নিউ সুপার মার্কেটে আগুন

ভেজা শরীরে একের পর এক কাপড়ের বস্তা নামিয়ে আনছে পুলিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১:৫৮ পিএম, ১৫ এপ্রিল ২০২৩
ব্যবসায়ীদের মালামাল নিরাপদে সরিয়ে আনছেন পুলিশ সদস্যরা/ ছবি- জাগো নিউজ

ইউনিফর্ম বেয়ে টপটপ করে ঝরছে পানি, পুরো শরীর ভেজা, ক্লান্তি চোখে-মুখে। তবে দৃঢ়তা যেন স্পষ্ট। কাজ করেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কন্ট্রোল রুমের কনস্টেবল হিসেবে। শান্ত নামের এ পুলিশ সদস্য বাঁশিতে ফুঁ দিয়ে ভিড় ঠেলে কাঁধে কাপড়ের বড় বস্তা নিয়ে যাচ্ছেন নিরাপদ স্থানে।

শুধু শান্তই নয়, উজ্জ্বল, সাকিব, গোপাল, হাবিব, রাকিবসহ পুলিশের ৭/৮ জন তরুণ কনস্টেবল আগুন লাগা মার্কেট থেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিজেদের কাঁধে করে কাপড়ের বড় বড় বস্তা বের করে আনছেন। তাদের মনোবল চাঙা রাখতে ঘটনাস্থালে উপস্থিত ডিএমপি সদর দপ্তর ও রমনা বিভাগের পুলিশ কর্মকর্তাও কাজে সহযোগিতা করেন।

শনিবার (১৫ এপ্রিল) ভোর ৫টা ৪০ মিনিটে আগুন লাগে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকার নিউ সুপার মার্কেটে। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের প্রথম ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে ৫টা ৪৩ মিনিটে। এরপর আগুন নিয়ন্ত্রণে যোগ দেয় একে একে ৩০টি ইউনিট।

আগুন লাগার পরপরই ডিএমপি কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো হয় একঝাঁক তরুণ কনস্টেবল। ভয়াবহ এ আগুন উপেক্ষা করে সিঁড়ি বেয়ে মার্কেটের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় উঠে যান পুলিশ কনস্টেবলরা। পরে বড় বড় কাপড়ের বস্তা অক্ষত অবস্থায় নিজেদের কাঁধে করে নামিয়ে এনে নিরাপদ স্থানে ব্যবসায়ীদের কাছে বুঝিয়ে দেন।

jagonews24

জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় কনস্টেবল শান্তর। তিনি বলেন, ৬টার দিকে জরুরি খবর পেয়ে ডিএমপি কন্ট্রোল রুম থেকে ছুটে আসি এখানে। এসে দেখি তখনও অনেক ব্যবসায়ী আসেননি। তাদের মালামাল রক্ষার্থে নিজের কাঁধে করে বস্তা নিচে নামিয়ে আনি। আমার সঙ্গে আরও দুইজন কনস্টেবল ছিলেন। আমরা প্রায় দেড়শ বস্তা মালামাল নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনতে পেরেছি।

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কথা হয় কনস্টেবল গৌতমের সঙ্গে। তখনও তার পুরো ইউনিফর্ম ভেজা। পানি পড়ছিল ইউনিফর্ম থেকে। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, জীবনের মায়া ত্যাগ করে ব্যবসায়ীদের জন্য যদি কিছু করতে পারি- চাকরি জীবনে এর চাইতে বড় স্বার্থকতা আর কী হতে পারে। আমি নিজে ৩০/৩৫টি বস্তা কাঁধে করে এনে ব্যবসায়ীদের কাছে হস্তান্তর করেছি।

পুলিশের এমন কাজের প্রশংসা করেন ব্যবসায়ীরাও। রহমতউল্লাহ নামের এক ব্যবসায়ী জাগো নিউজকে বলেন, দুইজন পুলিশ ভাই আমার প্রায় ৪০ বস্তা মালামাল নিয়ে এসেছেন। আল্লাহ তাদের কবুল করুন। তারা যে পরিশ্রম করেছেন তা আমি নিজেও পারতাম না।

হাসিনা বেগম নামের এক ব্যবসায়ী জাগো নিউজকে জানান, মার্কেটের নিচতলায় তার দুটি দোকান। দোকানের মালামাল আনতে যেতে চাইলে পুলিশ ভেতরে যেতে দেয়নি। পরে তারা মালামাল দোকান থেকে এনে আমার কাছে দেন।

পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, র‌্যাব, বিজিবি ও আনসার সদস্যদেরও এমন মানবিক দৃশ্য চোখে পড়ে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি সব বাহিনীর সদস্যদের লক্ষ্য ছিল ব্যবসায়ীদের মালামাল রক্ষা করা। পাশাপাশি আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে দ্রুত হাসপাতালে পাঠানো।

jagonews24

জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) খ. মহিদ উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ঘটনার শুরু থেকেই বাংলাদেশ পুলিশ অগ্নিনির্বাপণ কাজে সহায়তা করছে। একই সঙ্গে উৎসুক জনতাকে নিয়ন্ত্রণ করছে। এছাড়াও আগুনে পুড়ে যে সম্পদের ক্ষতি হচ্ছিল বা হতে পারতো, সেগুলো রক্ষায় পুলিশ আন্তরিকভাবে সহায়তা করে।

তিনি বলেন, আপনারা খেয়াল করে দেখবেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সদস্যরা নিজেদের কাঁধে করে প্রচুর মালামাল বের করছেন। প্রায় ২ ঘণ্টা ধরে পুলিশের সদস্যরা মালামাল বের করে আনছেন। পাশাপাশি উৎসুক জনতাকে কন্ট্রোল করছেন, ফায়ার সার্ভিস বা অন্যান্য সংস্থার লোকেরা যাতে ঠিকভাবে কাজ করতে পরেন।

বেলা সাড়ে ১১টায় ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক।

তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বের পাশাপাশি মানবিক পুলিশিংটাও আমরা করে থাকি। কোনো ঘটনা ঘটলে আমাদের সবার আগে বলা থাকে ফায়ার সার্ভিস যেন নির্বিঘ্নে আগুন নেভানোর কাজ করতে পারে। মানুষজন যেন ফায়ার সার্ভিসের যাতায়াতের পথে কোনো প্রকার প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে না পারে সেই ব্যবস্থা করা। তারপর কোনো জিনিসপত্র কেউ যেন লুটপাট না করে সেই বিষয়টা দেখা এবং মানবিক পুলিশিং আমাদের তিন নম্বর কাজ। এর জন্য যদি আমাদের ঝুঁকি নিতে হয়, তবে আমরা সেই ঝুঁকি নিতে রাজি আছি।

এদিকে নিউ সুপার মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩১ জনকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে ১৫ জন ফায়ার সার্ভিসের কর্মী, ১২জন দোকান কর্মচারী, একজন বিমানবাহিনীর সদস্য ও একজন আনসার সদস্য। বাকিরা স্বেচ্ছাসেবী।

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, দেশের সব মার্কেট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রাতে পাহারা দিতে হবে। তিনি বলেন, ঈদের আর চার-পাঁচ দিন আছে। এসময় ব্যবসায়ীদের বলবো, তারা যেন নিজেরা পাহারার ব্যবস্থা করেন। আমি নিশ্চিত নিজেরা পাহারার ব্যবস্থা করলে এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব।

টিটি/কেএসআর/জিকেএস

টাইমলাইন  

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।