সব থেকেও কেউ নেই মো. হাশেমের

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২:৩২ পিএম, ২৩ এপ্রিল ২০২৩

একসময় সুখেই ছিলেন। সংসারে ভালোবাসার কমতি ছিল না। ঘর আলো করে এসেছিল দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। সন্তানরা বড় হয়েছে। তাদের বিয়ে দিয়েছেন। নাতি-নাতনির মুখও দেখা হয়ে গেছে। বৃদ্ধ বয়সে এখন বিশ্রামের পালা। কিন্তু বার্ধক্যে সেই সুখের দেখা মেলেনি। বলছিলাম, কুমিল্লা হোমনা উপজেলার ষাটোর্ধ্ব বয়সী মো. হাশেমের কথা।

জীবনভর নিজের আয়-রোজগারের সবটুকু পরিবারের পেছনে খরচ করেছেন। অথচ পরিবারের সদস্যরা এখন তার পাশে নেই। ঈদ কেমন কাটছে, ঈদের দিন কী দিয়ে খেয়েছে কিংবা নতুন জামা-কাপড় কেনা হয়েছে কি না, এসব খোঁজও এখন আর নেয় না হাশেমের সন্তানেরা। এই বয়সে একটি প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা প্রহরীর কাজ করেন তিনি। মাছ-মাংস তেমন জোটে না, যা আয় তার বেশিরভাগ চলে যায় ওষুধের পেছনে।

রোববার (২৩ এপ্রিল) সকালে প্রথম প্রজন্মের একটি ব্যাংকের এটিএম বুথের সামনে কথা হয় মো. হাশেমের সঙ্গে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের হয়ে এটিএম বুথের নিরাপত্তায় কাজ করছেন তিনি। মাসে সাড়ে আট হাজার টাকা বেতন। বোনাস পেয়েছেন আড়াই হাজার টাকা। রাজধানীর স্বামীবাগের একটি পুরোনো ভাঙা বাসায় সাড়ে তিন হাজার টাকা ভাড়ায় স্বামী-স্ত্রী মিলে থাকেন।

‘চাচা’ সম্বোধন করে ‘কেমন আছেন’ জানতে চাইলে মো. হাশেম জাগো নিউজকে বলেন, আলহামদুলিল্লাহ, অনেক ভালো আছি। ঈদ কেমন কাটলো, জানতে চাইলে হাসতে হাসতে বলেন, ভালোই কেটেছে। তোমার চাচি সেমাই পাকাইছিল, ৫০০ টাকা দিয়েছিলাম সেটা দিয়ে মুরগি কিনেছিল। সেমাই-মাংস অন্য সময়ে না খেলেও ঈদের সময় খেয়েছি।

ঈদে গ্রামে যাওয়া হয়নি বৃদ্ধ হাশেমের। এখন পরিবার বলতে নিজের স্ত্রী। কালেভদ্রে এক মেয়ে ফোন করেন। হাশেম চাচা বলেন, বাবারে একদিন ছেলে-মেয়ে-নাতি সবই ছিল। এখন কেউ আর খোঁজ নেয় না। সিকিউরিটির কাজ করে যা টাকা পাই তা দিয়ে স্বামী-স্ত্রী সুখেই আছি। হয়তো তোমাদের মতো মাছ-মাংস খেতে পারি না। তবে ভাত-ডাল খেয়েও বেশ ভালো আছি।

ঈদের দিনটি কিভাবে কাটলো, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার ১২ ঘণ্টা ডিউটি। ভোরের দিকে চলে এসেছি। সকালে তোমার চাচি সেমাই পাক করে নিয়ে এসেছিল। রাতে আমরা মুরগির মাংস খেয়েছি, সঙ্গে ডাল ছিল।

সামান্য বেতনের চাকরি করে কীভাবে চলেন, জানতে চাইলে বৃদ্ধ হাশেমের সাফ জবাব, আল্লাহ চালায় দেন। একটা ভাঙা বাসায় থাকি সাড়ে তিন হাজার টাকা ভাড়ায়। মাঝে মাঝে আমাদের কেউ বেশি অসুস্থ হলে টাকায় টান পড়ে। এমনিতে ডাল-ভাত খেয়ে ভালোই থাকি। দোয়া কর তোমার চাচার জন্য, যেন সুস্থ থাকতে পারি, কারোর হেল্প লাগবে না...।

ইএআর/এমকেআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।