কৃষি মন্ত্রণালয়

কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যবস্থাপনা নিয়ে হচ্ছে অনুবিভাগ

মাসুদ রানা
মাসুদ রানা মাসুদ রানা , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১:২২ পিএম, ১২ এপ্রিল ২০২৩

কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাংগঠনিক কাঠামোতে আসছে পরিবর্তন। কাজের পরিধি বেড়ে যাওয়ায় বাস্তবতার নিরিখে নেওয়া হচ্ছে এ সিদ্ধান্ত। কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যবস্থাপনা নিয়ে মন্ত্রণালয়ে হচ্ছে একটি পূর্ণাঙ্গ অনুবিভাগ। এছাড়া সাংগঠনিক কাঠামোতে অনুবিভাগগুলোর দায়িত্বশীল যুগ্ম-সচিবদের পদ পরিবর্তন করে অতিরিক্ত সচিবে উন্নীত করা হচ্ছে।

একই সঙ্গে পুনর্গঠন করা হচ্ছে কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষিনীতি সহায়ক ইউনিট। পরিকল্পনা ও নীতি পরীবিক্ষণ এবং সমন্বয় (পিপিসি) অনুবিভাগের জন্য ২৫টি পদ সৃষ্টিরও উদ্যোগ নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়।

গত ২ মার্চ এক সভায় সাংগঠনিক কাঠামো প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হয়। কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তারের সভাপতিত্বে ওই সভা অনুষ্ঠিত হয়।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন শাখার একজন কর্মকর্তা জানান, কৃষি মন্ত্রণালয়ের ‘এনাম কমিটি’ অনুমোদিত পদ সংখ্যা ছিল ১৪২টি। পরবর্তীসময়ে আরও ৭৪টি পদ সৃজন করা হয়। ২০১৪ সালে অনুমোদিত সাংগঠনিক কাঠামোর অন্তর্ভুক্ত পদ সংখ্যা ছিল ২১৬টি। এরপর বিভিন্ন সময়ে সৃজিত ১১৬টি পদসহ ২০২১ সালের ২৮ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো সাংগঠনিক কাঠামোর পদ সংখ্যা ৩৩২টি।

আরও পড়ুন>> বাতাস হলেই বুক কাঁপে হাওরের কৃষকের

১৯৮২ সালে ‘মার্শাল ল’ কমিটি অন রি-অর্গানাইজেশন সেটআপ’ সব সরকারি মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর/পরিদপ্তরসহ সব স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার পুনর্গঠন কার্যক্রম সম্পাদনে উদ্যোগ নেয়। এ উদ্দেশ্য সাধনে সরকার একটি কমিটি গঠন করে, যা ‘এনাম কমিটি’ নামে পরিচিত।

সংশ্লিষ্টরা জানান, কৃষি মন্ত্রণালয়ের ১১টি অনুবিভাগের মধ্যে চারটি অনুবিভাগের প্রধান অতিরিক্ত সচিব। প্রশাসনিক কাজের সুবিধার্থে অবশিষ্ট সাতটি অনুবিভাগের প্রধান হিসেবে অনুমোদিত যুগ্ম-সচিবের পদ অতিরিক্ত সচিবে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোতে সার ব্যবস্থাপনা ও উপকরণ, গবেষণা, পরিকল্পনা, নিরীক্ষা, শৃঙ্খলা ও আইন অনুবিভাগের দায়িত্ব রয়েছেন যুগ্ম-সচিবরা। অন্যদিকে বীজ অনুবিভাগের দায়িত্বে রয়েছেন একজন মহাপরিচালক।

সাংগঠনিক কাঠামোতে বর্তমানে যুগ্ম-সচিব পদটি অতিরিক্ত সচিব পদে উন্নীত করতে প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হচ্ছে। একই সঙ্গে ‘মহাপরিচালক (বীজ)’ এর পদনাম পরিবর্তন করে ‘অতিরিক্ত সচিব/যুগ্ম-সচিব (বীজ)’ করার প্রস্তাবও যাচ্ছে।

কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ অনুবিভাগ গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়।

আরও পড়ুন>> ১০-১৮ এপ্রিল তীব্র তাপপ্রবাহের শঙ্কা, বিশেষ কৃষি পরামর্শ

মন্ত্রণালয়ের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াকরণ, গুণগত মান নিশ্চিতকরণ ও প্রচারণা কার্যক্রম সমন্বয়ের লক্ষ্যে অতিরিক্ত সচিব বা যুগ্ম-সচিব (অ্যাগ্রো প্রসেসিং অ্যান্ড ভেল্যু চেইন প্রমোশন) নামে একটি নতুন অনুবিভাগ করা হবে। অতিরিক্ত সচিব/যুগ্ম-সচিবের (অ্যাগ্রো প্রসেসিং অ্যান্ড ভেল্যু চেইন প্রমোশন) অধীনে উপ-সচিব (অ্যাগ্রো প্রসেসিং) এবং উপ-সচিবের (ভেল্যু চেইন প্রমোশন) দুটি পদ সৃজনের প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া উপ-সচিবের (অ্যাগ্রো প্রসেসিং) অধীনে সিনিয়র সহকারী সচিব (অ্যাগ্রো প্রসেসিং-১), সিনিয়র সহকারী সচিব (অ্যাগ্রো প্রসেসিং-২) নামে দুটি এবং উপ-সচিবের (ভেল্যু চেইন প্রমোশন) অধীনে সিনিয়র সহকারী সচিব (ভেল্যু চেইন প্রমোশন-১), সিনিয়র সহকারী সচিব (ভেল্যু চেইন প্রমোশন-২) নামে দুটিসহ মোট চারটি নতুন পদ সৃজনে প্রস্তাব যাবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে।

