‘হতাশা থেকেই সন্তানদের হত্যা করেন মা’


প্রকাশিত: ০৯:৪৬ এএম, ০৩ মার্চ ২০১৬

হতাশা থেকেই নিজের দুই সন্তানকে (অরণী ও আলভী) শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছেন মা মাহফুজা মালেক জেসমিন। বৃহস্পতিবার দুপুরে র‌্যাব সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং এর পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান এ তথ্য জানান।

মুফতি মাহমুদ খান বলেন, গত বছরের অক্টোবর হতে রামপুরার বনশ্রীর ব্লক-বি, ৪ নম্বর রোডের ৯ নম্বর বাসায় বাস করে আসছেন। নুসরাত আমান অরণী (১২) ভিকারুননিসা নূন স্কুলের ৫ম শ্রেণিতে এবং ছোট ভাই আলভী আমান (৭) হলি ক্রিসেন্ট (ইন্টারন্যাশনাল) স্কুল অ্যান্ড কলেজের নার্সারিতে পড়তো।
 
জিজ্ঞাসাবাদে মাহফুজা মালেক জানান, সন্তানদের স্কুলের পরীক্ষার ফলাফল এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তায় থাকতেন। বেগম মাহফুজার ধারণা ছিল, তার সন্তানেরা বড় হয়ে কিছুই করতে পারবে না।
 
তিনি আরো জানান, ২৯ তারিখ (সোমবার) মেয়ে অরণীর গৃহশিক্ষিকা চলে যাবার পর অরণী বিকেল সোয়া ৫টার দিকে ঘুমাতে যায়। তখন বাসায় বৃদ্ধা দাদী, দুই ভাই-বোন ও মা মাহফুজা উপস্থিত ছিলেন। একই সময়ে আলভী আমান বেড রুমের বিছানাতেই ঘুমাচ্ছিল। মা মাহফুজাও ছেলের সঙ্গে একই বিছানায় শুয়েছিলেন। এর কিছুক্ষণ পর প্রথমে অরণীকে ওড়না পেঁচিয়ে ধরেন। এ সময় ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে উভয়েই বিছানা থেকে মেঝেতে পড়ে যায়।

কিছু সময় পর মেয়ের শরীর নিস্তেজ হয়ে গেলে তিনি তার ছোট ছেলে আলভিকে খাটের উপর ঘুমন্ত অবস্থায় একইভাবে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করেন। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর তিনি লাশ দুটির সামনে কিছু সময় ধরে কান্নাকাটি করেন।
 
যদিও ঘটনার দিন তিনি বলেন, দুপুরে খাবার খেয়ে ঘুমানোর পর তার সন্তানরা আর ঘুম থেকে উঠেনি এবং তিনি পূর্বের দিন রাতে আনা খাবারের বিষক্রিয়ার কারণে মৃত্যু হয়েছে বলে সকলকে অবহিত করেন।
 
ক্যারিয়ার দুশ্চিন্তা ছাড়া অন্য কোনো কারণ ছিল কিনা জানতে চাইলে মুফতি মাহমুদ খান বলেন, আমরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। এখন মামলা হবে। ঘটনার আরো তদন্ত হবে। তদন্ত শেষে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানা যাবে যে আরো কোনো কারণ ছিল কিনা।

গত ২৯ ফেব্রুয়ারি (সোমবার) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বনশ্রীতে নুসরাত আমান অরণী ও আলভী আমানের রহস্যজনক মৃত্যু হয়। ঘটনার পর শিশু দুটির মা বেগম মাহফুজা মালেক (৩৮) জানায়, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি তাদের বিবাহবাষির্কী ছিল। পিতা-মাতার ১৪তম বিবাহবাষির্কী উদযাপন উপলক্ষে বনশ্রীস্থ ক্যান্ট চাইনিজ রেস্টুরেন্টে রাতের খাবার খেতে যায় এবং খাওয়ার পর অবশিষ্ট খাবার সঙ্গে নিয়ে বাসায় আসেন। ওই খাবার খেয়ে তারা (অরণী ও আলভী) অসুস্থ হয়ে পড়ে।
 
পরে শিশু দুটিকে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদানের জন্য আল রাজী হাসপাতাল, বনশ্রীতে নিয়ে যান নিহতদের বাবার বন্ধুরা। আল রাজী হাসপাতাল হতে তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক শিশু দুটিকে মৃত ঘোষণা করেন।
 
পরবর্তীতে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী শিশু দুইটিকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে এবং তাদের গলায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে প্রমাণিত হয়।
 
এ ঘটনার পর র‌্যাব তদন্ত শুরু করে। রহস্য উদঘাটনের জন্য শিশু দুটির গৃহ শিক্ষিকা শিউলি আক্তার (২৮), খালু নজরুল ইসলাম এর ভাগনে শাহিন (২২), মেয়ের মার মামাতো ভাই মো. ওবায়দুর ইসলাম (৩৪), বাসার দারোয়ান পিন্টু মন্ডল (৩২), অপর দারোয়ান ফেরদৌস (২৮) কে জিজ্ঞাবাদের করা হয়।
 
পরে দুই সন্তানের দাফন শেষে র‌্যাব জামালপুর থেকে তাদের বাবা ও মাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঢাকায় নিয়ে আসে।

জেইউ/এসএইচএস/এআরএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।