ভাষা জানলে জাপানে কাজের অভাব নেই

সাঈদ শিপন
সাঈদ শিপন সাঈদ শিপন , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জাপান থেকে ফিরে
প্রকাশিত: ০৯:০১ এএম, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
ফাইল ছবি

৬ লাখ ৮৫২টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত জাপান। যৌগিক আগ্নেয়গিরিয় দ্বীপমালাটি সূর্যোদয়ের দেশ হিসেবে পরিচিত। উন্নত জীবনের আশায় অনেকের স্বপ্ন থাকে জাপানে পাড়ি জমানোর। বাংলাদেশিদের জন্য সে সুযোগও আছে। এ সুযোগ কাজে লাগতে হলে জানতে হবে জাপানি ভাষা। ভালোভাবে জাপানি ভাষা শিখতে পারলে জাপানে কাজার অভাব হবে না। বেতনও পাওয়া যাবে বড় অঙ্কের।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৪ খাতের জন্য বাংলাদেশ থেকে ৩ লাখ ৬১ হাজার চারশ দক্ষ কর্মী নেওয়ার ঘোষণা দেয় জাপান। ২০১৯ সালে এ ঘোষণা দেওয়ার পর বিশ্বজুড়ে হানা দেয় কোভিড-১৯। এতে বাংলাদেশ থেকে জাপানে কর্মী পাঠানোর পথ আটকে যায়। তবে এখন আবার বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়া শুরু করেছে জাপান।

জাপানে বসবাস করা বাংলাদেশিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জাপানের সব ক্ষেত্রেই নিজস্ব ভাষা ব্যবহার করা হয়। জাপানিরা অন্য ভাষা খুব একটা শিখে না। তাই জাপানে পাড়ি জমাতে হলে নির্দিষ্ট কাজে দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি অবশ্যই জাপানি ভাষা ভালোভাবে রপ্ত করতে হবে। ভালোভাবে ভাষা শিখলেই জাপানে কাজের অভাব হবে না।

জাপানে বসবাস করা বাংলাদেশিরা জানিয়েছেন, জাপানের শ্রম আইন অনুযায়ী একজন কর্মীর সর্বনিম্ন বেতন ঘণ্টায় জাপানি মুদ্রায় ৮০০ ইয়েন। কোনো প্রতিষ্ঠানই এর কম বেতন দেয় না। সে হিসেবে এক দিনে আট ঘণ্টা কাজ করলে আয় হবে ৬ হাজার ৪০০ ইয়েন। এতে এক মাসে আয় দাঁড়ায় ১ লাখ ৯২ হাজার ইয়েন। জাপানে আয় যেমন বেশি, তেমনি জীবনযাত্রার ব্যয়ও বেশি। এরপরও থাকা খাওয়ার খরচ বাদ দিয়ে একজন মাসে কমপক্ষে ১ লাখ টাকা জমা করতে পারেন।

এদিকে জাপানের শ্রমবাজার ধরতে জাপানি ভাষার প্রতি সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা বাংলাদেশ কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি)। বিএমইটির থেকে জানানো হচ্ছে, জেলা পর্যায়ে বিএমইটির যেসব কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) আছে সেখানে জাপানি ভাষা শিক্ষার ওপর সব থেকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

japan2.jpg

জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে ৩ লাখ ৬১ হাজার চারশ দক্ষ কর্মী নেওয়ার যে ঘোষণা দিয়েছে জাপান, এ কর্মীদের খরচ বহন করবে নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। সে হিসেবে বিনা খরচেই জাপানে যাওয়ার সুযোগ পাওয়া যাবে। এর মধ্যে নার্সিং কেয়ার খাতে ৬০ হাজার, রেস্টুরেন্ট খাতে ৫৩ হাজার, কনস্ট্রাকশন খাতে ৪০ হাজার, বিল্ডিং ক্লিনিং খাতে ৩৭ হাজার, কৃষি খাতে ৩৬ হাজার পাঁচশ এবং খাবার ও পানীয় শিল্প খাতে ৩৪ হাজার কর্মী নেওয়া হবে।

এছাড়া সেবা খাতে ২২ হাজার, ম্যাটেরিয়ালস প্রসেসিং খাতে ২১ হাজার পাঁচশ, ইন্ডাস্ট্রিয়াল মেশিনারিজ খাতে ৭ হাজার, ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি খাতে ৪ হাজার সাতশ, জাহাজ নির্মাণ শিল্প খাতে ১৩ হাজার, মৎস শিল্প খাতে ৯ হাজার, অটোমোবাইল মেইনটেন্যান্স শিল্প খাতে ২১ হাজার পাঁচশ এবং এয়ারপোর্ট গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং অ্যান্ড এয়ারক্রাফট মেইনটেন্যান্স (অ্যাভিয়েশন) খাতে ২ হাজার দুইশ জনকে ভিসা দেওয়া হবে।

জাপানের রাজধানী টোকিওর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, খাবার হোটেল, মোবাইলের দোকানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দিয়ে ব্যবসা করছেন বাংলাদেশিরা। এসব প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশি কর্মী রয়েছেন। আবার জাপানি মালিকানার প্রতিষ্ঠানেও বাংলাদেশিরা কাজ করছেন। জাপানের ভাষা জানার কারণে বেশ ভালোভাবে জীবনযাপন করছেন তারা।

