিকদের আরও বেশি ভোগাচ্ছে।

গত বছরের ১৬ অক্টোবর রাজধানীতে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন দিবস পালন করে রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়। এদিন তাদের আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ডিএসসিসি মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস ও ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। তারা জন্মনিবন্ধন নিয়ে নাগরিক ভোগান্তির বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘দিনের বেলা জন্মনিবন্ধনের সার্ভার ডাউন থাকে। রাতে সার্ভার ঠিক থাকে। ফলে এই সুযোগ গ্রহণ করে দালালচক্র লোকজনের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়।’

টাকা দিলে আগে মেলে জন্মনিবন্ধন সনদ

একই অনুষ্ঠানে ডিএসসিসি মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন নিয়ে সাধারণ মানুষের অসন্তোষ ও ক্ষোভের রোষানলে পড়ি আমরা। কিছু প্রক্রিয়া, আইন ও বিধিগত বিষয়ের কারণে এসব সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধান দেওয়ার ক্ষমতা আমাদের নেই। বিদেশ থেকে বড় বড় ই-মেইল পাই। সমাধান দিতে পারি না। বহির্বিশ্বে ভাবমূর্তি নষ্ট হয়।’

তিনি বলেন, ‘জন্মনিবন্ধন সার্ভারের সক্ষমতা অন্তত চার গুণ বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে হবে, যাতে চার–পাঁচ বছর জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধনের কাজটি অনায়াসে করা যায়।’

টাকা দিলে আগে মেলে জন্মনিবন্ধন সনদ

জন্মনিবন্ধন সেবা কাউন্সিলরদের দিতে চায় ডিএনসিসি

জন্মনিবন্ধনে নাগরিক ভোগান্তি কমাতে উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। সংস্থাটির এক প্রস্তাব অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ে জন্মনিবন্ধন করা যাবে। কাউন্সিলর হবেন নিবন্ধক, আর সহকারী নিবন্ধক হবেন কাউন্সিলর দপ্তরের সচিব। এটি বাস্তবায়ন হলে কাউকে আর কষ্ট করে আঞ্চলিক কার্যালয়ে যেতে হবে না।

আরও পড়ুন>> ঘরে বসে অনলাইনে যেভাবে করবেন জন্মনিবন্ধন

কাউন্সিলর দপ্তরে জন্মনিবন্ধনের কার্যক্রম চালু হলে নাগরিক ভোগান্তি কমবে বলে মনে করেন সেবাপ্রার্থীরা। তারা জানান, জন্মনিবন্ধনের দায়িত্ব জনগণের প্রতিনিধির কাছেই যাওয়া উচিত। এতে নাগরিকদের আঞ্চলিক কার্যালয়ে যেতে হবে না। নিজ নিজ ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ে গিয়েই আবেদন করতে পারবেন। আবেদনে ভুলের পরিমাণও কমে আসবে।

টাকা দিলে আগে মেলে জন্মনিবন্ধন সনদ

ডিএনসিসির জন্মনিবন্ধনের কাজটি তদারকি করে সংস্থাটির স্বাস্থ্য বিভাগ। এই বিভাগ সূত্র জানায়, বর্তমানে ডিএনসিসিতে ১০টি আঞ্চলিক কার্যালয়ের আওতাধীন ৫৪টি ওয়ার্ড রয়েছে। এই ১০টি অঞ্চলেই নাগরিকদের জন্মনিবন্ধনে আবেদন করতে হবে। সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা (উপ-সচিব) নিবন্ধক হিসেবে স্বাক্ষর করেন। তার সঙ্গে জন্ম-মৃত্যু রেজিস্ট্রেশন সহকারীও জন্মনিবন্ধনে স্বাক্ষর করেন। তার আগে অনলাইনে নাগরিকদের জন্মনিবন্ধন ফরম পূরণ করতে হয়। তারপর নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা ও কাগজপত্র জমা দিয়ে করতে হয় আবেদন। তবে কারও জন্মনিবন্ধনে কোনো সংশোধনী থাকলে তার জন্যও ঢাকার সদরঘাটে জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে (ডিসি অফিস) যেতে হয়। এক্ষেত্রে ভোগান্তিতে পড়তে হয় সবচেয়ে বেশি।

