ইভিএম বাতিল ও ৩০০ আসনে ব্যালটে ভোট নিয়ে যা বললেন সিইসি
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ফলে ৩০০ আসনেই ব্যালট পেপারে ভোট হবে। অথচ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ৩০০ আসনেই ইভিএমে ভোট চেয়েছিল। আর বিএনপিসহ অধিকাংশ বিরোধী দলগুলো ইভিএমে ভোটের বিরোধিতা করে আসছিল। এমন প্রেক্ষাপটে ইসি অন্তত ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহারের কথা বলে আসছিল। তবে সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী- দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনেই ব্যালট পেপারে ভোটগ্রহণ করা হবে।
ইসির এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে নানান গুঞ্জন ছড়িয়েছে। রাজনীতির মাঠে ছড়ানো এসব কথা ‘ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। কীভাবে ইভিএম থেকে ইসি সরে এসেছে এবং ৩০০ আসনে ব্যালটে ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন তিনি। বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ের সামনে সংবাদ সম্মেলনে সিইসি এ নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ইভিএম থেকে আমরা সরে এসেছি। তবে বাজারে গুঞ্জন আছে যে, চাপে পড়ে নাকি আমরা ইভিএম ব্যবহার করছি না। এটা একদমই সত্য নয়। ইভিএম নিয়ে আমরা কমিশনে বৈঠকে দীর্ঘ আলোচনা করেছি। একটি দলের প্রত্যাশা ছিল ৩০০ আসনেই ইভিএমে ভোট হোক। আমরা সক্ষমতাসহ সবকিছু বুঝেশুনে ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমরা ইভিএমে এ পর্যন্ত এক হাজার ২০০-এর বেশি নির্বাচন করেছি। এ নির্বাচনগুলোতে কোনো কারচুপির অভিযোগ ওঠেনি। ম্যালফাংশনিংয়ে (অস্বাভাবিক ফল) কথা বলেছেন অনেকে। এর মধ্যে ভুত আছে বা ইয়ে আছে...১০টা ভোট দিলে তিনটা ভোট থাকে, বাকি সাতটা উধাও হয়ে যায় ইত্যাদি। কাজেই আমরা বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করেছি। এটা একেবারেই সত্য নয়। আমার পুরোপুরি বিশ্বাস আছে এটার (ইভিএম) ওপর। কিন্তু আমার বিশ্বাস দিয়ে তো আর হবে না, যদি রাজনৈতিক দলগুলোই অংশ না নেয়।
আরও পড়ুন>> ব্যালট-ইভিএম নয়, ভোটে সব দলের অংশগ্রহণই বড় চ্যালেঞ্জ: সিইসি
সিইসি বলেন, তবে আমরা যদি অর্থ পেতাম, তাহলে আমরা কিছু ইভিএম ব্যবহার করতাম। ৯ হাজার কোটি টাকা চেয়েছিলাম, সেটা যদি পেতাম, তা দিয়ে এটা করতে পারতাম। সেটা সরকার অ্যাগ্রি (অনুমোদন) করেনি। এরপর ইভিএম মেরামতের জন্য এক হাজার ২০০ কোটি টাকা চেয়েছিলাম। সেটা দিতে চাইলেও শেষ পর্যন্ত অ্যাগ্রি (অনুমোদন) করতে পারেনি সরকার। তখন দেখলাম যে, আমাদের হাতে ২৫-৩০ হাজারের মতো ইভিএম মেশিন আছে। তখন আমরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে গেলাম। দুজন কমিশনার জোরোশোরেই বললেন, ২৫ থেকে ৩০টা আসনে আমরা ইভিএমে ভোট করে ফেলি। দেখলাম লাইফটাইম শেষের দিকে। তাই ইভিএম থেকে সরে এলাম। দীর্ঘসময় আলোচনা করেই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এটা সম্পূর্ণ আমাদের সিদ্ধান্ত। কারও চাপে করা হয়নি। ইভিএম নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে কমিশনাররা দ্বিধাবিভক্ত হয়েছেন। তবে পুরোটাই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় হয়েছে। দুজন কমিশনার বলেছেন, ২৫-৩০টা আসনে ইভিএমেই হোক। তবে আমরা তিনজন আবার বললাম- না, এটা আমরা করছি না, যার ফলে এ সিদ্ধান্ত (ইভিএম বাতিল) এলো।
ব্রিফ করেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল
নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে যে সংকট তৈরি হয়েছে তা নিয়ে ইসির কি ভূমিকা নেওয়ার কোনো উপায় নেই, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘না। ইসির রোল প্লে (ভূমিকা রাখার) করার কোনো সুযোগ নেই। এটাই আমাদের নিয়ম। আপনারা নিজেদের মধ্যে সংলাপ করুন। বিরাজমান কোনো দূরত্ব যদি থাকে, কোনো সংশয় যদি থাকে, যদি কোনো বিরোধ থাকে, তা মিটিয়ে ফেলে নির্বাচনে আসুন। নির্বাচন কমিশনের জন্য ভালো একটি নির্বাচন নিয়ে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করুন।
আরও পড়ুন>> আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনে ব্যালটে ভোট
সমঝোতা না হলে সুষ্ঠু নির্বাচনের সম্ভাব্যতা সম্পর্কে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, এটা আমি বলতে চাচ্ছি না। এক কথায় বলেছি, সবগুলো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে গণতান্ত্রিক চেতনা থেকে সেই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা জনগণের কাছে অনেক বেশি প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আমাদের চেষ্টার ত্রুটি থাকবে না। আমরা চেষ্টা করবো সীমিত সাধ্যের মধ্যে। তবে এটা সত্য ব্যালটে রিগিং প্রতিহত করা যতো কষ্টকর, ইভিএমে মোটেই ততটা কষ্টকর নয়। অনেকেই বলেন যে, রাতে ভোট হয়ে গেছে, সত্য-মিথ্যা আমি জানি না। তবে একটা পারসেপশন ক্রিয়েট (ধারণা সৃষ্টি) হয়ে গেছে যে, রাতেও ভোট হতে পারে। কিন্তু ইভিএম সকাল ৮টার আগে চালুই হবে না। ইট ইজ সো অটোম্যাটিক (এটা খুবই স্বয়ংক্রিয়), ন্যূনতম সুযোগ নেই। এদিক থেকে ইভিএমে সুযোগ ছিল, যেটা ব্যালটে নেই। আমরা তুলনামূলক বিশ্লেষণে এটা বললাম। আবার ইভিএম ব্যয়বহুল, ব্যালট ততটা নয়।
আরও পড়ুন>> ৪০ হাজার ইভিএমে ত্রুটি পেয়েছে ইসি
প্রধান নির্বাচন কমিশনার আরও বলেন, কেন্দ্রের নিরাপত্তার জন্য দলগুলোর উদ্দেশে বলবো- যদি নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়, তবে কেন্দ্রগুলোতে যে ভারসাম্য সৃষ্টি হয়, সেটা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কেবল করেন না, সেখানে সনাতন প্রক্রিয়া হচ্ছে, দলগুলো থাকবে, তাদের একনিষ্ঠ এজেন্টরাও থাকবেন। তারা মিলে এই ৭-৮টা ঘণ্টা কাজ করবেন। তারা যদি না থাকেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ভেতরে থাকবে না। কাজেই বাইরেরটা আমরা দেখতে পারবো। কিন্তু ভেতরেও কারচুপির সুযোগ থাকে। কাজেই এ জিনিসটা, তারা যদি আলোচনা করে একটা গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি এনে দেন, আমাদের অনুকূল পরিবেশ পাবো।
এইচএস/এএএইচ/জেআইএম