সুপেয় পানির সংকটে ‘ছোটমণি নিবাস’

সালাহ উদ্দিন জসিম
সালাহ উদ্দিন জসিম সালাহ উদ্দিন জসিম , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:২৩ পিএম, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

পরিত্যক্ত অবস্থায় নবজাতক বা কম বয়সী শিশুদের উদ্ধারের ঘটনা বাংলাদেশে নতুন নয়। পিতৃ-মাতৃহীন, পরিত্যক্ত এসব শিশুর ঠিকানা হয় কোথায়? প্রশ্নটা অনেকের মনে জাগলেও অধিকাংশ মানুষই জানে না এসব শিশুর জন্য রয়েছে সরকারের নানা উদ্যোগ। সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে রাজধানীর আজিমপুরে গড়ে তোলা হয়েছে ‘ছোটমণি নিবাস’। যেখানে ঠাঁই মিলেছে পিতৃ-মাতৃহীন পরিত্যক্ত অথবা দাবিদারহীন শিশুদের। তবে অসহায় এসব শিশুর আশ্রয়স্থলও ভুগছে নানা সমস্যায়। এরমধ্যে সুপেয় পানির সংকট এখন চরমে।

ছোটমণি নিবাসে দীর্ঘদিনের পুরোনো রিজার্ভার (পানির ট্যাঙ্কি) সংস্কার না করায় বালু-মাটি জমে একাকার। পানির সঙ্গে এখন মাটিও উঠে আসে। ফলে পানি শোধন করার যন্ত্র ব্যবহারেও সুফল মিলছে না। এ অবস্থার জন্য আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং বাজেট না থাকাকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ছোটমণি নিবাসে দীর্ঘদিনের পুরোনো রিজার্ভার সংস্কার না করায় বালু-মাটি জমে একাকার। পানির সঙ্গে এখন মাটিও উঠে আসে। ফলে পানি শোধন করার যন্ত্র ব্যবহারেও সুফল মিলছে না। এ অবস্থার জন্য আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং বাজেট না থাকাকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন: ছোটমণি নিবাসে পাঠানো হচ্ছে সেই শিশুকে

সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর আজিমপুরে (হোল্ডিং নম্বর- ৯-১১) সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে চলছে ছোটমণি নিবাসের কার্যক্রম। সেখানে এক মাস থেকে ৭ বছর বয়সী ২৬ জন শিশু আছে। এক ফ্লোরেই তাদের বসবাস ও খেলাধুলার স্থান।

রিজার্ভার সংস্কারের জন্য অনেকদিন ধরেই অধিদপ্তরের অনুমোদন চাওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি অধিদপ্তর অনুমোদন দিলেও গণপূর্ত দপ্তর থেকে এস্টিমেট (প্রাক্কলন) না পাওয়ায় আটকে আছে বাকি কার্যক্রম।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

সুপেয় পানির সংকটে অসহায় শিশুদের ‘ছোটমণি নিবাস’

পরিত্যক্ত অসহায় শিশুদের এই নিবাসে খাবারের পানির সমস্যা প্রকট। পুরোনো রিজার্ভারে (পানির ট্যাঙ্কি) মাটি-পানি একাকার। মোটরে টেনে ট্যাঙ্কিতে পানি উঠালে তার সঙ্গে উঠে আসে মাটিও। পয়ঃনিষ্কাশনে ব্যবহারযোগ্য হলেও পানের জন্য একেবারেই অনুপযোগী এই পানি। এমনকি এগুলো পরিষ্কার করতে পিউরিফায়ার ব্যবহার করেও কাঙ্ক্ষিত ফল মিলছে না। সকালে লাগালে বিকেলেই পিউরিফায়ারে মাটি জমে জ্যাম হয়ে যায়।

সরকারি যেকোনো প্রতিষ্ঠান চাইলে আমরা প্রাক্কলন বাজেট করে দেই। এরপর অনুমোদন পেলে কাজও করে দেই। কিন্তু আজিমপুর ছোটমণি নিবাস আমাদের আওতাধীন কি না সেটা জানা নেই। তাদের পক্ষ থেকে কোনো অনুরোধও পাইনি।

আরও পড়ুন: ছোটমনি নিবাসের ভিআইপি শিশু ফাইজা

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

বিষয়টি সমাধানে রিজার্ভার সংস্কার করা এখন অতীব প্রয়োজনীয়। কিন্তু এতদিনেও তা করা সম্ভব হয়নি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ পড়েছে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায়। দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করে রিজার্ভার সংস্কারের অনুমোদন মিললেও প্রয়োজনীয় বাজেট মিলছে না। যে কারণে এক রকম অসহায় কর্তৃপক্ষ।

