প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যাশা
নতুন প্রজন্মও পদকপ্রাপ্তদের মতো সমাজে ভূমিকা রাখবে
নতুন প্রজন্মও পদকপ্রাপ্ত গুণীজনদের মতো সমাজে এভাবে ভূমিকা রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি মনে করেন, গুণীজনদের পদাঙ্ক অনুসরণ করেই দেশ এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে একুশে পদক ২০২৩ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তেব্যের এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একুশে পদকপ্রাপ্ত গুণীজনদের আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি। সমাজে এমন অনেক গুণীজন পড়ে আছেন, যাদের বিষয়ে অনেকে জানে না। আমরা তাদের অবদান স্মরণ করার চেষ্টা করি। একটা সময় অল্প কিছু লোককে এ পদক দেওয়া হতো। আমি ২১ জনকে বেছে নিই। আমি আশা করি, নতুন প্রজন্মও এভাবে সমাজে ভূমিকা রাখবে। কারণ গুণীজনদের পদাঙ্ক অনুসরণ করেই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
এসময় তিনি ভাষা আন্দোলনের গৌরবজ্জ্বল স্মৃতিচারণ করে বলেন, শহীদের রক্ত কখনো বৃথা যায় না। বৃথা যায়নি।
আরও পড়ুন>>> একুশে পদক পেলেন ২১ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান
সরকারপ্রধান বলেন, আমাদের ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর অবদানের স্বীকৃতি আমাদের অনেক জ্ঞানী-গুণীরাও দিতে চাননি। তারা বলেছেন, তিনিতো জেলে ছিলেন। আমার প্রশ্ন, তিনি জেলে ছিলেন কেনো? এ ভাষার জন্য আন্দোলন করেই তো তিনি জেলে ছিলেন। এ নিয়ে আমি ভাষণ দেওয়ার পর আমাদের এক বিদগ্ধজন খুব সমালোচনা করে লিখলেন, আমি নাকি সব বানিয়ে বানিয়ে বলছি। স্বাধীনতার পর এ রকম পরিবেশে আমাদের পড়তে হয়েছে। তখন আমি আর বেবি আপা এম আর আক্তার মুকুল ভাইয়ের কাছে যাই, তারিখসহ সব লেখার জন্য। তিনি লিখেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৫৬ সালে আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করে, পাকিস্তানের প্রথম শাসনতন্ত্র যখন রচনা হয় তখনই কিন্তু উর্দুর সঙ্গে বাংলাও রাষ্ট্র ভাষার মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল। শুধু তাই না আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়। ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস ঘোষণা দিয়ে সেদিন ছুটি দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, পাকিস্তানিরা কিন্তু এখানে থেমে থাকেনি। তখন বলা হলো, আরবি হরফে বাংলা লিখতে হবে। পাকিস্তান সরকারের শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন ফজলুর রহমান, আমাদের সালমান রহমানের বাবা (সালমান এফ রহমান), তিনি এ সিদ্ধান্ত দেন। তার বিরুদ্ধেও ছাত্ররা প্রতিবাদ জানায়। যখন সেটাও পারলো না। এরপর আরও একধাপ আসলো। রোমান হরফে বাংলা লেখা লিখতে হবে। অর্থাৎ বার বার বাংলার ওপর আঘাত।
সেখানেই থেমে যায়নি। আমাদের ঢাবির বাংলা বিভাগের প্রধান ছিলেন আব্দুল হাই। মোনায়েম খান ছিলেন পূর্ব বাংলার গভর্নর। একদিন আমরা সিদ্ধান্ত পেলাম, রবীন্দ্রনাথের বই পড়া যাবে না। সেটা নিয়ে তুমুল আন্দোলন। আমরাও আন্দোলন করছি। শিক্ষকরাও আন্দোলন করেছেন। তখন মোনায়েম সাহেব হাই সাহেবকে ডাকলেন। বললেন, কী মিয়া, আপনারা শুধু রবীন্দ্র সংগীত করেন। দু-চারটা রবীন্দ্র সংগীত লিখে ফেলতে পারেন না। হাই সাহেব বললেন, স্যার, লিখতে তো পারি। আমি যদি লিখি, সেটা তো রবীন্দ্র সংগীত হবে না, হাই সংগীত হবে। কত চড়াই উতরাই পার হয়ে আসতে হয়েছে, এখনকার প্রজন্ম বোধহয় জানে না।
তিনি আরও বলেন, এভাবেই সংগ্রাম দানা বেধেছে। তার পথ বেয়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। ব্রিটিশরা শাসন করলেও ভাষা ও সাহিত্য এবং সংস্কৃতি নিয়ে তাদের বাধা ছিল না। কিন্তু আমাদের দেশ সেটা করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ভাষা আন্দোলনের করার ফলে গ্রেফতারের পর ২৭ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। মুক্তি পাওয়ার ৫৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি আরমানিটোলায় এক জনসভার মাধ্যমে পালন হয়। সেখানেই ২১ ফেব্রুয়ারিকে শহীদ দিবস হিসেবে ঘোষণা ও শহীদদের প্রতি সম্মান দেওয়ার দাবি তোলেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেনের সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য দেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।
এসইউজে/এমআইএইচএস/জেআইএম