সবাই উদ্যোক্তা হয়ে জন্মায়, চাকরি ভুল পথে নিয়ে যায়: ড. ইউনূস
সব মানুষই উদ্যোক্তা হয়ে জন্ম নেয়, চাকরি হলো তাকে ভুল পথে নিয়ে যাওয়া বলে মন্তব্য করেছেন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, ‘গ্রামীণ ব্যাংকের এক কোটি দরিদ্র নারী ঋণগ্রহীতা যদি উদ্যোক্তা হতে পারেন, তাহলে যে কোনো মানুষেরই উদ্যোক্তা হতে পারার কথা। কিন্তু আমরা মানুষকে উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ দিই না। তাদের চাকরি খোঁজার পথে ঠেলে দিই।’
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ভারতের আসামের স্বায়ত্বশাসিত বোডোল্যান্ড অঞ্চলের প্রশাসনিক সদরদপ্তর কোকরাঝারে অনুষ্ঠিত বোডোল্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল নলেজ ফেস্টিভ্যালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি। শুক্রবার (৩ মার্চ) ‘ইউনূস সেন্টার’ থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
ড. ইউনূস বলেন, ‘নারীদের উদ্যোক্তায় পরিণত করে তাদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা সমাজের সার্বিক উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। প্রতিটি সরকারেরই লক্ষ্য হওয়া উচিত মানুষকে উদ্যোক্তায় পরিণত করা, চাকরিতে নয়। দরিদ্র নারীদের উদ্যোক্তায় রূপান্তরিত করতে গ্রামীণ ব্যাংকের উদ্যোগ বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে।’
নলেজ ফেস্টিভ্যাল উদ্বোধন করেন স্বায়ত্বশাসিত বোডোল্যান্ড অঞ্চলের প্রথম প্রধান নির্বাহী প্রমোদ বোরো। তিনিই ড. ইউনূসকে রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে এখানে আমন্ত্রণ জানান। তিনদিনের এ সফরে ড. ইউনূস পশ্চিমবঙ্গ ও আসামে অবস্থান করেন।
নলেজ ফেস্টিভ্যালের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আসাম রাজ্য পরিষদের স্পিকার বিশ্বজিৎ দাইমারী, প্রতিমন্ত্রী ইউজি ব্রক্ষ্ম প্রমুখ। ফেস্টিভ্যালে আসামের ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অংশ নেন।
ফেস্টিভ্যালে বোডোল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অঞ্চলে সার্বিকভাবে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-২০৩০ বাস্তবায়নের ওপর বিশেষভাবে জোর দেওয়া হয়। আলোচ্য বিষয়গুলোর মধ্যে ছিল- বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, স্থানীয় জ্ঞান ও দক্ষতা ব্যবস্থা, নারীর ক্ষমতায়ন, শিশু অধিকার ও সুরক্ষা, শান্তি ও সুশাসন এবং বোডোল্যান্ড টেরিটোরিয়াল কাউন্সিলের ভূমিকা। ভারতের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ৩ শতাধিক ব্যক্তিবর্গ এবং ১৪টি দেশ থেকে আগত ৩৫ জন প্রতিনিধি এ ফেস্টিভ্যালে যোগ দেন।
ফেস্টিভ্যালে বক্তব্য দেওয়া ছাড়াও ড. ইউনূস বোডোল্যান্ড কলেজ ও বোডোল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক আয়োজিত পৃথক সমাবেশে ভাষণ দেন। এছাড়া তিনি রাঙ্গিয়া কলেজ ও গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তব্য দেন। আসামের ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সঙ্গে শিক্ষাবিষয়ক একটি বিশেষ মতবিনিময় সভায়ও অংশ নেন তিনি।
বোডো জনগোষ্ঠীর জন্য একটি পৃথক বোডো রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে আসামের বোডোরা প্রায় ৩০ বছরের গুপ্ত ও সশস্ত্র সংগ্রাম করেছেন। ২০২০ সালে একটি শান্তি চুক্তির অধীনে বোডোল্যান্ড টেরিটোরিয়াল রিজিওন সৃষ্টি হয়। এ আন্দোলনে অনেকে জীবন বিসর্জন দেন।
শান্তি চুক্তির অধীনে প্রমোদ বোরোর নেতৃত্বে স্বায়ত্বশাসিত বোডোল্যান্ড টেরিটোরিয়াল রিজিওন সৃষ্টি করা হয়, যার প্রধান নির্বাহী হিসেবে বোডো জনগোষ্ঠীর স্বায়ত্বশাসন নিশ্চিত করা তারই দায়িত্ব।
বোডোল্যান্ড টেরিটোরিয়াল কাউন্সিল আয়োজিত এ ‘নলেজ ফেস্টিভাল’ বৃহত্তর বিশ্বের সঙ্গে যুক্ত হতে ও বোডো জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে অভিজ্ঞতা বিনিময় ও দিক-নির্দেশনা গ্রহণের লক্ষ্যে প্রথম আন্তর্জাতিক সমাবেশ।
এমওএস/এএএইচ/জিকেএস