স্বল্প আয়ের পরিবারে ১৮ বছরের আগে গর্ভধারণের প্রবণতা বেশি
স্বল্প আয়ের পরিবারে ১৮ বছরের আগে গর্ভধারণের প্রবণতা বেশি। বুধবার (২২ মার্চ) প্রকাশিত এক জরিপে উঠে এসেছে এ তথ্য।
ঢাকার একটি হোটেলের কনফারেন্স হলে এই জরিপ প্রকাশ করা হয়। জরিপের নাম ‘মনিটরিং দ্য ইমপ্লিমেন্টেশন অব এসডিজিস ফর এনশিওরিংগার্লস অ্যান্ড চাইল্ড রাইটস ইন বাংলাদেশ।’
ওয়াই-মুভস প্রকল্পের আওতায় এটি যৌথভাবে করে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, অপরাজেয় বাংলাদেশ, ইয়েস বাংলাদেশ এবং ইউথ ফর চেঞ্জ।
আরও পড়ুন: গর্ভবতী মায়েদের যেসব টিকা নেয়া উচিৎ
২০২১ সালের জুন থেকে ২০২২ সালের জানুয়ারি সময়ে জরিপের উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়। দৈবচয়ন প্রক্রিয়ায় দেশের ৬৪ জেলায় তিন হাজার ১৭৫টি পরিবার, বিশেষ করে ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী নারীর অংশগ্রহণে পরিচালিত হয় এই জরিপ।
জরিপে দেখা যায়, সর্বনিম্ন আয়ের পরিবারে (মাসিক ২৫০০ টাকা) ১৮ বছর বয়সের আগে গর্ভধারণের হার সবচেয়ে বেশি, এর হার ৪৬ দশমিক ৩ শতাংশ। জরিপে অংশগ্রহণকারী নারীদের ৩৫ দশমিক ৮ শতাংশই জানান যে, তারা ১৮ বছর বয়সের আগেই গর্ভধারণ করেন, সারাদেশের মধ্যে এর হার রংপুরে সর্বোচ্চ, ৪৮ দশমিক ৯ শতাংশ।
জরিপে আরও দেখা যায়, অংশগ্রহণকারী নারীদের (১৪-৪৯ বছর বয়সী) মধ্যে ৯৩ দশমিক ৯ শতাংশ পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কে অবগত। আর তা অনুসরণ করেন ৭৮ দশমিক ৪ শতাংশ নারী।
আরও পড়ুন: মাতৃমৃত্যু কমলেও নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবা না পাওয়ায় বাড়ছে জটিলতা
এছাড়া ৬৯ দশমিক ৩ শতাংশ পরিবারে পুরুষ এবং নারী সদস্য একত্রে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেন। এই পদ্ধতি সম্পর্কে তারা তথ্য পান মূলত টেলিভিশন (৫৩ দশমিক ৭ শতাংশ), কমিউনিটি ওয়ার্কার (৩৩ দশমিক ২ শতাংশ) এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে (২৯ দশমিক ৫ শতাংশ)।
জরিপ প্রকাশ অনুষ্ঠান
যুব উন্নয়ন সংস্থা ইয়েস বাংলাদেশ’র নির্বাহী পরিচালক শামীম আহমেদ মূল প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন।
তিনি বলেন, জরিপে অংশ নেওয়া ১৮ শতাংশ নারীই জানিয়েছেন, তারা বিগত ১২ মাসে শারীরিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন। ২১ দশমিক ৯ শতাংশ নারীর পারিবারের মাসিক আয় ২৫০০ টাকার কম। আর ৯ দশমিক ৫ শতাংশের মাসিক পারিবারিক আয় ১০ হাজার টাকার বেশি।
এছাড়া ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ নারীর দাবি, তারা পড়াশোনা এবং চাকরির ক্ষেত্রে পরিবারের পুরুষ সদস্যের দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়েছেন।
আরও পড়ুন: গর্ভধারণের প্রথম সপ্তাহেই যে লক্ষণ প্রকাশ পায়
জরিপকৃত ৪৬ দশমিক ৭ শতাংশ পরিবারে শিশুরা কোনো না কোনোভাবে বাসায় কিংবা ঘরের বাইরে শারীরিক কিংবা মানসিক শাস্তি অথবা আগ্রাসনের শিকার হয়েছে।
জরিপে কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এরমধ্যে রয়েছে সচেতনতা বৃদ্ধিতে রাষ্ট্র ও সুশীল সমাজের আরও জোরালো ভূমিকা পালন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সহিংসতা বন্ধে হাইকোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়ন নিশ্চিতে মনিটরিং ব্যবস্থা, বাজেট বৃদ্ধি, তথ্যের ঘাটতি পূরণ ইত্যাদি।
আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংসদ সদস্য অপরাজিতা হক বলেন, নারী বিশেষ করে কন্যা শিশুদের অধিকার নিশ্চিতে বাংলাদেশ সরকার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এই জরিপের ফলাফল সেই কার্যক্রমকে আরও সমৃদ্ধশীল করতে সহায়তা করবে।
বিশেষ অতিথি সংসদ সদস্য আদিবা আঞ্জুম মিতা বলেন, শিশুদের ভবিষ্যৎ উন্নয়নে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে অগ্রগতি হচ্ছে। নারীবান্ধব সমাজ ব্যবস্থা নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। গোটা বিশ্বেই নারীদের প্রতি সহিংসতার চিত্র বিদ্যমান। নারীদের গৃহস্থালি সেবামূলক কাজের মূল্যায়ন এখনো অনুপস্থিত।
আরও পড়ুন: ত্রিশের পরে গর্ভধারণ? যেসব বিষয়ে সতর্ক থাকবেন
প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর কবিতা বোস বলেন, একটি দেশের নারীদের উন্নতির জন্য জরুরি সরকারের রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি। নারীরা নিজের জীবনের সিদ্ধান্ত নিজে নেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করবে- এই প্রতিশ্রুতি নিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আমরা অনেক কিছু অর্জন করেছি, কিন্তু আরও দূর যেতে হবে।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের প্রকল্প ব্যবস্থাপক (কৈশোরকালীন এবং প্রজনন স্বাস্থ্য) ডা. মনজুর হোসেন বলেন, কিশোর-কিশোরীদের উন্নয়নে আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। সবার স্বাস্থ্য উন্নয়ন কারো একার পক্ষে সম্ভব নয়। এজন্য একসঙ্গে কাজ করতে হবে। বাল্যবিয়ে এবং কৈশোরকালীন গর্ভধারণের হার কমাতে কাজ করতে হবে। জন্ম নিবন্ধনের যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে।
আইএইচআর/জেডএইচ/এএসএম