আয় কমেছে কুলিদের, নিরানন্দে কেটেছে ঈদ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১:৩৬ পিএম, ২৫ এপ্রিল ২০২৩

ঈদুল ফিতরের ছুটি শেষ হলেও এখন ঢাকা ছাড়ছেন অনেকে। আবার প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ উদযাপন শেষে ফিরছেন রাজধানীর বাসিন্দারা। এ অবস্থায় আজ কমলাপুর রেলস্টেশনে যাত্রীদের ভিড় দেখা গেছে। যাত্রীদের মালামাল পরিবহনে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে কুলিদের। তবে ব্যস্ততা থাকলেও আগের মতো আয় না থাকায় এবং এবারের ঈদে যাত্রী কম হওয়ায় তারা ভালো নেই বলে জানিয়েছেন। বলছেন, এবারের ঈদ নিরানন্দে কেটেছে তাদের।

মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে কুলিদের সঙ্গে কথা বললে এভাবেই তাদের দুঃখের কথা জানান।

এদিন প্রধান ফটক থেকে ট্রলিতে যাত্রীদের ব্যাগ, লাগেজ নিয়ে প্ল্যাটফর্মে যাচ্ছেন বিশাল নামে এক কুলি। নির্দিষ্ট ট্রেন প্ল্যাটফর্মে না আসায় অপেক্ষা করতে থাকেন। সেখানে কথা হয় তার সঙ্গে।

ঈদ কেমন কাটলো- জানতে চাইলে বিশাল জাগো নিউজকে বলেন, ‘ভালো কাটেনি। আয়-রোজগার কম। দিনে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা থাকে। এভাবে চলা যায় না, ঢাকা শহরে যেই খরচ।’

jagonews24

বিশালের মতো এমন ২৫০ জন নিবন্ধিত কুলি কাজ করেন কমলাপুর রেলস্টেশনে। যাত্রীদের মালামাল টেনে জীবিকা নির্বাহ করেন তারা।

কুলিরা জানান, ঢাকায় থাকার ব্যয় বেড়েছে। খাওয়া খরচ ও বাসাভাড়া বেড়েছে। ঈদের সময় বাড়তি খরচ থাকে। পরিবারের বাড়তি খরচ মেটাতে হিমশিম খেতে হয়। ফলে ঈদের দিনও কাজ করেন তারা। রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মেই কাটে এসব কুলির ঈদ। যাত্রীরা খুশি হয়ে যা দেন তাই নেন তারা।

পরিবার নিয়ে রাজধানীর মুগদায় ছোট একটি বাসা নিয়ে থাকেন নুরুল ইসলাম। আগে যেখানে সাড়ে তিন হাজার টাকা ভাড়া দিতে হতো এখন তা বেড়ে হয়েছে সাড়ে ৫ হাজার টাকা। বেড়েছে খাওয়া খরচও।

নুরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আগে এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকা আয় করতাম। আর এখন ৪০০-৫০০ টাকার কাম করি। এখান থেকে খাওয়া খরচও দিতে হয়। অন্যবার ঈদে বাড়তি আয় হয়। কিন্তু এবার তা হয়নি। যাত্রী কম ছিল এবার। যারা অনলাইনে টিকিট কেটেছেন তারাই এসেছেন। অন্য যাত্রীরা আসতে পারেননি। ফলে আমাদের ইনকামও কমে গেছে। আমাদের ঈদও ভালো কাটেনি।’

মো. রুবেল নামে আরেক কুলি বলেন, ‘এবার ঈদে মেয়েকে শুধু জামা কিনে দিয়েছি। আমাদের জন্য কোনো কিছু কিনতে পারিনি। আয়-রোজগার এবার খুবই কম। কিছুই করার নেই।’

jagonews24

২০১৯ সালের এপ্রিলে কমলাপুর রেলস্টেশনে কুলিদের চার্জের তালিকা টাঙিয়েছে রেলওয়ে। যাত্রীদের সুবিধার্থে স্টেশনে লাগেজ বহনকারী কুলিদের আইডি কার্ড, পোশাকের মাধ্যমে কুলি ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়নসহ মালামাল বহনে ট্রলি, প্রতিবন্ধী, অসুস্থ, বয়স্ক রোগীদের জন্য হুইলচেয়ার সরবরাহ করা হয়েছে।

একই সঙ্গে চার্জ সংশ্লিষ্ট তথ্যে উল্লেখ করা হয়েছে, ২৮ কেজির একটি ব্যাগ ১৫ টাকা, দুটি ব্যাগ ২০ টাকা, ৩৭ কেজির দুটি ব্যাগ ২৫ টাকা, ৫৬ কেজি পর্যন্ত ব্যাগ ৩৫ টাকা। ট্রলি যাত্রী বহন করলে ১৫ টাকা, কুলি বহন করলে ২০ টাকা, হুইলচেয়ার কুলি বহন করলে ২০ টাকা। এমন চার্জে যেতে রাজি না হলে কুলিদের আইডি নম্বরসহ স্টেশন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানাতে বলা হয়েছে। এমন পদক্ষেপে সাধারণ যাত্রীরা খুশি হলেও সন্তুষ্ট নন স্টেশনের কুলিরা।

স্টেশনের জ্যেষ্ঠ কুলি আব্দুর রশীদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘এখানের উপার্জনের ওপর নির্ভর করে আমাদের সংসার চলে। রেলওয়ে যে চার্জ নির্ধারণ করে দিয়েছে এটা একেবারেই কম। তবে কোনো যাত্রীই এত কম টাকা দেন না। কম হলেও ৫০ টাকা দেন।’

আরএসএম/ইএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।