চালকদের বিস্ময়
রিকশার গতি ২৫ কিলোমিটার, অথচ মোটরসাইকেলে ৩০!
মোটরসাইকেল চলাচল নীতিমালা প্রত্যাহারের দাবিতে রাজধানীতে মানববন্ধন করেছেন মোটরসাইকেলের চালকরা। এ সময় তারা বলেন, যেখানে একটি রিকশার গতি ২০ থেকে ২৫ কিলোমিটার, সেখানে মোটরসাইকেলের সর্বোচ্চ গতি ৩০ কিলোমিটার কীভাবে হয়!
বুধবার (১ মার্চ) দুপুর তিনটায় রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে এ মানববন্ধনে অংশ নেন হাজারের অধিক মোটরসাইকেল চালক। এ সময় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের পূর্ব পাশে প্রায় পুরো সড়কের পাশে ও ফুটপাতে সারি সারি মোটরসাইকেল রেখে মানবন্ধন করেন চালকরা।
তবে কোনো নির্দিষ্ট সংগঠন বা চালকদের আলাদা গ্রুপের নেতৃত্বে এ মানববন্ধন করতে দেখা যায়নি। সাধারণ মোটরসাইকেল চালকদের ব্যানারে মানববন্ধনে বিভিন্ন গ্রুপের চালকসহ সাধারণ চালকরা অংশ নেন।
মানবন্ধনে অংশ নেওয়া চালকরা বলেন, এ আইন মোটরসাইকেল চালকদের জন্য পুরোপুরি সাংঘর্ষিক ও অবাস্তব। কারণ যেখানে একটি সাইকেল বা রিকশার গতি ঘণ্টায় ২০ থেকে ২৫ কিলোমিটার, সেখানে মোটরসাইকেলের মতো একটি যানবাহনের সর্বোচ্চ গতি ৩০ কিলোমিটার কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়।
সালমান নামের এক বাইকার বলেন, ঢাকা শহরে চালকরা মোটরসাইকেল ব্যবহার করেন সময় বাঁচানোর জন্য। সেক্ষেত্রে গতিসীমা যদি ৩০ কিলোমিটার হয় তাহলে লাইসেন্স করে ও বছর বছর কর দিয়ে মোটরসাইকেল চালানোর কনো যুক্তি নেই। এছাড়াও উন্নত দেশের কোথাও মহাসড়কে ৬০ কিলোমিটার গতিতে মোটরসাইকেল চালনোর কোনো নজির নেই। বরং মহাসড়কে কম গতিতে যানবাহন চালালে সেসব দেশের ট্রাফিক কর্মকর্তারা সেটিকে ট্রাফিকের জন্য একটি বিপদ মনে করেন। কারণ তা অন্য যানবাহনের জন্য বিভ্রান্তিকর হতে পারে। তাছাড়া মহাসড়কে অতিরিক্ত কম গতি মোটরসাইকেল চালকদের অন্য যানবাহনের মাধ্যমে দুর্ঘটনার প্রবণতা আরও বাড়িয়ে দেবে।
মানববন্ধনে মোটরসাইকেল চালকরা বলেন, মোটরসাইকেল ব্যবহারকারীদের একটি বড় অংশই তরুণ উদ্যোক্তা। যারা সাধারণত ১২৫ সিসি অথবা তার কম সিসি ক্ষমতা সম্পন্ন মোটরসাইকেল ব্যবহার করেন। সেক্ষেত্রে মহাসড়কে যদি ১২৫ সিসি ক্ষমতার মোটরসাইকেল চলতে দেওয়া না হয়, তাহলে তা তরুণ উদ্যোক্তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করবে। যা আমাদের অর্থনীতির অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করবে।
তারা বলেন, আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে ঈদ ও অন্যান্য উৎসবে অর্থনীতির চাকা অনেক গতিশীল থাকে। সেক্ষেত্রে যদি এই সময় মোটরসাইকেল চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়, তবে তা সামগ্রিক অর্থনীতি তথা ব্যবসা-বাণিজ্য ও যোগাযোগ সম্প্রসারণে বাধা সৃষ্টি করবে।
চালকরা জানান, আইনে ত্রুটিগুলো পর্যালোচনা করে বিষয়গুলোকে সরকার তথা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য আমরা আজ মানববন্ধন করছি।
আগামী ৫ মার্চ বিআরটিএ চেয়ারম্যান বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হবে জানিয়ে মোটরসাইকেল চালকরা বলেন, প্রয়োজনে আমরা প্রধানমন্ত্রী বরাবরও স্মারকলিপি পেশ করবো। আশা করি, প্রধানমন্ত্রী সব বিষয় পর্যালোচনা করে যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত নেবেন। যা সমগ্র তরুণ সমাজ তথা তরুণ উদ্যোক্তাদের দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে উদ্বুদ্ধ করবে।
এর আগে গত শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) মানববন্ধন কর্মসূচির অনুমতি চেয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাছে আবেদন করা হয়। এ সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়, দেশের সব মোটরসাইকেল ব্যবহারকারীর পক্ষ থেকে এ কর্মসূচি পালিত হবে। কর্মসূচিটি হবে শান্তিপূর্ণ।
ডিএমপিকে দেওয়া চিঠিতে সই করেন তিন মোটরসাইকেল ব্যবহারকারী। তারা হলেন- শাখাওয়াত হোসেন, এ ক ম ইকবাল মাহমুদ ও অনন্ত জান্নাত। চিঠিতে খসড়া নীতিমালাকে ‘জনবিরোধী’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন তারা।
শাখাওয়াত হোসেন জানান, কোনো সংগঠনের ব্যানারে নয়, সাধারণ চালক হিসেবে এ কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছে।
এনএইচ/কেএসআর/এএসএম