ঢামেকে আসছেন একের পর এক আহত, স্বজনদের আহাজারি
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজারে ভয়াবহ বিস্ফোরণে এ পর্যন্ত ১৫ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন অন্তত ৮৫ জন। তাদের মধ্যে ৪৪ জনকে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে ২৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
এদিকে, ঘটনাস্থল থেকে আহতদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে পাঠানো হচ্ছে। অনেকে এখনও নিখোঁজ। হতাহত ও নিখোঁজদের সন্ধানে ঢামেকে ভিড় করছেন স্বজনরা। তাদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে হাসপাতাল।
রনি নামে একজন এসেছেন তার ভাইয়ের খোঁজে। তিনি বলেন, ‘আমার ভাইয়ের নাম মমিন উদ্দিন সুমন। যে ভবনে বিস্ফোরণ ঘটেছে, তার নিচতলায় আনিকা জিন্স নামে ভাইয়ের একটি দোকান ছিল। দুর্ঘটনার সময় তিনি মার্কেটে ছিলেন।’
যখন বিস্ফোরণ ঘটে, তখন রনি মার্কেটে ঢোকার জন্য সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলেন বলে জানান। বিস্ফোরণে ভবন তছনছ হওয়ার দৃশ্য নিজ চোখে দেখেছেন তিনি। রনি বলেন, হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। মনে হলো যেন ভূমিকম্প হয়েছে। এরপর পুরো এলাকা অন্ধকার হয়ে যায়।’
ঘটনার আকস্মিকতা কাটিয়ে উঠতেই রনি ভাইয়ের সন্ধান শুরু করেন। তার মোবাইলে কল দেন। কিন্তু তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। এজন্য ঢামেকে এসেছেন তিনি। মেডিকেলে আসা যে কোনো রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স দেখলেই ছুটে যাচ্ছেন সেখানে। খুঁজে ফিরছেন ভাইকে।
আরও পড়ুন: হঠাৎ বিকট শব্দ, এরপর চিল্লাচিল্লি-রক্তমাখা মানুষের দৌড়াদৌড়ি
কান্নাজড়িত কণ্ঠে রনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার ভাইকে খুঁজে পাচ্ছি না। ঘটনার কিছুক্ষণ আগে ভাই আমাকে মোবাইলে কল দিয়ে জিজ্ঞেস করলো- তুই কই? অথচ এখন আমি ভাইকে খুঁজে বেড়াচ্ছি। আপনারা আমার ভাইকে খুঁজে দেন।’
আরমান নামে এক দোকানকর্মী খুঁজতে এসেছেন তার মহাজনকে। তার দোকানের আশপাশের মালিক, কর্মচারীকে পাওয়া গেলেও তিনি তার সহযোগী দোকানকর্মী সম্রাট, শান্ত ও মহাজনকে খুঁজে পাচ্ছেন না। আরমান বলেন, ‘আমারও সেখানে থাকার কথা ছিল। আল্লাহ আমারে বাঁচাইছে। কার যে দোয়া ছিল...।’
‘আমি আমার দোকানের কাউকে পাচ্ছি না। সবাই সবার লোকজনকে পেয়ে যাচ্ছে। আমি আমার লোকজনকে পাচ্ছি না...’ বলতে বলতে ঘটনাস্থল থেকে আসা একটি অ্যাম্বুলেন্স দেখে সেদিকে ছুটে যান আরমান।
আরও পড়ুন: আরও চার মরদেহ উদ্ধার, নিহত বেড়ে ১৫
মঙ্গলবার (৭ মার্চ) বিকেল ৪টা ৫০ মিনিটের দিকে গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজারে ‘ক্যাফে কুইন’ নামে সাততলা ভবনের নিচতলায় বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। এসময় পাশাপাশি থাকা দুটি ভবন ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
সরেজমিন দেখে গেছে, সাততলা যে ভবনে (ক্যাফে কুইন) বিস্ফোরণ ঘটেছে, তার পাশে ‘চায়না পয়েন্ট’ নামে আরেকটি পাঁচতলা ভবন রয়েছে। এ ভবনে ব্র্যাক ব্যাংকের শাখা রয়েছে। বিস্ফোরণে পাঁচতলা এ ভবনের সব ফ্লোরই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেঙে গেছে ভবনের জানালার কাচ।
বিস্ফোরণের ভয়াবহতা আঁচ করা যাচ্ছে আশপাশের বিভিন্ন স্থাপনা দেখেও। সব ভেঙেচুরে তছনছ হয়ে গেছে। রাস্তায় চলাচল করা যাত্রাবাহী বাসও বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাসের জানালার কাচ ভেঙে গেছে। আহত হয়েছেন বাসে বসে থাকা যাত্রীরাও।
আরও পড়ুন: ‘ক্যাফে কুইন’ ভবনে বেশিরভাগই স্যানিটারি ওয়্যারের দোকান
ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ক্যাফে কুইন ভবনে বেশিরভাগই স্যানিটারি ওয়্যারের দোকান। ভবনের পাশে ব্র্যাক ব্যাংকের ভবন। ক্যাফে কুইন ভবনের বিস্ফোরণে ব্র্যাক ব্যাংক ভবনসহ আশপাশের স্থাপনারও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মো. সম্রাট বলেন, ‘বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে ৫টার দিকে হঠাৎ বিকট আওয়াজ শুনতে পাই। শব্দ পাওয়ার সঙ্গে মানুষকে ছোটাছুটি করতে দেখি। অনেক মানুষকে ক্যাফে কুইন ভবনের সামনে পড়ে থাকতে দেখি। তারা সঙ্গে সঙ্গে মারা যান।’
তিনি বলেন, ‘ক্যাফে কুইন ভবনের নিচতলার শাটার দরজা ভেঙে অনেক দূর চলে যায়। এখানে স্যানিটারির দোকান বেশি। এসময় রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় একটি বাসও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ভবনের পাশে পানের দোকান, কুরিয়ার সার্ভিস আছে, সেগুলো ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে।’
এদিকে, বিস্ফোরণের পর সেখানে উদ্ধারকাজ করছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা। বিস্ফোরণ ঘটা ভবনের সামনে সারিবদ্ধভাবে সাজানো রয়েছে অ্যাম্বুলেন্স। কিছুক্ষণ পরপরই ভবন থেকে মরদেহ বের করে আনছেন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা।
আল-সাদী ভূঁইয়া/এএএইচ/এএসএম