টোকিওর ইলেকট্রিক পণ্যের সব থেকে বড় মার্কেট রয়েছে আখিয়াবাড়া এলাকায়। এখানকার একটি মোবাইল দোকানে কাজ করছেন বাংলাদেশ থেকে যাওয়া মো. রাজীব। তিনি বলেন, জাপানে বাংলাদেশিদের কাজের ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। শুধুমাত্র জাপানের ভাষা ভালোভাবে শিখলেই জাপানে কাজের অভাব হবে না। আর ভাষা শেখার পাশাপাশি নির্দিষ্ট কাজে দক্ষতা অর্জন করতে পারলে জাপানে প্রচুর আয় করা সম্ভব।

সিং কৈয়া এলাকায় মোবাইলের প্রতিষ্ঠান দিয়ে বসেছেন বাংলাদেশি মো. ইমদাদ। তিনি বলেন, জাপানে কাজ করতে সব থেকে বেশি আসে নেপাল থেকে। বাংলাদেশিদের জন্য জাপানে কাজ করার প্রচুর সুযোগ রয়েছে। কিন্তু জাপানে আসা বাংলাদেশির সংখ্যা খুব কম। পুরো জাপানে ২০ হাজার বাংলাদেশিও নেই।

জাপানে দীর্ঘদিন ধরে বসাবাস করছেন বাংলাদেশি নাগরিজ মীর মোহাম্মদ নাঈম। কর্মী আউটসোর্সিংয় প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি জাপানে রিক্রুটিং এজেন্সি খুলেছেন এ বাংলাদেশি। পেয়েছেন জাপানের পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি (পিআর) বা স্থায়ী অভিবাসন। জাপানে বাংলাদেশি কর্মীদের কাজের সুযোগ কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য জাপান ব্যাপক সম্ভবনাময় দেশ। শুধু জাপানি ভাষা জানলেই এখানে কাজের অভাব হবে না এবং মোটা অঙ্কের বেতন পাওয়া যাবে।

তিনি বলেন, বর্তমানে পুরো জাপানে বাংলাদেশি আছে ১৫-২০ হাজার। অথচ প্রতিবছর জাপানে বাহির থেকে কর্মী আসে আড়াই থেকে তিন লাখ। এর মধ্যে সব থেকে বেশি আসে নেপাল থেকে। সরকার কিছু নিয়মত-নীতি শিথিল করলে জাপানের এ শ্রমবাজার ধরা সম্ভাব এবং বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর দেড় থেকে দুই লাখ কর্মী জাপানে পাঠানো সম্ভব।

যোগাযোগ করা হলে বিএমইটির সহকারী পরিচালক রাহেনুর ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, জাপানে কর্মী পাঠানোর জন্য অনেকগুলো রিক্রুটিং এজেন্সি এনলিস্টেড হয়েছে এবং হচ্ছে। কোভিড-১৯ এর কারণে জাপানে কর্মী যাওয়ার প্রবণতা কম ছিল। সম্প্রতি কর্মী যাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে।

তিন বলেন, ভাষা যদি জানা থাকে জাপানে কাজের অভাব নেই এ কথা সত্য। এ জন্য জেলা পর্যায়ে আমাদের যে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) আছে, সেগুলোতে জাপানি ভাষা শিক্ষা কোর্স চালু রয়েছে এবং আমাদের তহবিল থেকে প্রশিক্ষকদের রিক্রুট করা হচ্ছে। ভাষা শিক্ষার ওপরে আমরাও জোর দিচ্ছি।

জাপানে বাংলাদেশ থেকে প্রচুর কর্মী পাঠানোর সুযোগ আছে এবং যারা জাপানে যাবেন তাদের আয়ও অন্যান্য দেশের থেকে বেশি হবে। কিন্তু সব মিলিয়ে জাপানে বাংলাদেশি আছে ১৫-১৬ হাজার। আমরা কেন জাপানের মতো এত ভালো একটি শ্রমবাজার ধরতে পারছি না?- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, জাপানে ১৫-১৬ হাজারের মতোই বাংলাদেশি আছে। আমরা আসলে জাপানের শ্রমবাজার ধরতে পারছি না বিষয়টি তেমন না, আমরা জাপানের বাজার ধরার চেষ্টা করছি। কিন্তু যে ধরনের কোয়ালিফাই স্টুডেন্ট দরকার তা আমরা পাচ্ছি না। অনেকে ট্রেনিং করতে করতে মনে করছেন, আমাদের দ্বারা এটা হবে না। এ ক্ষেত্রে আমাদের যারা ভর্তি হচ্ছেন তাদেরও কিছুটা দুর্বলতা আছে। আমরা অনেক বছর ধরে ইংরেজি শিখতে পারি না। সেখানে জাপান একটা নতুন ল্যাঙ্গুয়েজ, এখানে বাঙালি হিসেবে আমাদের কিছুটা জড়তা আছে।

এমএএস/এমআইএইচএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।