ডিএনসিসির অঞ্চল-২ এ আলাপকালে মামুন হোসেন নামে এক সেবাপ্রার্থী বলেন, যাদের ইন্টারনেট-কম্পিউটার সম্পর্কে ভালো ধারণা আছে, তাদের জন্য অনলাইনে জন্মনিবন্ধন আবেদন করা সহজ। কিন্তু দেশের অনেকেই অনলাইনে আবেদন করতে পারেন না। এই সেবাটা কাউন্সিলর দপ্তরে দিলে নাগরিকদের ভোগান্তি কমবে।

টাকা দিলে আগে মেলে জন্মনিবন্ধন সনদ

জানতে চাইলে ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, কয়েক মাস আগে জন্মনিবন্ধনের দায়িত্ব কাউন্সিলর দপ্তরে দিতে স্থানীয় সরকার বিভাগের রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়ে (জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন) প্রস্তাব করা হয়েছে। এই প্রস্তাবে কারও জন্মনিবন্ধনে কোনো ভুল থাকলে তা আঞ্চলিক কার্যালয়ে সংশোধন করার কথা বলা হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে জন্মনিবন্ধন সংশোধনের জন্য কাউকে ডিসি অফিসে যাওয়া লাগবে না। এতে নাগরিক ভোগান্তি কমবে।

এই আবেদনের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ের (জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন) রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. রাশেদুল হাসান জাগো নিউজকে বলেন, আমরা ডিএনসিসির আবেদন হাতে পেয়েছি। এখন আইনগত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে। আশাকরি শিগগির ডিএসসিসিকে এ দায়িত্ব দিতে পারবো।

টাকা দিলে আগে মেলে জন্মনিবন্ধন সনদ

আগের নিয়মেই জন্মসনদ দিতে চায় ডিএসসিসি

ডিএসসিসিতে ওয়ার্ড রয়েছে ৭৫টি। আলাদা ১০টি অঞ্চলের মাধ্যমে এই ওয়ার্ডগুলোতে জন্মনিবন্ধন বিতরণ করা হচ্ছে। এতে নাগরিকদের পোহাতে হচ্ছে চরম ভোগান্তি। বিশেষ করে নতুন ১৮টি ওয়ার্ডে জন্মনিবন্ধন পেতে বেশি সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। কারণ, নতুন ওয়ার্ডগুলোতে এখনে আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদের জন্য অবকাঠামো বা অফিস তৈরি করা হয়নি। ডিএসসিসির অন্য আঞ্চলিক অফিস এবং জনবল দিয়েই নতুন ওয়ার্ডগুলো সনদ বিতরণ করা হচ্ছে।

জানতে চাইলে ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ফজলে শামসুল কবির জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা আলাদা ১০টি আঞ্চলিক দপ্তর থেকে জন্মনিবন্ধন সেবা দিয়ে আসছি। এতে কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। এ বিষয়ে আমাদের নতুন কোনো সিদ্ধান্ত নেই।’

জন্মনিবন্ধন ফি
বর্তমানে দেশ ও দেশের বাইরে মিলিয়ে পাঁচ হাজার ৫৩২টি জায়গা থেকে জন্মনিবন্ধন করা যাচ্ছে। দেশের সব ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, পৌরসভা কার্যালয়, সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক কার্যালয়, ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের পাশাপাশি বিদেশের বাংলাদেশি দূতাবাসে অনলাইনের মাধ্যমে জন্মনিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয় সূত্র বলছে, ২০১৭ সালের ১৮ ডিসেম্বর প্রকাশিত বাংলাদেশ গেজেটের অতিরিক্ত সংখ্যায় দেশে-বিদেশে জন্ম-মৃত্যুনিবন্ধনের ফি নির্ধারণ করা হয়। এই হিসাবে শিশুর জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে কেউ জন্মনিবন্ধন সনদ নিলে তা বিনামূল্যে করে দেওয়া হয়। ৪৬ দিন থেকে ৫ বছর পর্যন্ত বিলম্ব নিবন্ধন ফি দেশে ২৫ টাকা, বিদেশে এক ডলার। পাঁচ বছর পর করলে ফি দেশে ৫০ টাকা, বিদেশে এক ডলার। জন্মতারিখ সংশোধনের জন্য বিলম্ব ফি দেশে ১০০ টাকা, বিদেশে দুই ডলার। অন্য তথ্য সংশোধন ও বাংলা-ইংরেজি উভয় ভাষায় সনদের নকল সরবরাহের জন্য আবেদন ফি দেশে ৫০ টাকা, বিদেশে এক ডলার।

এমএমএ/এএসএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।