জিএম কাদের

আইন প্রণয়নে বৈধতা দেওয়া ছাড়া সংসদ কিছু করতে সক্ষম নয়

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১:৪৯ পিএম, ১০ এপ্রিল ২০২৩
ফাইল ছবি

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেছেন, বিদ্যমান ব্যবস্থায় সংসদ আইন প্রণয়নে বৈধতা দেওয়া ছাড়া আর কিছু করার জন্য সক্ষম নয়।

জাতীয় সংসদে উত্থাপিত সাধারণ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে সোমবার (১০ এপ্রিল) তিনি এ মন্তব্য করেন। সংসদের সুবর্ণজয়ন্তি উপলক্ষে সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রস্তাবটি সংসদে তোলেন।

জিএম কাদের বলেন, সরকার আইন প্রণয়নে উদ্যোক্তার ভূমিকা পালন করে। তবে সংসদের সম্মতি ছাড়া কোনো আইন প্রণয়ন সম্ভব নয়। এ কারণে রাষ্ট্রপতি তার ভাষণে আইন প্রণয়নে সংসদ সদস্যদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বের কথা বলেছেন। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি সরকারি দল সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ। সংসদের ৭০ অনুচ্ছেদের কারণে সরকারের যেকোনো প্রস্তাবে সরকারি দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অটুট থাকে। ফলে সরকারি আইন সরকারি দলের সম্মতি পায়। সরকারি দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণে স্বাভাবিকভাবেই অনুমতি লাভ করে। সংশোধনগুলো গ্রহণ বা বর্জন সরকারের মর্জির ওপর নির্ভরশীল থাকে। সংসদ কার্যত আইন প্রণয়নে শুধুমাত্র সরকারি আইন প্রণয়নে বৈধতা দেওয়া ছাড়া আর কিছু করার জন্য সক্ষম নয়।

১৯৯১ পবরতী দেশের প্রায় প্রতিটি সংসদই কোনো না কোনো দল বর্জন করেছে, এমনটি জানিয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ১৯৯১ সাল থেকে এ পর্যন্ত যতগুলো সংসদ হয়েছে তাতে দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে প্রতিনিধিত্বকারী আওয়ামী লীগ বা বিএনপি বর্জন করেছে। এখনো একটি দল (বিএনপি) তার গোষ্ঠীসহ বর্জন করছে।

তিনি বলেন, ৫০ বছরে আমরা অনেক ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে এসেছি। এখন অনেক পরিপক্ক ও ম্যাচিউর্ড সংসদ বলে আমি দাবি করছি। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা মনে করি, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের একটি সংশোধনী হওয়া আবশ্যক। আমি মনে করি সরকার গঠনের সময়কাল, সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব হলে এবং বাজেট পাস এই তিনটি বিষয় বাদে সংসদ সদস্যদের নিজের মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা দেওয়া উচিত। যাতে করে সরকারি দলের সদস্যরা যেন নিজেদের জ্ঞান বুদ্ধি ও বিচার-বিবেচনা এবং এলাকার মতের প্রতিফলন ঘটিয়ে ভোট দিতে পারেন, তার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

আরও পড়ুন: ড. কামালকে আমন্ত্রণ জানালে সংসদ প্রাণবন্ত হতো: মোকাব্বির

ভারতের মতো আমাদের দেশেও যদি কোনো দলের সদস্যদের এক তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়, তাহলে তারা দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে অবস্থান নিতে পারবেন। এমন বিধান বাংলাদেশেও থাকার প্রস্তাব করেন তিনি।

সংসদীয় কমিটি কার্যকর করার প্রস্তাব করে বিরোধী দলীয় উপনেতা বলেন, সংসদীয় কমিটির প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে সরকার ও মন্ত্রণালয়ের জবাবদিহি নিশ্চিত করা। কিন্তু আমরা মনে করি, এই কাজগুলো স্থায়ী কমিটি করতে সক্ষম হচ্ছে না। কারণ তারা সুপারিশ দিতে পারে এবং সুপারিশগুলো যখন দেওয়া হয় তখন মন্ত্রণালয় অনেক সময় এই সুপারিশগুলো দেখেও না। স্থায়ী কমিটির সুপারিশগুলো মেনে নেওয়ার তো প্রশ্নই আসে না, বেশিরভাগ সময় বিবেচনাই করে না। আমার প্রস্তাব হলো এটা তাদের একটা সময়ের মধ্যে বিবেচনা করতে হবে। সেটা কমিটিকে জানাতেও হবে। না হলে যারা দায়িত্বে আছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান করতে হবে।

উন্নয়ন ও গণতন্ত্র একসঙ্গে চলে, রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে জিএম কাদের বলেন, যে দেশে ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকেন্দ্রিক উন্নয়ন হয়, সে দেশকে গণতন্ত্রহীন বলা যায়। অনেকেই উন্নয়নকে গণতন্ত্রের বিকল্প হিসেবে দাঁড় করাতে চাচ্ছেন। কিন্তু উন্নয়ন কখনোই গণতন্ত্রের বিকল্প হতে পারে না। উন্নয়নের বিষয়ে বলা হচ্ছে স্থিতিশীলতা উন্নয়নের সহায়ক। কথাটি সত্য। তবে এটা যারা বলেন তারা সরকার পরিবর্তন না হওয়াটাকে স্থিতিশীলতা মনে করেন। বস্তুত সরকার পরিবর্তন না হলে এক ধরনের স্থিতিশীলতা দেখা যায়। কিন্তু সেটা বাহ্যিক ও কৃত্রিম।

আরও পড়ুন: পাত্র হিসেবে এখন সরকারি দলের কর্মীদের বাজার ভালো

তিনি বলেন, উন্নয়ন অর্থ অবকাঠামোগত উন্নয়ন নয়। অনেকে বিষয়টিতে ভুল করেন। অবকাঠামোগত উন্নয়ন উন্নয়নের সহায়ক মাত্র। প্রকৃত উন্নয়ন হচ্ছে দেশ ও জনগণের সার্বিক জীবনমানের উন্নয়ন।

জিএম কাদের তার বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত দ্বিতীয় একটি ডেপুটি স্পিকারের পদসৃষ্টি করে বিরোধী দল থেকে নিয়োগের বিষয়টি বাস্তবায়নের প্রস্তাব করেন। একই সঙ্গে বেসরকারি সদস্যদের বিল সংসদে উত্থাপনের বাধ্যবাধতার প্রস্তাব করেন।

এইচএস/এমএইচআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।