সুপেয় পানির সংকটে অসহায় শিশুদের ‘ছোটমণি নিবাস’

প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে সম্পৃক্ত একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, রিজার্ভার (পানির ট্যাঙ্কি) সংস্কারের জন্য অনেকদিন ধরেই অধিদপ্তরের অনুমোদন চাওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি অধিদপ্তর অনুমোদন দিলেও গণপূর্ত দপ্তর থেকে এস্টিমেট (প্রাক্কলন) না পাওয়ায় আটকে আছে বাকি কার্যক্রম।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন: মায়ের বেচে দেয়া সেই নবজাতকের আশ্রয় ছোটমনি নিবাসে

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, চিঠি দিয়ে এবং বার বার সাক্ষাতে তাগাদা দিয়েও এস্টিমেট পাওয়া যাচ্ছে না। যে কারণে রিজার্ভার সংস্কারও করা যাচ্ছে না।

সুপেয় পানির সংকটে অসহায় শিশুদের ‘ছোটমণি নিবাস’

বিজ্ঞাপন

গত বছরের ২২ নভেম্বর আজিমপুর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর একটি আবেদন জমা দেয় ছোটমণি নিবাস কর্তৃপক্ষ। ওই আবেদনের একটি কপি জাগো নিউজের কাছে এসেছে। ছোটমণি নিবাসের উপ-তত্ত্বাবধায়ক স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘ছোটমণি নিবাস একটি স্পর্শকাতর প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটিতে পাঁচ থেকে সাতজন নবজাতকসহ বিভিন্ন বয়সী ৩০ থেকে ৩৫ জন শিশু সার্বক্ষণিক অবস্থান করে। ছোটমণি নিবাসে দুটি পানির ট্যাঙ্কি রয়েছে। একটি ছাদে, অন্যটি নিচে (রিজার্ভার)। নিচের ট্যাঙ্কি ভেঙে গেছে। উপরের ট্যাঙ্কির অবস্থাও ভালো নয়। এ অবস্থায় আজিমপুরের ছোটমণি নিবাস ভবনের নিচের পানির ট্যাঙ্কি মেরামতের জন্য বাজেট প্রাক্কলন প্রস্তুত করতে অনুরোধ করা হলো।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আবেদন করার পর এরই মধ্যে আড়াই মাস পার হয়ে গেছে। এ সময়ের মধ্যে দফায় দফায় কথা বলে ও যোগাযোগ করে আজিমপুর গণপূর্ত বিভাগের সাড়া পায়নি ছোটমণি নিবাস কর্তৃপক্ষ।

সুপেয় পানির সংকটে অসহায় শিশুদের ‘ছোটমণি নিবাস’

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন: নিবাসে কেমন আছে দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া শিশু ফাতেমা

এ বিষয়ে আজিমপুর ছোটমণি নিবাসের উপ-তত্ত্বাবধায়ক মোছা. জুবলী বেগম রানু জাগো নিউজকে বলেন, পানিতে সমস্যা আছে ঠিক। ট্যাঙ্কিটা অনেক পুরোনো। পানির সঙ্গে মাটি চলে আসে। মেশিনে রিফাইন করি। তবে সকালে পরিষ্কার রিফাইনার লাগালে বিকেলেই ময়লা জমে যায়। রিফাইনারে মাটি জমে যায়। এ বিষয়ে স্থায়ী সমাধানের চেষ্টা করছি। এস্টিমেটের (প্রাক্কলন) জন্য ঘুরছি। ওটা না পেলে বরাদ্দও পাচ্ছি না।

সুপেয় পানির সংকটে অসহায় শিশুদের ‘ছোটমণি নিবাস’

বিজ্ঞাপন

ছোটমণি নিবাসের আবেদনের বিষয়টি অস্বীকার করে আজিমপুর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইলিয়াস আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, সরকারি যেকোনো প্রতিষ্ঠান চাইলে আমরা প্রাক্কলন বাজেট করে দেই। এরপর অনুমোদন পেলে কাজও করে দেই। কিন্তু আজিমপুর ছোটমণি নিবাস আমাদের আওতাধীন কি না সেটা জানা নেই। তাদের পক্ষ থেকে কোনো অনুরোধও পাইনি, পেলে কাজ করে দেবো।

এ বিষয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রতিষ্ঠান) মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম চৌধুরী (যুগ্ম সচিব) জাগো নিউজকে বলেন, ছোটমণি নিবাস থেকে আমরা এ সংক্রান্ত চিঠি পেয়েছি। তবে এ বিষয়ে গণপূর্তের এস্টিমেট এখনো পাইনি। এস্টিমেট পেলে পরবর্তী কার্যক্রম নেওয়া হবে।

এসইউজে/কেএসআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।