চালের বাজার অস্থিতিশীল করলে বরদাস্ত করবো না: খাদ্যমন্ত্রী

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫:০৬ পিএম, ২১ মার্চ ২০২৩

কৃত্রিম সংকট তৈরি করে চালের বাজার অস্থিতিশীল করলে তা বরদাস্ত করা হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।

মঙ্গলবার (২১ মার্চ) খাদ্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে আসন্ন পবিত্র রমজান মাসে চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে মিল মালিক ও চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ হুঁশিয়ারি দেন মন্ত্রী।

ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমদানি করলেই যে বাজার নিয়ন্ত্রণ হবে তা আমি বিশ্বাস করি না। তার থেকে অনেক বেশি আমাদের দেশে মজুত থেকে যায়। আমাদের যদি সৎ লক্ষ্য থাকতো, সৎ উদ্দেশ্য থাকতো তাহলে ১০ লাখ টন আমদানির জন্য ফরেন কারেন্সি নষ্ট করার কোনো দরকার ছিল না বলে আমি জোর গলায় বলতে পারি। তবে রাস্তা ওপেন থাকলে চালের দাম কম থাকে। আমরা ১০ লাখ টন আমদানি করলাম, আমি মনে করি আরও ২০ থেকে ২৩ লাখ টন মজুত আছে। আমরা কৃত্রিম সংকট করে বাজার অস্থিতিশীল করে তুলি। এটা কোনোভাবে বরদাস্ত করা হবে না।

আরও পড়ুন: দেশে চালের অভাব নেই, রমজানে দাম বাড়াবেন না

খাদ্যমন্ত্রী বলেন, পবিত্র রমজান মাসে আমাদের শপথ নিতে হবে, রমজানের মতো বাকি ১১ মাস যেন মানুষের সেবা করার সুযোগ পাই। চাল-আটা মানুষের জীবনে ক্ষুধা নিবারণের চরম দ্রব্য। রমজান মাস সিয়াম সাধনার মাস। সবাইকে অনুরোধ করবো আসুন এই মাসকে সামনে রেখে ৩০ দিনে ৩০টি রোজা যেন রাখি। তেমনি মানবসেবা করি। সেজন্য রমজান মাসকে উপলক্ষ করে সারা বছরের শপথ নেওয়ার জন্য আমার এই আহ্বান। মানুষকে যেন স্বস্তিতে রাখতে পারি।

‘মাঠ পর্যায়ের খাদ্য কর্মকর্তাদের প্রতি আমার নির্দেশ- আরসি ফুডরা (আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক) ডিসি ফুডদের (জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক) সঙ্গে মিটিং করবেন। ডিসি ফুডরা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকদের নিয়ে মিটিং করবেন। মনিটরিং, পরিষ্কার মনিটরিং রাখবেন। মজুত কোথায় আছে, অবৈধ মজুত।’

আরও পড়ুন: বছরের ব্যবধানে তারল্য কমেছে ৫৫ হাজার কোটি টাকা

মন্ত্রী বলেন, লাইসেন্সের সক্ষমতা কতখানি, সেই সক্ষমতার ওপরে যেন মজুত করে। সক্ষমতার বাইরে হলে সেটা অবৈধ মজুত। সেটা যে কোনো ব্যবসায়ী হোক, যেন করতে না পারে।

পণ্যের দাম বাড়ার সময় হঠাৎ বেড়ে যায়, কিন্তু কমার সময় তেমনটি আর হয় না বলে জানান খাদ্যমন্ত্রী।

তিনি বলেন, আসলে আমদানি আমরা কতটুকু করেছি, আমরা আমদানি অনিয়ন্ত্রিতভাবে করেছি কি না। রশিদ সাহেব (মিল মালিক) বললেন অনিয়ন্ত্রিত আমদানির ফলে বাজারে ধস নেমেছে। আসলে ধস নামেনি। ধস যদি নামতো কেজিতে ৫ টাকা, ৭ টাকা কমে যেত। সেটা কিন্তু আমরা দেখি না। বাড়ার সময় লাফিয়ে ৫ টাকা বাড়ে, কমার সময় কিন্তু এক টাকা করে করে কমে বা কমে না। এই রকম কষিয়ে কষিয়ে কমে। এটাই বাস্তবতা। কিন্তু বাড়ার সময় হঠাৎ করে বেড়ে যায়।

মন্ত্রী বলেন, বেসরকারিখাতে আমদানি হয়েছে মাত্র চার লাখ ১৮ হাজার মেট্রিক টন। এটা যদি বাজারে ধস নামে? সেই মুহূর্তে আমরা অনেক গ্রুপ, অনেক ব্যবসায়ী, অনেক মিল মালিকের সঙ্গে কথা বলেছি। কেউ কিন্তু সেই দুঃসময়ে আশ্বাসটি দেয়নি যে আমদানি করার প্রয়োজন নেই, যে উৎপাদন হয়েছে তাতেই আমরা মেকাপ করতে পারবো।

আরও পড়ুন: ব্রয়লার মুরগির দাম ৩০০ ছুঁই ছুঁই

সাধন চন্দ্র বলেন, ওএমএসের জন্য সরকারিভাবে সাড়ে ছয় লাখ টন আমদানি করেছি। সরকারিভাবে আমদানি না করলে ওএমএস দিতে পারতাম না।

মন্ত্রী আরও বলেন, আমদানি ওপেন থাকলেও আমদানি নিয়ন্ত্রণে আছে। আমরা অনুমতি দিলে করতে পারবে, না দিলে পারবে না। ডলারের বৃদ্ধির কারণে চার লাখ ১৮ হাজার মেট্রিক টন এবং আগের ছয় লাখ টনসহ মোট ১০ লাখ টন- এই পরিমাণ চাল দিয়ে হিউম্যান ক্রাইসিস অনেক বেশি। অনেকে বলছে দুর্ভিক্ষ হবে। তখন যদি আমরা ব্যবসায়ীরা আশ্বস্ত করতে পারতাম যে, চাল প্রচুর আছে মজুত করার দরকার নেই।

খাদ্য সচিব মো. ইসমাইল হোসেনের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. শাখাওয়াত হোসেন, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল কাইউম সরকারসহ চাল ব্যবসায়ী নেতা ও মাঠ পর্যায়ের খাদ্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

আরএমএম/জেডএইচ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।