‘শরীরটা এখানে, মনটা বাচ্চাদের কাছে পড়ে আছে’
সারাদেশে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন হচ্ছে। প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে ঢাকার কর্মস্থল ছেড়েছেন লাখ লাখ মানুষ। এরপরও ঈদের আনন্দ মুখরতায় কেউ কেউ কর্মে অবিচল। পরিবার-পরিজনহীন এ নগরে অনেকে কর্মস্থলেই কাটিয়ে দিচ্ছেন মূল্যবান উৎসবের দিনটি।
এমন ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম বুথের নিরাপত্তা কর্মীরা। শনিবার দুপুরের আগে কথা হয় মতিঝিলের কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলনের এটিএম বুথের নিরাপত্তা কর্মী এখদিন ভূইয়ার সঙ্গে।
তিনি জাগো নিউজকে বলেন, আমার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের নান্দাইলে। আমার তিন সন্তান- দুই ছেলে ও এক মেয়ে। এক সন্তানের বয়স ৮ মাস, একজনের ১১ বছর ও অন্যজনের ১৮ বছর।
‘ঈদের দিন বউ, বাচ্চারা দূরে। সারাদিনই খারাপ লাগবে। খারাপ লাগলেও কিছু তো করার নেই। চাকরিটাই এমন’- বলেন তিনি।
এখদিন ভূইয়া বলেন, সকাল থেকে বাচ্চাদের সঙ্গে কথা বলেছি। শরীরটা দূরে থাকলেও মনটা তাদের কাছেই পড়ে আছে। বুথ পাহারা দেওয়া ছাড়া আমাদের তো করার কিছু নেই, ফোনেই বাচ্চাদের বেশি সময় দেবো আজ।
তিনি বলেন, বাচ্চাদের ঈদের কাপড়-চোপড়, টাকা-পয়সা আগেই পাঠিয়ে দিয়েছি। আগামী সপ্তাহে আমি হয়তো বাড়ি যাবো।
‘আমি থাকি কমলাপুরে কোম্পানির মেসে। সেখান থেকে আজকে আমাদের দুপুরের খাবার আসবে’- বলেন এ নিরাপত্তা কর্মী।
মতিঝিলের দিলকুশায় ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের এটিএম বুথে দায়িত্ব পালন করছিলেন নিরাপত্তা কর্মী মো. শফিকুল ইসলাম। বাড়ি হবিগঞ্জ। তিনি বলেন, ‘আমার এক ছেলে, বয়স প্রায় ৬ বছর। আমি পরিবার নিয়ে কমলাপুরেই থাকি।’
তার কথায়- কোম্পানিতে লোক কম, আজকে ২৪ ঘণ্টাই ডিউটি করতে হবে। আমি কোরবানির ঈদে ছুটি নেবো। অন্যরা এই ঈদে ছুটি নিয়েছে। বাচ্চাকে বলেছিলাম, তাকে নিয়ে বায়তুল মোকাররম মসজিদে নামাজ পড়তে যাবো। বাচ্চা বার বার ফোন দিচ্ছে, কী করা লোক নাই স্যার ডিউটিতে লাগিয়ে দিয়েছে। আমার দুপুর ও রাতের খাবার ছেলে ও ছেলের মা নিয়ে আসবে।
মতিঝিলের এনসিসি ব্যাংকের এটিএম বুথে দায়িত্বে ছিলেন মো. রবিউল ইসলাম। এ নিরাপত্তা কর্মী বলেন, আমার বাড়ি সৈয়দপুর, বাড়িতে বাবা-মা আছে, বোন আছে। এখনো বিয়ে করিনি। বিয়ে না করায় রক্ষা, না হয় ঈদের দিন ডিউটি কি করতে পারতাম! এ চাকরি করে আসলে ঈদগুলো পরিবারের সঙ্গে করা যায় না। হয় ঈদের পর না হয় ঈদের আগে ছুটি পাওয়া যায়।
সারাদিন কেমনে কাটবে- জানতে চাইলে বলেন, কোম্পনি থেকে দুপুরের খাবার দেবে। নিয়ে আসবে খাবার। আমাদের অফিস বনানী, সেখানে থেকে খাবার নিয়ে আসবে।
রবিউল বলেন, আমি এখানে টানা দু-দিন ডিউটি করবো। রাতেও বুথেই ঘুমাবো। এরপর কোম্পানির মেসে চলে যাবো। আমাদের থাকার ব্যবস্থা কোম্পানি করবে।
আরএমএম/এমকেআর/এমএস