ফের বিভ্রান্তিতে চাঁদ দেখা কমিটি, শবে বরাত ঘোষণা রাত সাড়ে ৯টায়
চাঁদ দেখার সংবাদ জানাতে আবারও বিভ্রান্তিতে পড়েছে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি। বিভ্রান্তির কারণে রাত প্রায় সাড়ে ৯টার দিকে শাবান মাসের চাঁদ দেখার খবর ও শবে বরাত পালনের তারিখ জানায় কমিটি।
কেন এত দেরিতে ঘোষণা, সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু জানাননি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক মহা. বশিরুল আলম ও ফাউন্ডেশনের দ্বীনি দাওয়াত ও সংস্কৃতি বিভাগের পরিচালক আনিছুর রহমান সরকার।
সারাদেশের ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে জেলা প্রশাসনের কমিটি, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যের ভিত্তিতে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি চাঁদ দেখার সংবাদ জানিয়ে থাকে। সাধারণত মাগরিবের নামাজের পর ইসলামিক ফাউন্ডেশনের জেলা কার্যালয়গুলোর উপ-পরিচালক ও সহকারী পরিচালকরা চাঁদ দেখার সংবাদ রাজধানীর বায়তুল মোকাররমে ফাউন্ডেশনের দ্বীনি দাওয়াত ও সংস্কৃতি বিভাগে ফোন করে জানিয়ে দেন। সেই তথ্যের ভিত্তিতে মাগরিবের নামাজের ৩০ মিনিট থেকে এক ঘণ্টার মধ্যে এশার আগেই কমিটি সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়।
কিন্তু মঙ্গলবার সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে এশার নামাজের পর, রাত ৯টা ২৫ মিনিটে। এত দেরিতে কেন সিদ্ধান্ত জানানো হলো, জানতে চাইলে ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক জাগো নিউজকে বলেন, চাঁদ দেখা গেছে যথা সময়েই। জেলা প্রশাসকরা যাচাই-বাছাইয়ের কাজ করছিলেন।
আরও পড়ুন: ইসলামে রজব মাসের ফজিলত ও আমল
ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তারা চাঁদ দেখোর সংবাদ দিয়েছে নাকি সাধারণ মানুষ দিয়েছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি জেলা থেকে আমাদের জানিয়েছে। আমরা জেলার কাছে থেকে সংবাদ পেলাম।
তাহলে এত দেরি কেন, এ বিষয়ে আর কোনোও উত্তর দেননি মহা. বশিরুল আলম। দ্বীনি দাওয়াত ও সংস্কৃতি বিভাগের পরিচালক আনিছুর রহমান সরকারও এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
তবে সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে জানান, মাগরিবের নামাজ শেষে সন্ধ্যা সোয়া ৬টা থেকেই ইসলামিক ফাউন্ডেশনের টেলিফোন নম্বরগুলোতে ফাউন্ডেশনের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা চাঁদের সংবাদ জানাতে থাকেন। সন্ধ্যা সাতটার মধ্যে ৬৪ জেলা থেকেই ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তারা জানান তারা চাঁদ দেখেননি। আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকেও এমন খবর আসে। চাঁদ দেখা যায়নি, আগামী ৮ মার্চ শবে বরাত পালিত হবে, এমন সিদ্ধান্তের ঘোষণাও তৈরি করা হয়। সন্ধ্যা সোয়া ৭টার মধ্যে ধর্মবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খানের ঘোষণা দেওয়ার কথা।
আরও পড়ুন: রমজানের আর মাত্র ৩০ দিন বাকি
কিন্তু এরমধ্যে গোপালগঞ্জ থেকে কমিটির কাছে খবর আসে একজন চাঁদ দেখেছেন। সেখানকার ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মসজিদভিত্তিক গণশিক্ষা কার্যক্রমের এক ইমাম, মুয়াজ্জিন ও আরও একজনসহ মোট তিনজন চাঁদ দেখেছেন। কমিটির সঙ্গে তাদের কথাও হয়। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে খবরটি না আসলে এটি কমিটি নিতে পারে না। কিন্তু তাদের অবস্থান ছিল টুঙ্গিপাড়া ও বাগেরহাটের সীমান্তে। শেষে ওই লোককে গাড়ি পাঠিয়ে জেলা চাঁদ দেখা কমিটির কাছে এনে তাদের স্টেটমেন্ট নেওয়া হয়। কমিটি সেই স্টেটমেন্টের ভিত্তিতে জাতীয় কমিটিতে জানিয়েছে।
অন্যদিকে নোয়াখালীর হাতিয়াতেও এক মাদরাসার শিক্ষক চাঁদ দেখেছেন বলে জাতীয় কমিটির কাছে খবর আসে। পরে স্থানীয় প্রশাসন হয়ে সেই খবরগুলো আসতে সময় লেগেছে। তাই মূলত চাঁদ দেখার সংবাদ জানাতে বিলম্ব হয়েছিল বলে ওই কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এরমধ্যে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে বায়তুল মোকাররম ত্যাগ করার সময় ধর্ম প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, শুধু দুটি জায়গা থেকে চাঁদ দেখার সংবাদ পাওয়া গেছে। সেটি যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। আমি চলে যাচ্ছি, ডিজি সাহেব এ বিষয়ে ঘোষণা দেবেন।
এর আগে ২০১৯ সালে ঈদুল ফিতর উদযাপনে শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখার সিদ্ধান্ত নিয়ে চরম সমালোচনায় পড়ে চাঁদ দেখা কমিটি। তখন একবার চাঁদ দেখা যায়নি, এরপর রাতে ১১টার দিকে আবার চাঁদ দেখা যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: শবে বরাত ৭ মার্চ
২০২০ সালে মহররম মাসের চাঁদ দেখা নিয়েও বিভ্রান্তিতে পড়েছিল জাতীয় কমিটি। ওই বছরের ২০ আগস্ট রাত সাড়ে ১০টায় চাঁদ দেখার সংবাদ পর্যালোচনা করে আশুরা পালনের তারিখ ঘোষণা করে কমিটি।
সদ্য শেষ হওয়ার রজব মাসের চাঁদ দেখার সিদ্ধান্ত জানানোর ক্ষেত্রে প্রথমে ভুল ঘোষণা করা হয়। গত ২৩ জানুয়ারি কমিটি জানায়, আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি শবে মেরাজ পালিত হবে। কিন্তু পরে সংশোধন করে বলা হয়, শবে মেরাজ পালিত হবে ১৮ ফেব্রুয়ারি।
আরএমএম/এমএইচআর