সংবাদ সম্মেলনে তেলেগু নারী

মেয়রসাব বিষ দিয়ে আমাদের সবাইকে মেরে ফেলেন

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৭:১৮ পিএম, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
ফাইল ছবি

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর ধলপুরের আউটফলে তেলেগু সম্প্রদায়ের ১৩০টি পরিবারকে কলোনি ছেড়ে দিতে সম্প্রতি নোটিশ করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। এ নোটিশের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে তেলেগু সম্প্রদায়ের লোকজন।

সংবাদ সম্মেলনে ডিএসসিসি মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের উদ্দেশে তেলেগু সম্প্রদায়ের নারী রামনাম্মা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘এক সপ্তাহ ধরে আমাদের ঘুম নেই, খাওয়া নেই। আমরা কী পাপ করেছি মেয়রসাব? আমরা কী অপরাধ করেছি? এ মাটিতে জন্ম কি আমাদের ভুল?’

রামনাম্মা বলেন, ‘আমরা এখন যেখানে বসবাস করছি, আগে সেখানে পা দিলে রক্ত আসতো। এ মাটি এখন শক্ত হয়েছে। আর প্রশাসনের চোখে পড়ে গেছে। আমরা কোথায় যাবো? আপনারা যদি এ জায়গা নিতে চান, বিষ দিয়ে আমাদের তেলেগু সবাইকে মেরে ফেলেন। তারপরে জায়গা নেন।’

‘আউটফল তেলেগু কলোনির ভূমিহীন ১৩০টি পরিবারকে পুনর্বাসন ছাড়া উচ্ছেদ করার পাঁয়তারার প্রতিবাদ’ শীর্ষক এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, নিজেরা করি, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি), ব্লাস্ট, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), আইন ও সালিশ কেন্দ্র, মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন, এএলআরডি ও ভুক্তভোগী জনগোষ্ঠী।

মেয়রসাব বিষ দিয়ে আমাদের সবাইকে মেরে ফেলেন

সংবাদ সম্মেলন থেকে সাতটি দাবি তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে আছে পুনর্বাসন ছাড়া উচ্ছেদ বন্ধ, স্থায়ী পুনর্বাসন করা হলে তার বৈধ কাগজপত্র দেওয়া, তাদের উপাসনালয়ের সুরক্ষা, চাকরির নিশ্চয়তা, পরিচ্ছন্নতাকর্মীর চাকরি না থাকলে উচ্ছেদ না করা এবং তাদের জন্য বাসযোগ্য আবাসনের ব্যবস্থা করা।

গত ৯ ফেব্রুয়ারি তাদের দুইদিনের মধ্যে এ এলাকা খালি করে দেওয়ার নির্দেশ দেয় সিটি করপোরেশন। তারপর স্থানীয় কাউন্সিলর ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা একই নির্দেশ দেন। এ কথা ছড়িয়ে পড়লে কলোনিজুড়ে উচ্ছেদ আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, শহর পরিচ্ছন্নতার কাজে ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমল থেকে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা এলাকায় তারা বসবাস করে আসছিলেন। ১৯৮২ সালে একটি এনজিওর মাধ্যমে টিকাটুলী থেকে তাদের সায়েদাবাদ হুজুরবাড়ী এলাকায় আনা হয়। পরে হুজুরবাড়ীর জায়গাটি এরশাদ সরকার লিখে দিয়ে ১৯৯০ সালে সরকারিভাবে তাদের ধলপুরে আনা হয়, যা পরবর্তী সময়ে মেথর কলোনি নামে পরিচিতি লাভ করে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এএলআরডির ব্যবস্থাপক (প্রোগ্রাম) রফিক আহমেদ বলেন, বস্তি উচ্ছেদ মামলায় হাইকোর্টের নির্দেশনা রয়েছে, পুনর্বাসন ছাড়া কোনো বস্তি বা কলোনি উচ্ছেদ করা যাবে না। কারণ, সংবিধানে জনগণের বাসস্থানের অধিকার রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতির অন্তর্ভুক্ত। এখানে বৈধভাবে বসবাসরত পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের উচ্ছেদ হবে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।

হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘মেয়র তাপস পেশাগত জীবনে একজন আইনজীবী। আশ্চর্য মনে হয়েছে যে তিনি আইনজীবী হওয়া সত্ত্বেও হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের যাবতীয় নজিরকে উপেক্ষা করে কোনোরকম নোটিশ ছাড়া, পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে তাদের উচ্ছেদের কথা কী করে বলতে পারলেন। ক্ষমতায় থাকতে গিয়ে তারা বলেন, আমরা জনগণের প্রভু নই, সেবক। কিন্তু সেবক ক্ষমতায় গেলে কী করে প্রভুর ভূমিকায় অবতীর্ণ হন, এ বিষয়টি আমরা ফজলে নূর তাপসের কাছ থেকে আশা করিনি।’

রানা দাশগুপ্ত আরও বলেন, ‘আজকের এ সংবাদ সম্মেলন থেকে যেসব দাবি উত্থাপিত হয়েছে, সেগুলোকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, মেয়র ও সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে যৌক্তিক বিবেচনায় নিতে হবে। তা না হলে আমরা ধরে নেবো সরকার ও প্রশাসন জনগণের বন্ধু হতে পারে না।’

মেয়রসাব বিষ দিয়ে আমাদের সবাইকে মেরে ফেলেন

হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজল দেবনাথ বলেন, ঢাকা শহরে ১৪টি জায়গায় ডাম্পিং স্টেশন আছে। তেলেগুদের যেখানে থাকতে দেওয়া হয়েছিল, সেটিও ছিল একটি ডাম্পিং স্টেশন। সেখানে মরা গরু, ছাগল, কোরবানির চামড়া, আবর্জনা সবকিছু ফেলা হয়। এখন যখন জায়গাটি বসবাসের উপযোগী হয়েছে, তখন এতে চোখ পড়েছে সিটি করপোরেশনের।

তেলেগু সম্প্রদায়ের ওপর অন্যায় ও অবিচার হতে দেওয়া হবে না বলে মন্তব্য করেন এএলআরডি নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা। তিনি বলেন, ‘তারা অন্য জায়গায় ছিলেন। আউটফল এলাকায় তারা গেছেন সরকারের ইচ্ছায়। বারবার তাদের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তর করা হয়েছে। তারা কি হাতের খেলনা? তারা কি এ দেশের নাগরিক নন? যখন খুশি তাদের এখানে ওখানে স্থানান্তর করবেন, মাথা গোঁজার ঠাঁই কেড়ে নেবেন, তাদের নিরাপত্তা, মর্যাদা, সম্মান সবকিছু ভূলুণ্ঠিত হবে, এটা হতে পারে না।’

সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, বেলার হেড অব প্রোগ্রাম ফিরোজুল ইসলাম, ব্লাস্টের তাজুল ইসলাম, মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের আইনজীবী নাহিদ শামস প্রমুখ বক্তব্য দেন।

এমএমএ/এমএএইচ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।