রাতের আঁধারে দিনের আলো : কপাল পুড়ল ওদের


প্রকাশিত: ১২:৫১ পিএম, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

রাত গভীর হলেই বেড়ে যায় ওদের আনাগোনা। অনেকেই ডাকেন ‘নিশিকন্যা’ বলে। অন্ধকারের সঙ্গে তাদের বসবাস। অন্ধকারের সঙ্গেই ওদের মিতালী। গভীর নিশিতে নিশিকন্যাদের সঙ্গে মিলতে খদ্দেররাও বেশ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। কারণ এমন অন্ধকারে লোকচক্ষুর আড়াল হওয়া যায় সহজেই। পুলিশ সামলানোর ধকলও থাকে না। বলা যায় গভীর অন্ধকারে কোনো কিছুর ঝুঁক্কি নেই।

রাজধানীর কারওয়ান বাজার থেকে শাহবাগ সড়কের অমন অন্ধকার মিলে গেছে প্রায় দিনের আলোয়। সম্প্রতি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ এই সড়কে নতুন বাতি সংযুক্ত করেছে, যা অনেকেই বলছেন সার্চ লাইট। আর এই নতুন বাতিতে পাল্টে গেছে এলাকার দৃশ্যপট। পূর্ণিমার চাঁদের ন্যায় শত শত বাতির ঝলকানিতে সড়ক এবং এর দু’পাশের খানিক জায়গা একেবারে দিনের মত পরিষ্কার। পরিষ্কার আলোয় রাস্তাটি থেকে সরিষার দানাও যেন গুণে গুণে তোলা যায়। আর তাতেই যেন ওদের কপাল পুড়েছে। রাত ভর দাঁড়িয়ে থেকেও খদ্দের মেলে না। দু’একজন মিললেও আলোর ভয়ে পালিয়ে বাঁচেন। আলোর কারণে পুলিশের নজরদারিতে পড়ছে খুব সহজেই।
 
Potitaসোনারগাঁ হোটেলের পেছনে হাতির ঝিল ঘেষেঁ রাস্তাটুকু, কাওরানবাজার ইউনিলিভার স্তম্ভের চিপাচাপায়, বাংলামটর- কাওরান বাজারের মাঝের পার্ক এবং পরীবাগ ওভার ব্রিজ ছিল ভাসমান যৌনকর্মীদের অবাধ বিচরণ। বিশেষ করে রাত ১২টার পর থেকেই এসব এলাকায় যৌনকর্মীরা ভির করতে থাকে। খদ্দেররা আসেন আশেপাশের এলাকা থেকেই। এদের মধ্যে নির্মাণ শ্রমিক, রিকশা চালকরা নিয়মিত। আর যৌনকর্মীদের অধিকাংশই হিজড়া সম্প্রদয়ের।
 
যৌনকর্মীদের বয়স আর চেহারা বুঝে দরের হেরফের থাকলেও পঞ্চাশ টাকাতেই অধিকাংশ খদ্দের আটকে যায়। বিশেষ করে রিকশা চালকদের জন্য পঞ্চাশ টাকা প্রায় নির্ধারতই। অনেকে আবার সিএনজি বা প্রাইভেট কারে তুলে নেয় এসব যৌনকর্মীদের। তবে এ ক্ষেত্রে দর নির্ধারিত হয় সময় ধরে।
 
তবে এসব জায়গায় যৌনকর্মীদের কারণে বিব্রত হতে হয়েছে অনেককে। আবার ছিনতাইয়ের কবলে পড়েছেন কেউ কেউ।  খদ্দেরদের কেউ কেউ সব খুইয়েছেন কোনো কোনো যৌনকর্মীর হাতে।

বাংলামোটর মসজিদের পাশেই টিনচালা ঘরে বসবাস করেন ফজল হোসেন। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘রাতে বেরুনোর কোনো উপায় থাকে না। বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয় পথচারীকে। তবে আলোর কারণে ওদের আনাগোনা অনেকটাই কমে গেছে।’

কিন্তু অন্ধকার-ই যাদের রুটি-রুজির পাথেয়, তাদের অমল আলো কী আর সহ্য হয়!  বুধবার রাতে সোনারগাঁ হোটেলের পাশে কথা হয় যৌনকর্মী হ্যাপীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আগে প্রতি রাতে ১০ থেকে ১৫ জন খদ্দের মিলত। এখন সারা রাত বসে থেকে দুই কী তিনজনও মেলে না। খুব কষ্টে আছি। খদ্দের জুটুক বা না জুটুক সরদারকে টাকা দিতেই হবে। বাসা ভাড়া তো আছেই।’

আলোর কারণে অনেকেই এলাকা ছেড়ে চলে গেলে উল্লেখ করে রিতা নামের আরেক যৌনকর্মী বলেন, ‘এমন আলোর কারণে আমাগো কপাল পুড়ছে। কী করব বুঝতে পারছি না। চাইলেই তো অন্য জায়গায় গিয়ে অবস্থান নেয়া যায় না।`
 
এএসএস/এসকেডি/আরএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।