এছাড়া কৃষিনীতি সহায়ক ইউনিট (এপিএসইউ-আপসু) পুনর্গঠন করা হচ্ছে। মহাপরিচালকের (আপসু) পদনাম পরিবর্তন করে অতিরিক্ত সচিব/যুগ্ম-সচিব (আপসু) নামকরণের সুপারিশ করা হয় এবং একইসঙ্গে আপসুর সব জনবল ঠিক রেখে নিয়োগ বিধিমালা সংশোধন করে প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটিতে উপস্থাপনের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হচ্ছে। নিয়োগবিধি অনুমোদন না হওয়া পর্যন্ত আপসুতে সংযুক্তিতে কর্মরত জনবল বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের অধীনে ন্যস্ত করারও সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে জানা যায়।

মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা ও পিপিসি অনুবিভাগের জন্য ২৫টি পদ সৃজনের বিষয়ে যুগ্ম-সচিব জানান, নীতি পরিবীক্ষণ এবং সমন্বয় (পিপিসি) অনুবিভাগের নীতি-১, ২, ৩, ৪, ৫ শাখায় প্রশাসনিক কর্মকর্তার ৫টি, অফিস সহায়ক ৫টি, নীতি-১, ২ শাখায় কম্পিউটার অপারেটরের দুটি, নীতি-৩, ৪, ৫ শাখায় অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটরের তিনটি অনুমোদিত পদ নেই। পরিকল্পনা অনুবিভাগে ৭টি শাখায় প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং তিনটি শাখায় অফিস সহায়কের কোনো পদ নেই। পিপিসি ও পরিকল্পনা অনুবিভাগে প্রাপ্য পদের বিপরীতে পূর্ণাঙ্গ জনবল সৃজনের জন্য প্রস্তাবিত ২৫টি পদ সম্বলিত সুপারিশ ফের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

এসব বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ওয়াহিদা আক্তার জাগো নিউজকে বলেন, ‘কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াকরণ, গুণগত মান নিশ্চিত করা ও রপ্তানির ক্ষেত্রে যোগাযোগের সুনির্দিষ্ট কোনো জায়গা নেই। মন্ত্রণালয়ের এই সেকশন বলে ওই সেকশনের, ওই সেকশন বলে এই সেকশনের- এজন্য আমরা এ বিষয়টি নিয়ে নতুন একটি অনুবিভাগ করছি।’

তিনি বলেন, ‘কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণ নিয়ে সক্রিয়ভাবে চিন্তা-ভাবনা করা এখন সময়ের দাবি। এখন উৎপাদন বাড়ছে, কৃষকরা চাইছে তাদের পণ দেশের বাইরে পাঠাতে। তারা আন্তর্জাতিক বাজারও ধরতে চাইছে, এটা খুবই ভালো লক্ষণ। এখন কৃষকদের মধ্যে এ তাগিদটা রয়েছে।’

আরও পড়ুন>> উপকূলে সূর্যমুখী চাষ/সেচ সুবিধা না থাকায় সংকটে চাষিরা

‘আমাদের কৃষকরা এখন আগের চেয়ে অনেক গোছালো। এখন আমরা মন্ত্রণালয় থেকেও কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণের বিষয়টি ভালোভাবে অ্যাড্রেস করতে চাচ্ছি। এজন্য অনুবিভাগ করবো আমরা। গ্যাপ (উত্তম কৃষি ব্যবস্থাপনা) বাস্তবায়ন করতে হবে। এ নতুন ডেস্ক সেটিও দেখবে। আমরা কৃষিপণ্যের বাজার বিশ্লেষণের কাজও করবো।’

বিভিন্ন ক্ষেত্রে পলিসি গ্যাপ রয়ে গেছে জানিয়ে সচিব বলেন, ‘অনেক কিছু করতে হচ্ছে। আমাদের কৃষির যেমন সম্ভাবনা রয়েছে, তেমনি চ্যালেঞ্জও রয়েছে।’

কৃষিখাতের সার্বিক বাস্তবতার নিরিখে মন্ত্রণালয়ের সাংগঠনিক কাঠামোতে পরিবর্তন আনা হচ্ছে জানিয়ে ওয়াহিদা আক্তার বলেন, ‘এজন্য মিটিং করে আমরা প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছি। জনবল কাঠামো পুনর্গঠনের প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠাবো। তারা অনুমোদন দিলে বাস্তবায়ন হবে। যদিও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পরামর্শেই আমরা প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছি।’

কৃষি সচিব আরও বলেন, ‘আমাদের মাশরুম ইনস্টিটিউট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) অধীনে। কন্টিনিউয়াস গবেষণা ছাড়া মাশরুমের উৎপাদন বাড়ালে কাজ হবে না। তাই এ ইনস্টিটিউটকে আমরা ডিএই’র অধীনে রাখবো নাকি কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধীনে নিয়ে যাবো, এটা নিয়ে চিন্তা আছে।’
তিনি বলেন, ‘বারটান (বাংলাদেশ ফলিত পুষ্টি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট) ও গম গবেষণা ইনস্টিটিউট এখনো জাতীয় কৃষি গবেষণা ব্যবস্থায় আসেনি। এগুলোকে আনার চিন্তা করছি।’

আরএমএম/এএসএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।