ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:২২ পিএম, ১৫ এপ্রিল ২০২৩

নাগরিক সংগঠনের উদ্যোগে ‘কেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল চাই’ শিরোনামে লাইভ ওয়েবিনারের অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শনিবার (১৫ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত এ ওয়েবিনারে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষক ও অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ, গবেষক ও মানবাধিকার কর্মী রোজিনা বেগম, সাংবাদিক আজিম নিহাদ, আফরোজা সরকার, পিক্লু নীল, নজরুল ইসলাম, শিক্ষক রুমা সরকার, আবু ফজল, আফরিন লাইলাসহ আরও অনেকেই।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক ও অধিকার কর্মী অধ্যাপক সি আর আবরার। সঞ্চালক হিসেবে ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, ও ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন নাগরিক সংগঠনে সদস্য ও অধিকার কর্মী রেজাউর রহমান লেনিন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে সঞ্চালক জ্যোতির্ময় বড়ুয়া সবাইকে স্মরণ করিয়ে দেন। তিনি বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয় ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম একটি নতুন ধারণা এবং একে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য আইনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আমাদের এটি স্বীকার করে নিতে দ্বিধা নেই যে, নাগরিকের ডিজিটাল সুরক্ষার প্রয়োজন আছে। কিন্তু ২০১৮ সালে প্রণীত আইনে সেই সুরক্ষার লেশ মাত্র নেই। এ আইনের মূল উদ্দেশ্য যেখানে নাগরিকের ওপর সর্বত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা, সেখানে সুরক্ষা খুঁজতে যাওয়া বাতুলতা মাত্র।’

লাইভ ওয়েবিনারের মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন রেজাউর রহমান লেনিন। ধারণাপত্রের মূল বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ভয়ংকর আইনে পরিণত হয়েছে। সংবিধানে নাগরিকের যেসব অধিকারের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে সেসবের বিপরীতে কূটকৌশলে এমন সব বিধি বিধান সংযোজন করা হয়েছে এবং আইনের প্রয়োগের ফলে যা সংবিধানের ২৬, ২৭, ২৯, ৩১, এবং ৩৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রক্ষণীয় নয়।’

গবেষক ও মানবাধিকার কর্মী রোজিনা বেগম বলেন, নাগরিক ও রাজনৈতিক, সামাজিক অধিকারের সনদ ও জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের একাধিক সিদ্ধান্ত হলো, ভাব প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর যেকোনো সীমাবদ্ধতা আরোপ অথবা বিষয়বস্তুভিত্তিক অথবা যোগাযোগের যেকোনো মাধ্যম বা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া ভাবের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা আরোপ করতে গেলে তা অবশ্যই তিনটি ধাপের ধারাবাহিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।

এই তিনটি আবশ্যিক ধাপগুলো হল:

১. আইনের মাধ্যমে হতে হবে, ২. একটি ন্যায্য লক্ষ্যে থাকতে হবে এবং, ৩. প্রয়োজনীয়তা ও ন্যায্যতা কঠোরভাবে বজায় থাকতে হবে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি

অতএব, এ তিন ধাপের পরীক্ষা অনুসারেই অফলাইন ও অনলাইনে ভাব প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় বাংলাদেশ সরকারের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যদি কোনো সীমাবদ্ধতা অনলাইনের ওপর আরোপ করা হয়, তবে সরকারকেই নিশ্চিত করতে হবে, যেন সেটি এসব আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন এবং আইন প্রণয়নের মানদণ্ডের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন হল মূলত বিভিন্ন অংশকে এবং রাজনৈতিক দলের সংগঠনগুলোকে দায়িত্বই দেওয়া হয়েছে এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করার জন্য। কারণ অনুমতি ছাড়া এ মামলাগুলো হতেই পারে না।’

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে, সামাজিক ন্যায়বিচার, মানবিক মর্যাদা, এবং মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার হরণের বাস্তবতা বিদ্যমান। তাই আমরা নাগরিকদের পক্ষ থেকে অবিলম্বে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ বাতিলের জোর দাবি জানাচ্ছি। এবং আগামীতে নাগরিক সমাজের নিয়মিত, স্বতঃস্ফূর্ত, প্রয়োজনীয়, ও পর্যাপ্ত সম্পৃক্ততা এবং অর্থপূর্ণ অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে সাইবার জগৎ সংক্রান্ত যে কোনো আইন-বিধি-নীতিমালা, নির্দেশিকা প্রণয়ন করার জন্য আহ্বান এবং দাবি করছি।

অনুষ্ঠানে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সমাপ্তি হয়।

এফএইচ/এমআইএইচএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।